রাজ্য

জমি নেই, বাধ্য হয়ে পোকামাকড় সঙ্গে নিয়েই জঙ্গল ঘেরা অন্ধকার মাঠে থাকছে অক্ষম বাবা ও মেয়ে

রেবাউল মন্ডল, টিডিএন বাংলা, করিমপুর: জমি নেই। নিজস্ব ঘরও নেই। ক্ষমতা নেই রোজগারেরও। পেট চালাতে অন্যের দেওয়া খাবারই ভরসা। অসুস্থ শরীরে এক জায়গায় পড়ে থাকেন বাবা। আর দিনরাত সেই বাবার সেবা করছে নিরুপায় মেয়ে। করিমপুরের থানারপাড়া থানার নারায়ণপুর-২ পঞ্চায়েতের টোপলা বেলতলা পাড়ার সরকারি গভীর নলকূপের একটি পরিত্যক্ত জীর্ণ ঘরে থাকেন ওই বাবা ও মেয়ে।

এই প্রতিনিধি সেখানে গিয়ে দেখেন, সরকারি ওই ডিপটিউবওয়েলের ঘরটির আশপাশ জঙ্গল আগাছায় ঢাকা। ভিনভিন করছে মশা মাছি। চারিদিকে কলা আর পটলের জমি। সন্ধ্যা নামলেই যেখানে রয়েছে সাপখোপের ভয়। এমন এক পরিবেশে স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে বসে গায়ে বসা মশা মাছি তাড়াচ্ছেন সাদা চুল দাঁড়ির আনারুল সেখ। উপরে চালের ফুটো দিয়ে জল পড়া আটকাতে মাথার উপর পাতা রয়েছে ত্রিপল। পাশের আরেকটি ভাঙা ঘরে বসে তার বিবাহযোগ্য মেয়ে ভাত বাড়ছিলেন বাবার।

আপনি এভাবে এখানে পড়ে কেন? জিজ্ঞেস করতেই আনারুল সেখ জানালেন, এক সময় আমার জমি জায়গা সবই ছিল। বড় মেয়ের চিকিৎসার খরচ টানতেই সব বিক্রি হয়ে গেছে। কোমর ও হাঁটুতে অসুখ নিয়ে দেড় বছর ধরে এখানে এভাবেই পড়ে আছি। ওই মেয়েটি ছাড়া আমার দেখভালের কেউ নেই। আমি তো উঠতে পারিনি। মেয়েটাই আমাকে স্নান করিয়ে দেয় খাইয়ে দেয়।

কিন্তু কি খান আপনি? তিনি জানালেন, পাশের বাড়ি থেকে কাল দুটি রুটি দিয়েছিল তাই এখন খেলাম। কেউ দুটো চাল দিলে মেয়েটা ভাত রান্না করে। আর কেউ এসে দুএকশ টাকা দিলে সেটা দিয়েই কেনা হয় গ্যাস আনাজপাতি। থানার পুলিশও খাবার দেয়। এভাবেই কষ্ট করে চলে যায়। কেউ যদি একটু চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা করত ভাল হত।

আগের রেশন কার্ডটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে বানানো হয়নি কার্ডও। ফলে রেশনের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত বলে জানাচ্ছেন তিনি।

এখন কিকি সমস্যা? জিজ্ঞেস করতেই কান্না করতে লাগল মেয়ে বুলুয়ারা খাতুন। খানিক পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, চেয়েচিন্তে সাহায্য যা পায় তাতেই খাওয়াদাওয়াটা হয়ে যায়। আমি চাই কেউ বাবার একটু চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক। চিকিৎসা পেলেই বাবা সুস্থ হয়ে উঠবেন।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আশার আলো’র সদস্য তারিফুল মিয়া নিয়মিত খোঁজ খবর নেন পরিবারটির। তিনি বলেছিলেন, ‘ওদের যন্ত্রনার কথা মনে পড়লেই চোখে জল আসে। আমরা সাধ্যমত ওদের পাশে থাকি। কিন্তু এভাবে তো আর জীবন চলে না। আমরা চাই, সরকারি ভাবে ওদের পাট্টা দিয়ে স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। সেই সাথে বাবার চিকিৎসা ও মেয়েটার বিয়ের বিষয়েও ভাবতে হবে।’ খবর শুনেই ওদের দুজনের সমস্ত পোশাক পৌঁছে দেয় নতিডাঙ্গার রোজ বস্ত্রালয়ের মালিক রবিউল ইসলাম।

স্থানীয় থানারপাড়া থানার ওসি অভ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, ওনাদের দুরাবস্থার কথা শুনে মাঝে মাঝেই আমরা খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিই। সমস্যায় পড়লেই থানায় খবর দিতেও বলেছি।

নারায়ণপুর-২ পঞ্চায়েত প্রধান রিনা খাতুন বিশ্বাস বলেন, ‘জমিজায়গা গুলি সব বিক্রি করে ফেলেছেন উনি। বারবার বলেও ভোটার কার্ডটিও করেনি তিনি। এখন সামাজিক ভাবেই তার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে বলে দেখব যদি কিছু করা যায়।’

কিন্তু মাঠের মধ্যে যেখানে আছে পোকামাকড়ের ভয়। সন্ধ্যা হলেই যেখানে নেমে আসে অন্ধকার। এভাবে প্রতিদিন প্রকৃতির সাথে লড়াই করে ভগ্ন পরিত্যক্ত জলপড়া ঘরে থেকে দেড় বছর থেকে অসুস্থ বাবার সেবা করে আসছে মেয়ে বুলুয়ারা। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কোন পথে? এভাবেই কী কাটাতে হবে বাকি জীবন? জানে ওরা কিছুই।

মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন-
SAQLAIN ANOWAR
A/c No: 36010856292
IFSC: SBIN0003735
State Bank of India
KARIMPUR ADB

Pytm, PhonePe 8768421438

Related Articles

Back to top button
error: