HighlightNewsদেশ

দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতে এসে প্রথম স্নাতক হওয়া রোহিঙ্গা তরুণীর স্বপ্ন পুরণের গল্প

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: জীবন সবাইকে সমান সুযোগ দেয় না। প্রতিটি মানুষের জীবনের সংগ্রামও এক নয়। যদি নিজের নাম, বাড়ি,দেশ দু দু’বার কাউকে বদলাতে হয় তাহলে তার পক্ষে জীবন কতটা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এই কঠিন যাত্রার পরও, ২৬ বছর বয়সী তাসমিদা জোহর ভারতের প্রথম রোহিঙ্গা স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন। যিনি তাঁর দেশ মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে এবং তারপরে ভারতে এসেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে শিক্ষাই মুক্তির সবচেয়ে সহজ উপায়।

এই ২৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মেয়েটি তাঁর দেশ মায়ানমারের নিপীড়ন থেকে পালিয়ে এসে প্রথমে বাংলাদেশে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেছিল। এরপর স্বপ্ন পূরণের জন্য ভারতে চলে আসেন এবং এখন ভারতের প্রথম রোহিঙ্গা স্নাতক তিনি। তাসমিদা জোহর স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন তিনি উইলফ্রিড লরিয়ার ইউনিভার্সিটি টরন্টো থেকে একটি নিশ্চিতকরণ চিঠির জন্য অপেক্ষা করছেন।এরপর তিনি আরও পড়াশোনার জন্য কানাডায় যাবেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে আলাপচারিতার তাসমিদা জোহর বলেছেন যে, এই নামটি তাঁর আসল নাম নয়। তার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে কারণ রোহিঙ্গা নাম নিয়ে মায়ানমারে বসবাস ও পড়াশোনা করা যায়না। তিনি বলেন, “আমার নাম তাসমিন ফাতিমা। কিন্তু মায়ানমারে পড়াশোনা করার জন্য রোহিঙ্গা নাম হলে হবে না, একটি বৌদ্ধ নাম থাকতে হবে, তাই আমাকে আমার নাম পরিবর্তন করতে হয়েছিল।” তিনি আরও যোগ করেন “আমার আসল বয়স ২৪ বছর কিন্তু আমার ইউএনএইচসিআর কার্ডে ২৬ বছর করা হয়েছে।মায়ানমারে বাবা-মা সাধারণত আমার বয়স দুই বছর বাড়িয়ে দেন যাতে আমার তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়।

তাসমিদা বলেন যে, ” মায়ানমারের জনগণের জন্য রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। স্কুলে আমাদের জন্য আলাদা ক্লাসরুম ছিল। আমরা পরীক্ষার হলে সবচেয়ে পেছনের বেঞ্চে বসতাম। দশম শ্রেণীতে শীর্ষে থাকার পরও মেধা তালিকায় কখনও আমার নাম উঠত না। কোনো রোহিঙ্গা কলেজে যেতে চাইলে তাকে ইয়াঙ্গুনে (দেশের সাবেক রাজধানী) যেতে হবে। এসব অসুবিধার কারণে রোহিঙ্গা শিশুরা

লেখাপড়াও করতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “এইসব অসুবিধার মধ্য দিয়ে আমরা লেখাপড়া করি কিন্তু আমাদের জন্য কোনো চাকরি নেই। আমরা সেখানে সরকারি অফিসে বসতে পারি না, ভোট দিতে পারি না।” এছাড়াও তাসমিদা জানান, তাঁর বাবা-মা তাঁকে পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করেছিলেন কারণ তাঁরা জানতেন যে শিক্ষাই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম এবং একমাত্র কন্যা। তাঁর বড় ভাই ভারতে একমাত্র রোহিঙ্গা স্নাতক এবং কমিউনিটির জন্য স্বাস্থ্য যোগাযোগ এবং অনুবাদক হিসেবে নয়াদিল্লিতে ইউএনএইচসিআর-এর জন্য কাজ করেন। অন্য ভাইয়েরা দিল্লিতে তাদের বাবার সঙ্গে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন। তথ্যসূত্র – জনসত্তা,তর্জমায় রুবাইয়া জুঁই
সূত্র- পুবের কলম পত্রিকা

Related Articles

Back to top button
error: