টিডিএন বাংলা ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের কানপুরে অনুষ্টিত হল, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ২৭তম অধিবেশন। এই অধিবেশনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, মাওলানা রাবি হাসনি নদভিকে ষষ্ঠবারের জন্য মুসলিম ব্যক্তিগত আইন বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে, বৈঠকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, সিএএ, পিটিয়ে হত্যা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হয়। এমন সময়ে যখন কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করেছে তখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রত্যাবর্তনের দাবি জোরদার হচ্ছে। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডও এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছে। বৈঠকে সিএএ প্রত্যাহারের আহ্বান সহ ১১টি মূল প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, সরকারকে পিটিয়ে হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে ও ত্রিপুরায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বন্ধের দাবি ছাড়াও মুসলিম সম্প্রদায়কে আন্তঃধর্ম বিবাহ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সাইফুল্লাহ রহমানি কানপুরের সভায় প্রস্তাব দেন, দেশে এমন এক আইন চালু করা উচিত যার আওতায় দেশের সকল ধর্মকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যে আইন শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ধর্ম ও ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচেষ্টা থেকে রক্ষা করবে। বোর্ড আরও বলেছে যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ভারতের মতো একটি বিশাল বহুধর্মীয় দেশের জন্য উপযুক্ত বা উপযোগী নয়। তিনি আরও বলেন এটি দেশের সংবিধানে বর্ণিত ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকারের বিরোধী।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডও কিছু ওয়াকফ কমিটিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকার এবং আদালতের নিন্দা করেছে। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড মুসলিম পণ্ডিত ও আইনজীবীদের ইসলাম অধ্যয়ন করতে এবং মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা দূর করতে বলেছে। দাবি করেছে, কাউকে ধর্মান্তরিত করা হয়নি। যদিও ধর্ম প্রচার সংবিধানে মৌলিক অধিকার বলে দাবি করা হয়েছে। বোর্ড সভায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হিন্দুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার পাশাপাশি ত্রিপুরার মতো রাজ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মুসলিমদের বিয়েতে অর্থ ও যৌতুকের অপচয় এড়াতে এবং শরিয়া আইন অনুযায়ী বিয়ে করার জন্য বোর্ড একটি প্রস্তাবও পাস করেছে। বোর্ড নারীদের ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা করেছে। সরকারের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে, মাওলানা খালিদ রশিদ ফিরঙ্গী মাহালি, মাওলানা জালালউদ্দিন উমরি ও মাওলানা ফজলুর রহমানসহ প্রবীণ আলেমরা বলেছেন, ‘মথুরা ও বারাণসীতে সাম্প্রদায়িক ঝামেলা সৃষ্টির’ জন্য হিন্দু মহাসভার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তারা দাবি করেন, মথুরার শাহি ঈদগাহ এবং বারাণসীর জ্ঞানভাপি মসজিদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে। কারণ, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা সম্প্রতি ঘোষণা করেছিল ৬ ডিসেম্বর মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি সংলগ্ন ঈদগাহের মধ্যে একটি স্থানে বাল গোপালের (শিশু কৃষ্ণ) একটি মূর্তি স্থাপন করা হবে। জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়ে গ্রেফতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাওলানা সাইফুল্লাহ রহমানি বলেন, ইসলামে এটি নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, কিন্তু সংবিধান মানুষকে ধর্ম ও তার শিক্ষার ভাল দিক প্রচার করার অনুমতি দেয়।” বোর্ড দাবি করেছে যে, সরকারকে পিটিয়ে হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে আন্তঃধর্ম বিবাহ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে।
সংবাদ সূত্র- আপনজন পত্রিকা