টিডিএন বাংলা ডেস্ক: রাষ্ট্রদ্রোহ আইন আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার একটি ঐতিহাসিক নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪ এ ধারার অধীনে ১৫২ বছরের পুরনো রাষ্ট্রদ্রোহ আইন কার্যকরভাবে স্থগিত রাখা উচিত যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়গুলো বিবেচনা করছে। একটি অন্তর্বর্তী আদেশে আদালত কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকে পুর্নবিবেচনার অধীনে থাকাকালীন উল্লিখিত বিধানের অধীনে কোনো এফআইআর নিবন্ধন করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি এনভি রমানা, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি হিমা কোহলির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ ১২৪ এ ধারার অধীনে প্রণীত অভিযোগ সংক্রান্ত সমস্ত মুলতবি মামলা এবং কার্যধারা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেঞ্চ জানিয়েছে, অন্যান্য ধারার বিষয়ে রায় অভিযুক্তের প্রতি কোনো পক্ষপাতিত্ব না করেই চলতে পারে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এদিন আরো জানিয়েছে,”আমরা আশা করি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি কোন এফআইআর নথিভুক্ত করা, তদন্ত চালিয়ে যাওয়া বা আইপিসি ১২৪ এ ধারার অধীনে জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে, যতদিন এটি পুনর্বিবেচনার অধীনে রয়েছে। পরবর্তী পুনঃপরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত আইনের এই বিধানটি ব্যবহার না করাই উপযুক্ত হবে।”
আদালত আরো জানিয়েছে যে, যাঁদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আইপিসির ধারা ১২৪ এ এর অধীনে মামলা করা হয়েছে এবং কারাগারে রয়েছেন তাঁরা জামিনের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে যেতে পারেন। এদিন আরও বলা হয়েছে, যদি কোনো নতুন মামলা নথিভুক্ত করা হয় তবে সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা তা চ্যালেঞ্জ করে উপযুক্ত আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন এবং আদালতের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে সংশ্লিষ্ট আদালত শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের বিবেচনা করে মামলায় রায় দেয়। পরবর্তী নির্দেশ না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনাই বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত গতকালই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রমানা বলেন, “আমাদের চিন্তা যাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ইতিমধ্যেই রয়েছে তাঁদের নিয়ে। যতদিন না আইনটি নতুন করে পুনর্বিবেচনা হচ্ছে ততদিন এই অভিযুক্তদের কি হবে? এই মামলাগুলি নিয়ে কি ভাবছে কেন্দ্র সরকার? কাল সকালের মধ্যে সরকারের জবাব চাই।” তিনি আরো বলেন,”যাঁরা ইতিমধ্যে আটক হয়েছেন বা যাঁদের বিরুদ্ধে এই মামলা রয়েছে তাঁদের ভবিষ্যৎ কি? এই আইন কি আপাতত স্থগিত রাখা হবে?” এদিনের নির্দেশ দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন,”আদালত একদিকে রাষ্ট্রের কর্তব্য অন্যদিকে, নাগরিকদের নাগরিক স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন। বিবেচনার ভারসাম্যের প্রয়োজন রয়েছে। আবেদনকারীর মামলা হলো যে ১৮৭০ সালের আইনের এই বিধানটি অপব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেল হনুমান চালিশা পাঠের জন্য নথিভুক্ত মামলাগুলির মতো স্পষ্ট অপব্যবহারের উদাহরণও দিয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, ঔপনিবেশিক সময় রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রেফতার করা হত। এখনো এই ধরনের আইন বলবৎ করা উচিত কিনা বা এই ধরণের কঠোর আইনের আজকের যুগে প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা নিয়ে এর আগেও কেন্দ্র সরকারকে প্রশ্ন করেছে শীর্ষ আদালত। এই আইনের দ্বারা সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নাগরিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিষয় নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি।