HighlightNewsরাজ্য

মাদ্রাসায় খালি প্রায় ১০ হাজার পদ, ২০১৮-এর পর থেকে বন্ধ নিয়োগ, জোড়াল হচ্ছে দ্রুত নিয়োগের দাবি

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: সুজাপুর নৈমোজা হাই মাদ্রাসা। সেখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫৫০০। শিক্ষকের সংখ্যা ৬৯। যদিও মোট শিক্ষকের পদ ৮৬। এই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আদিল হোসেন মঙ্গলবার জানান, “ছাত্র ছাত্রী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা কম। বার বার আবেদন করেছি শিক্ষকের পদ বাড়াবার জন্য। কিন্তু বাড়ানো হয়নি।” তিনি জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৫৫০০। শিক্ষক হওয়ার কথা ১২৫ জন। কিন্তু শেষ চার বছর ধরে নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।” ফলে রোজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “২০১৮ সালে নতুন টিচার আসে। তারপর থেকে বদলি হয়ে অনেকে এসেছে। কিন্তু খালি পদগুলি পূরণ হয়নি।”

এই ছবি শুধু এই মাদ্রাসার নয়। রাজ্যের মাদ্রাসাগুলির বেশিরভাগের একই ছবি। এই প্রসঙ্গে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী মঞ্চের রাজ্য সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, “কমিশন জানায় যে মাদ্রাসায় কোনো খালি পদ নেই। কিন্তু গোটা রাজ্যের সবকটি মাদ্রাসা ঘুরতে না পারলেও প্রায় দুশোটি মাদ্রাসায় আমরা গিয়েছি। এই সব মাদ্রাসাগুলি মিলিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক শিক্ষক পদ খালি রয়েছে। এই ২০০ টি মাদ্রাসা মিলিয়ে শুধুমাত্র অঙ্কে ৮০ টি পদ খালি রয়েছে। আর পরীক্ষা পাশ করেও চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে মজুরির কাজ করছে অনেক মাদ্রাসার অনেক চাকরি প্রার্থী। অনেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে ভিন রাজ্যে যেতে বাধ্য হয়েছে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ৫ বছর আগে মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন মাদ্রাসাগুলিতে প্রায় ১০,০০০ শিক্ষক পদ খালি পড়ে গত চার বছর রয়েছে। শেষবার মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ২০১৩-এ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। সেই সময় শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৩১৮৩। তবে ২০১৩ তে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ২০১৬-তে। আর নিয়োগ হয় ২০১৮-তে। ততদিনে শূন্যপদের সংখ্যা ৭০০০ পেরিয়ে গিয়েছিল বলে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সেই বছর নিয়োগ হয় কত? ১৭০০-র মতো। কিন্তু এই নিয়োগের আগে শূন্যপদের সংখ্যা ৩১৮৩ থেকে ২০০০ এ নেমে আসে।

কী করে হল- কমিশন কিংবা রাজ্য সরকার এর সদুত্তর দেয়নি। তবে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে অনেক প্রশ্নও ওঠে। প্রসঙ্গত মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গেজেট রুলস ২০১০ উল্লেখ করা রয়েছে যে, লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের আগের দিন পর্যন্ত শূন্যপদ আপডেট হবে। তারপর নিয়োগ হবে। সেই গেজেট রুলস ২৩-এ আরও উল্লেখ আছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইট, বোর্ড এবং ডিআই অফিসে নম্বরসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন সেই নিয়ম অনুসারে কাজ করেনি বলে অভিযোগ মাদ্রাসার চাকরি প্রার্থীদের। বিজ্ঞপ্তি হল, পরীক্ষা হল, কিন্তু মাদ্রাসা গুলোতে ২০১৩-র শূন্যপদ পূর্ণ হল না। তদানিন্তন মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে চাকরি প্রার্থীরা বার বার নিয়োগ সংক্রান্ত এই প্রশ্ন করলে তিনি তার কোনো উত্তর দেননি বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

এসএফআই নেতা তারিকুল আনোয়ারের কথায়, “রাজ্য সরকার পরিকল্পিত ভাবে মাদ্রাসাগুলিকে দুর্বল করে তুলে দিতে চাইছে।” ঈদের দিন পরিবারের সঙ্গে না থেকে কলকাতার রাস্তায় অবস্থান চালিয়ে গিয়েছেন চাকরি প্রার্থীরা। তাদের অবস্থান মঞ্চের কিছুটা দূরে রেড রোডের নমাজে মুখ্যমন্ত্রী অংশ নিলেও তাদের দাবি তিনি শোনেননি। চাকরির দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে হবু শিক্ষকদের। কখনও গ্রেপ্তার তো কখনও লাঠি পেটা। কোনও কিছুতেই তারা দমে যায়নি। আর তাই আগামী ২৬ মে আবারও বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন নিয়োগের দাবিকে সামনে রেখে। মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে চাকরি প্রার্থীদের বারবার মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বারবার বঞ্চিত হয়ে চাকরি প্রার্থীরা ২০১৯-এ হাইকোর্টের কাছে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার আবেদন জানান। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করার নির্দেশ দিলেও কমিশনের চেয়ারম্যান কমিশনের পাশ প্রার্থীদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন নিয়োগ দেবেন না। তাদের যুক্তি ছিল তাদের কোনো শূন্যপদ নেই। তবে শুধু মাদ্রাসা, এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা নয়। গোটা রাজ্যে প্রায় ১৬ লক্ষ ছেলে মেয়ে আজ বিএড পাশ করে বসে আছে শিক্ষক হওয়ার আশা নিয়ে। সূত্র- গণশক্তি পত্রিকা

Related Articles

Back to top button
error: