HighlightNewsসম্পাদকীয়

দেশ জুড়ে বাড়ছে হিংসা-বিদ্বেষ, কোথায় চলেছি আমরা

মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন

তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ফল ফলতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। কর্নাটকে লাগাতার চলছে বিদ্বেষ ভাষণ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একেরপর এক পদক্ষেপ। সেখানে পরিকল্পিতভাবে হিজাব ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। এরপর হালাল দোকান বন্ধ, মন্দির চত্বরে মুসলিম ব্যবসায়ীদের প্রবেশে বাধা, পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। তার পাশাপাশি চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক উত্তেজনাকর পোস্ট। রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী পালনের শোভাযাত্রাকে ঘিরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে কর্ণাটক, দিল্লি, হরিদ্দার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়। মসজিদ মাদ্রাসা ও মাজারে হামলা করা হচ্ছে। পাথর ছুঁড়েছে এই অজুহাতে মধ্যপ্রদেশে মুসলিমদের বাড়ি ঘর সরকার বুলডোজার দিয়ে অবৈধভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। এককথায় বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর সাঁড়াশি আক্রমণ নেমে এসেছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ দাবি করে ইতিমধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভি এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, “নিজ নিজ ধর্মীয় আচরণ পালন করার স্বাধীনতা সকলের আছে। যে কোন ধর্মের প্রার্থনা শান্তির, আতঙ্কের নয়।

দেশ কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন শান্তিপ্রিয় মানুষ। রাজধানী দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরা এলাকায় যে সংঘর্ষ হয়েছে তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন সাধারণমানুষ। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের অভিযোগ আমরা এখানে যুগ যুগ ধরে বসবাস করছি কোনো অশান্তি হয়নি। হনুমান জয়ন্তী শোভাযাত্রাকে ঘিরে বাইরের কিছু মানুষ এসে এখানে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে গেল। এ অভিযোগ ওঠে বারবার।এ চিত্র বারবার নজরে পড়ে বিভিন্ন জায়গায়। হিংসার উৎস সন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় বাইরে থেকে আসা লোকজন আগুন লাগানোর কাজ করে আর সেই আগুনে পুড়ে মরতে হয় সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষকে।

হ্যাঁ, আমাদের দেশে দেশপ্রেম ও ধর্মরক্ষার নামে কিছু সংগঠন একশ্রেনির হুলিগান তৈরি করছে। তাদের কাজ দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। কখনো গো রক্ষার নামে মব লিঞ্চিং করে তারা নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে, কখনো ধর্মীয় মিছিলে উত্তেজক শ্লোগান দিয়ে ভিন্ন ধর্মের মসজিদ মাজারে হামলা করে, এরা সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত। শান্তিপ্রিয় জনগন যদি এই উগ্র বাদীদের ব্যাপারে সতর্ক না হয় তাহলে দেশ রসাতলে যেতে বাধ্য।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জনগণকে হিন্দু-মুসলিম খাইয়ে কিভাবে দেশ বিক্রি করছে তা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, জনগণের উপর পায়ে-পায়ে ট্যাক্সের বোঝা চাপানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের মর্যাদা ক্রমেই নেমে যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। করণা মহামারীর ধাক্কা সামলে দেশকে আর্থিকভাবে স্থিতিশীল করার পরিবর্তে সরকার সাম্প্রদায়িকতার মায়াজালে জনগণকে ভুলিয়ে রাখতে চাচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী শ্রীলংকা এই পলিসি নিয়ে দেউলিয়া হয়েছে। ভারত ও একই পথে অগ্রসর হচ্ছে। শান্তিপ্রিয় জনগণ সোচ্চার না হলে এই আগ্রাসী হায়েনার থাবা থেকে দেশকে বাঁচানোর সম্ভব নয়।

Related Articles

Back to top button
error: