টিডিএন বাংলা ডেস্ক : ভারতে খোলাখুলি মুসলিমদের গনহত্যার ডাক দিয়েছে গেরুয়াধারী কিছু সন্ন্যাসী। হরিদ্বারের যে সমাবেশে মুসলিমদের হত্যার ডাক দেওয়া হয়েছিল তার নাম ছিল ধর্ম সংসদ। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেভাবে হিন্দুদের উসকে তোলা হয়েছে, তা বিশ্বের বহু দেশকে অবাক করেছে। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে মার্কিন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থার জেনোসাইড ওয়াচের বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ইসলামফোবিক নীতি’র তীব্র সমালোচনা করেছে। তার এই নীতির কারণেই মুসলিমদের গণহত্যার জন্য প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হচ্ছে।
মুসলিম ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদি নিন্দাসূচক কোনও মন্তব্য করেননি। ফলে প্রশ্রয় পাচ্ছে তারা। সেকারণেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই ধরনের ব্যাপক উসকানি ছড়ানো হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত এক সভায় বিশেষজ্ঞরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী সন্ন্যাসীদের এই বিষ উগরানোকে মোদি সরকারের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছেন।
জেনোসাইড ওয়াচের প্রেসিডেন্ট ডক্টর গ্রেগরি স্ট্যান্টন বলেছেন, উত্তর ভারতের হরিদ্বার শহরে গত মাসে অনুষ্ঠিত সমাবেশে গেরুয়াধারী হিন্দু সন্ন্যাসীরা মুসলিমদের গণহত্যার দেন। অবশ্যই এই গণহত্যামূলক উসকানি মন্তব্যের নিন্দা করার বাধ্যবাধকতা মোদির রয়েছে। কিন্তু তারপরও নিন্দা করা তো দূর ! মোদি এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে যা করা হয়েছিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেটাই হিন্দুরা করুক। হিন্দু ধর্মান্ধরা এ কথাই প্রচার করেছেন, এমনটাই বলেছেন মার্কিন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাশ্মীর বিশেষজ্ঞ গোবিন্দ আচার্য। তিনি বলেন, ব্যাপক হারে মুসলিমদের হত্যা করে ভারতে হিন্দু আধিপত্যবাদের সূচনার চেষ্টা হচ্ছে।
মোদির দলের নেতা এবং উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্ষ বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ধর্ম সংসদের প্রকাশ্য উসকানি সমর্থন করেছিলেন। গোবিন্দ আচার্য বলেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেছে। হরিদ্বার বিদ্বেষ সমাবেশে হিন্দু মহাসভার নেতারা বলেছিলেন ২০ কোটি মুসলিমকে হত্যা করতে হিন্দুদের হাতে তুলে নিতে হবে অস্ত্র। কেবল হরিদ্বার নয় দিল্লিতেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে একইভাবে বিদ্বেষ উগরে দেওয়া হয়েছিল। হাজার হাজার হিন্দু বিদ্বেষ সমাবেশে অংশ নিয়ে মুসলিমদের হত্যা করার শপথ নিয়েছিল। তারা সকলেই হিন্দুদের করার পণ করেছিল। মোদি জমানায় এমনই পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, স্কুল পড়ুয়াদের পর্যন্ত শপথ নেওয়ানো হচ্ছে। তারা শপথ নিয়েছে ‘ হয় মারব নয় তো মরব’। মুসলিমদের হত্যা করে হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার শপথ নিতে উদ্বুদ্ধ করানো হয় স্কুলপড়ুয়াদের।
গণহত্যা প্রসঙ্গে জেনোসাইড এক্সপার্ট প্রফেসর স্ট্যান্টন বলেন, ‘গণহত্যা অকস্মাৎ কোনও ঘটনা নয়। এটি একটি প্রক্রিয়া।’ এই গণহত্যা প্রসঙ্গে গুজরাট দাঙ্গার কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহিংসা শুরু হয়েছিল ২০০২ – এ। মোদি তখনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তখন যা শুরু হয়েছিল, আজও চলছে।’ স্ট্যান্টন স্পষ্ট বলেন, ‘নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে এই ধরনের বিদ্বেষ মোদি জমানায় প্রশ্রয় পাচ্ছে। তাকে লালন করা হচ্ছে। জেনোসাইড ওয়াচ সেই ২০০২ সাল থেকে ভারতে আসন্ন গণহত্যা’র সতর্কতা জারি করে আসছে।’ তখন গুজরাতে মুসলিমদের হত্যা করা হয়েছিল। এ ছাড়া মোদি জমানায় যেভাবে কাশ্মীরে মুসলিমদের অসহায় করা হয়েছে। অনলাইনে মুসলিম মহিলাদের যেভাবে নিলামে তোলা হয়েছে, সবটাই মোদি জমানার বিশেষ প্রশ্রয়ে হচ্ছে বলে মার্কিন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে।