মুহাম্মদ নুরুদ্দিন : ২৬সে নভেম্বর ছিল ভারতের ‘সংবিধান দিবস’। ১৯৫০ সালের এই দিনে গৃহীত হয় ভারতের সংবিধান। তাই এই দিনটিকে ভারত সিংবিধান দিবস হিসেবে পালন করে।
ভারতীয় সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। কিন্তু সংবিধান দিবসে এই ঐক্যের ছিটেফোঁটা তো লক্ষ্য করা যায়নি বরং জাতি প্রত্যক্ষ করেছে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির অনৈক্য। এদিন লক্ষ্য করা যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেন্ট্রাল হলে ভাষণ দেওয়ার সময় সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে একের পর এক বিরোধী দলগুলোর প্রতি কটাক্ষ করছেন। তিনি কংগ্রেসকে বলেছেন পরিবারতন্ত্রের পার্টি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকে ও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। অপরদিকে বিরোধী দলগুলি প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সেন্ট্রাল হলের এই সভা বয়কট করেছেন। তাঁদের বক্তব্য যে সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে যে সরকার গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, আইনের শাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে গুরুত্ব দেয় না সেই সরকারের পক্ষে সংবিধান দিবস পালন করা মানায় না। এভাবেই চরম অনৈক্যের সুর প্রতিফলিত হয়েছে সংবিধান দিবসে।
অপরদিকে, ভারতীয় প্রচারমাধ্যমে ধরা পড়েছে এক ভিন্ন ছবি। সেখানে দেখানো হয়েছে কৃষক আন্দোলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ। প্রধানমন্ত্রী সেন্ট্রাল হলের ভাষণে ভারতীয় সংবিধানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলছেন এই সংবিধান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এই সংবিধান বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন তৈরি করে ভারতকে সুসংবদ্ধ করেছে। তিনি এও বলেন যে আজকের দিনে যদি সংবিধান তৈরি করার দায়িত্ব আমাদের উপর পড়তো তাহলে আমরা এক লাইন ও অগ্রসর হতে পারতাম না। কিন্তু এক কঠিন ক্রান্তিকালে সংবিধান সভার সদস্যগন অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও উদারতার পরিচয় দিয়ে ভারতের উপযোগী একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। তার পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে দেশব্যাপী দীর্ঘ এক বছর ধরে চলতে থাকা কৃষক বিদ্রোহের চিত্র। দেখানো হয়েছে একদিকে মুখে সংবিধানের প্রশংসা আর কার্যত সংবিধানের বিরোধিতা অপরদিকে সংবিধান রক্ষা করার জন্য ভারতের কৃষক সমাজের মরণপণ সংগ্রাম। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা প্রাকৃতিক বিপর্যয় অতিক্রম করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে মাটি কামড়ে যারা পড়েছিলেন তারাই দেশের সংবিধান রক্ষা করার জন্য বাস্তব কর্মসূচি পালন করছিলেন। ভারতের সংবিধান বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সংবিধান, উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভুলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার সংবিধান, নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান এর দেশে মিলনের ঐক্য গাওয়ার সংবিধান, বাগাড়ম্বর নয় বরং জীবন সংগ্রাম করে যারা সংবিধানের আদর্শ বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করেন জাতি তাদেরকেই মনে রাখবে। তারাই প্রকৃত পক্ষে দেশ গড়ার কারিগর।