টিডিএন বাংলা ডেস্ক : পারমাণবিক চুক্তি পুনরায় কার্যকর করতে ভিয়েনার আলোচনায় ফিরতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নির্বাচিত হওয়ার কয়েক দিন পর গত জুন থেকেই স্থগিত হয়ে আছে ভিয়েনার আলোচনা। মার্কিন মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘আমরা খুবই স্পষ্ট করেছি যে আমরা ভিয়েনায় ফিরতে প্রস্তুত এবং সক্ষম তখনই যখন আলোচনার জন্য আমাদের কোনো সহযোগী থাকবে।’
এই আলোচনা ফের শুরু হওয়া ইরানের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, তেহরান সম্মতি দিলেই আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় ওয়াশিংটন।
এ দিকে ইরানের পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে কিছু ইউরোপীয় দেশ ও সৌদি আরব যে অভিযোগ তুলেছে তাকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান। জাতিসঙ্ঘে ইরানের স্থায়ী দফতরের কাউন্সিলর হায়দার আলী বালুজি বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ফার্স্ট কমিটিতে এ কথা বলেন।
জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশসন (জেসিপিওএ) নামে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত বহুপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারে। ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, তেহরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পারমাণবিক প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করতে দেবে বলে একমত হয়েছিল।
এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ওবামা আমলে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের পর এ ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে যান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানকে নতুন একটি চুক্তিতে আসার জন্য আলোচনা করতে চাপ দেন। একইসঙ্গে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে ট্রাম্প ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন।
নির্বাচনি প্রচারণায় ইরানের পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন। বাইডেন সমঝোতায় ফেরার কথা বললেও অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইরানের আঞ্চলিক কার্যক্রম ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন।
ব্রিটিশ, ফরাসী এবং জার্মান সহযোগীদের সাথে এক ভিডিও বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এ পরিকল্পনার কথা জানান। ব্লিংকেন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন চুক্তিতে পুনরায় ফিরবে যদি ইরান তা মেনে চলে। চার দেশের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান কঠোরভাবে চুক্তি মেনে চললে, যুক্তরাষ্ট্র একই কাজ করবে এবং এ বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ভিয়েনায় পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবনের সংলাপে ফেরার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মৌখিক বার্তা কোনো মানদণ্ড নয়। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ও তিন ইউরোপীয় দেশের যদি পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসার সদিচ্ছা থাকে, তাহলে তাদের এ সমঝোতায় নিজেদের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।