বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প বন্ধ করে দিতে চলছে মোদি সরকার

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : দেশের আর্থিক পরিস্থিতি এবং কাজের বাজার আগের থেকে অনেকটাই ভাল হয়েছে। তাই বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। অর্থাৎ বিনামূল্যে রেশন আর দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই, এমনটাই চিন্তা ভাবনা করছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার।

কেন্দ্রীয় খাদ্য সচিব সুধাংশু পাণ্ডের একটি মন্তব্য ঘিরেই জল্পনা দানা বেঁধেছে৷ তিনি জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি আবার একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে৷ খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি হচ্ছে৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশস্য খোলাবাজারে রয়েছে৷ বিক্রিবাটা ভালোই চলছে৷ মানুষ ফের নতুন করে তাঁদের কাজকর্ম শুরু করেছেন৷ সেই কারণে ৩০ নভেম্বরের পর বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে নেই৷

২০২০ সালে করোনা মহামারীর আকার নেওয়ার পর বহু মানুষ তাঁদের কাজ হারিয়েছিলেন। কাজ হারিয়ে বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েছিলেন। ওই সমস্ত মানুষের অন্নসংস্থানের জন্য এগিয়ে এসেছিল কেন্দ্র। চালু করা হয়েছিল বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প। লক ডাউনের সময় বিনামূল্যে পাওয়া চাল, গম, ছোলা বহু শ্রমিক পরিবার তথা দুস্থ মানুষের মুখে অন্ন জুগিয়েছে প্রায় বছর দেড়েক ধরে। কিন্তু সম্প্রতি গোটা দেশেই করোনা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কাজের পরিস্থিতিও এখন মোটের উপর স্বস্তিজনক। তাই মোদি সরকার মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার আর কোনও যুক্তি থাকতে পারে না। দেশের প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চাল, গম ও ছোলার মত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাস্যশস্য দেওয়া হয়েছিল৷ কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১-এর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল৷ যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আর তিন সপ্তাহ পর৷ এখন প্রশ্ন, ১ ডিসেম্বর থেকে কি কেন্দ্রের দেওয়া বিনামূল্যে চাল-গম মিলবে !

‘অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “গত বছর এপ্রিলে চালু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছর মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এই প্রকল্পে প্রথম বছর ডাল দেওয়া হলেও দ্বিতীয় বছর ডাল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বর্তমানে দু-কেজি চাল ও তিন কেজি গম দেওয়া হয়। কিন্তু সেই খাদ্যশস্য বহু পরিমাণে বকেয়া রয়েছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য সচিবের কাছে এই প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য লিখিতভাবে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। তা সত্ত্বেও প্রকল্প বন্ধ করা হলে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় হবে।”

কেন্দ্রীয় খাদ্য সচিবের মন্তব্যের পর কংগ্রেস নেতা পবন খেরা শনিবার জানিয়েছেন, “দেশ থেকে করোনা অতিমারি এখনও বিদায় নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের উচিত গরিব মানুষের জন্য খাদ্যশস্য বিতরণের এই প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া।” একই অনুরোধ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লিবাসীর জন্য আরও ছ’মাস বিনামূল্যে রেশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন তিনি।

বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প কেন্দ্র বন্ধ করে দিলেও একাধিক রাজ্য নিজেদের উদ্যোগেই এই প্রকল্পের খরচ বহন করবে বলে জানিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই জানিয়েছেন, তিনি বিনামূল্যে মানুষকে রেশন দেবেন। শুধু বিনামূল্যে দেওয়াই নয়, গ্রাহকদের বাড়ি গিয়ে সেই রেশন পৌঁছেও দেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশ সরকারও ইতিমধ্যেই আগামী বছরের হোলি পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

যদিও রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সামনেই একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে৷ ভোটের দিকে তাকিয়ে এই জনমুখী প্রকল্প এখনই বন্ধ করার ঝুঁকি নিতে চাইবে না মোদি সরকার৷ কারণ সম্প্রতি ১৩ টি রাজ্যের ৩টি লোকসভা ও ২৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। আগামী বছরের প্রথম দিকেই আরও পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন আছে। যার মধ্যে অন্যতম উত্তরপ্রদেশ। কথায় আছে উত্তরপ্রদেশ যে দলের সেই দলই কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। তাই ২০২৪- এর আগে বিজেপি কোনওভাবেই উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতা হাতছাড়া করতে রাজি নয়।