HighlightNewsসম্পাদকীয়

উপরাষ্ট্রপতি হলেন ধনকর, বিরোধী ঐক্যে ফাটলের বার্তা দিলেন মমতা

 

মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন: প্রত্যাশা মতই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। তিনি বিরোধী পক্ষের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে ৩৪৬ ভোটে পরাজিত করেন। ৭৮০ ভোটের মধ্যে ভোট প্রদান হয় ৭২৫টি। ধনকরের পক্ষে পড়ে ৫২৮ টি ভোট এবং মার্গারেট আলভা ১৮২ টি ভোট প্রাপ্ত হন ১৫ টি ভোট বাজেয়াপ্ত করা হয়।

লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার সাথে সাথেই বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জগদীপ ধনকরকে সম্বর্ধনা জানান এবং তিনি সমস্ত বিরোধী এমপিদেরকে তাকে ভোট দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

সেই সাথে সাথে তিনি তার টুইট বার্তায় লেখেন “এই নির্বাচন ছিল বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার একটি বড় সুযোগ। অতীতের বিবাদ ভুলে গিয়ে পাশাপাশি আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার একটা অবকাশ ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় কোন কোন বিরোধী রাজনৈতিক দল এমন অবস্থান গ্রহণ করে যাতে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরে এবং প্রকারান্তরে লাভবান হয় ভারতীয় জনতা পার্টি। আমার মনে হয় এভাবেই তারা তাদের নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে।”

তার মতেই এই নির্বাচন ছিল সংবিধান রক্ষার যুদ্ধ, গণতন্ত্রকে মজবুত করা এবং পার্লামেন্টের মর্যাদা কে রক্ষা করার সংগ্রাম।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ছায়া ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। শাসক দল বিজেপি যেভাবে বিরোধী ঐক্যকে তছনছ করে একের পর এক নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে চলেছে তাতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ গড়ে না উঠলে বিজেপিকে পরাস্ত করা খুবই কঠিন। এই বিষয়টি কেউ জানুক আর না জানুক অন্তত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের না জানার কথা নয়। তার বক্তব্য ও মাঠে ময়দানে বিজেপির বিরুদ্ধে আস্ফালন দেখে মনে হয় যে তিনি ভারতবর্ষের শাসক দলের সবচেয়ে শক্তিশালী ও আপসহীন প্রতিপক্ষ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে বিরোধী মহলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ কারণে দিল্লিতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু তিনি বিরোধীদের ডাকা নৈশ ভোজের উপস্থিত হননি এমনকি কোন প্রতিনিধিও পাঠানোর প্রয়োজন মনে করেননি। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি বিরোধীদের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে ভোটদানের ক্ষেত্রে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন তার দলের সদস্যদের। তার এই অবস্থান বিরোধী ঐক্যের ব্যাপারে তার অসহযোগিতার ইঙ্গিত স্পষ্ট করে।
তৃণমূল মহাসচিব প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর এবং বারবার তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে সিবিআই ও ইডি হানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকটা চাপের মুখে রেখেছে এটা সত্য। রাজ্যের বিভিন্ন দাবি নিয়ে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর দরবারে উপস্থিত হয়েছেন তখন নিন্দুকেরা বলছে তিনি সেটিং করতে গিয়েছেন। সেই সাথে সাথে উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীকে ভোট না দেওয়া, বিরোধীদের ডাকা নৈশ ভোজে অংশগ্রহণ না করা ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে তার বিরোধী বিজেপি বিরোধীতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সত্যিই কি তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে আন্তরিক না পশ্চিমবঙ্গে তিনি বিজেপির বি-টিম হিসাবে কাজ করছেন সে প্রশ্ন অবান্তর নয়।
একদিকে সিবিআই ইডির চাপ অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এই দুইটির মধ্যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তবে তিনি যদি ভয় পেয়ে যান, তিনি যদি তলায় তলায় সেটিং করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন তাহলে টা আত্ম হননের পথ হবে। এই মুহূর্তে দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যে সাহসিকতা ও একতা দরকার তা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আশা করে সারাদেশ। তিনি যদি উল্টো পথে চলেন তাহলে তার পরিণাম তিনি এড়াতে পারবেন না।

Related Articles

Back to top button
error: