কৃষি বিল কি? লোকসভার পরে রাজ্যসভাতেও কি পাস হয়ে যাবে এই বিল? জেনে নিন সব তথ্য
নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা: গতকাল লোকসভায় কৃষি বিল পাশ হবার পর থেকেই দেশজুড়ে এই বিলের প্রতিবাদ করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নেতারা। বেশ কয়েকটি কৃষিপ্রধান রাজ্যে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কৃষক এবং ক্ষেতমজুররা। এদিকে লোকসভায় পাশ হয়ে যাওয়ার পর এই বিল যাবে রাজ্যসভাতে। এই পরিস্থিতিতে লোকসভায় এনডিএর বহুমত থাকায় খুব সহজেই এই বিল পাস হয়ে গেলেও রাজ্যসভায় পরিস্থিতি কি হবে সেটাই এখন বিবেচ্য বিষয়।
লোকসভায় এনডিএর কাছে যথেষ্ট পরিমাণে বহুমত থাকায় বিতর্কিত ওই দুটি কৃষি বিল খুব সহজেই পাশ হয়ে গেছে, কিন্তু রাজ্যসভায় সরকারের কাছে বহুমত নেই। প্রত্যেকবার রাজ্যসভায় বিল পাশ করানোর জন্য এনডিএর সরকারকে সেই সমস্ত দলের সহযোগিতা নিতে হয় যে সমস্ত দল এনডিএ বা ইউপিএ কোন দলেরই শরীক নয়।
দেখে নেওয়া যাক, কার কাছে কত সমর্থন রয়েছে। প্রথমে এনডিএ সরকার। লোকসভাতে যেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা যদি রাজ্যসভাতেও বজায় থাকে, তাহলে আপাতত এনডিএর কাছে ১২২ সাংসদের সমর্থন রয়েছে। যা বহুমতের থেকে বেশি। এই ১২২ সংসদের মধ্যে এনডিএর সহযোগী দল এবং শিবসেনার সাংসদদের সমর্থন রয়েছে। বিজেপির ৮৬ জন, এআইএডিএমকের ৯ জন, জেডিইউয়ের ৫ জন, বিপিএফ, এমএনএফ, এনপিপি, এপিএফ, এলজেপি, আরপিআই, এসডিএফের ৭ জন, নির্দলীয় এবং নামাঙ্কিত ৬ জন, শিবসেনার ৩ জন এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ৬ জনের সমর্থন রয়েছে এনডিএর কাছে।
একদিকে যেমন বিরোধী দল হওয়া সত্বেও কৃষি বিলের ক্ষেত্রে এনডিএ সমর্থন পেয়েছে শিবসেনার মত রাজনৈতিক দলের তো, অপরদিকে, তাদের সহযোগী অকালি দল এই কৃষি বিলের চরম বিরোধিতা করেছে। বিতর্কিত কৃষিবিলের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কৌর বাদল। তাঁর স্বামী তথা দলের শীর্ষনেতা সুখবীর বাদল জানিয়েছেন, তাঁর দল সরকার এবং বিজেপিকে সমর্থন করে গেলেও কৃষক বিরোধী রাজনীতিকে সমর্থন করে না।
এদিকে, কৃষি বিলের বিরোধিতায় সরব হওয়া ইউপিএ এবং বাকি বিরোধী দলের কাছে রয়েছে ৯৮ জন সাংসদের সমর্থন। এরমধ্যে কংগ্রেসের ৪০ জন, টিএমসি ১৩ জন, সমাজবাদী পার্টির ৮ জন, আরজেডির ৫ জন, আম আদমি পার্টির ৩ জন, এমডিএমকে, সিপিআই, মুসলিম লিগ, জেডিএস, জেএমএম, কেরল কংগ্রেস এম, এলজেডি, পীএমকের ৮ জন, এনসিপির ৪ জন, সিপিএমের ৫ জন, ডিএমকের ৭ জন, অকালি দলের ৩ জন, পিএডিপির ২ জন সাংসদ রয়েছেন।
কৃষি বিল নিয়ে এনডিএর সহযোগী অকালি দলের সঙ্গে বিরোধ কংগ্রেস এবং ইউপিএর কাছে রাজনৈতিক স্তরে একপ্রকারের সুখবর বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই কৃষি বিল-এর হাত ধরেই অকালি দলের সঙ্গে এনডিএর বিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে, এনডিএ এবং ইউপিএ দুই দলেরই নজর এখন নিরপেক্ষ দলগুলির ওপরে। এক্ষেত্রে যদি লোকসভার মতই রাজ্যসভাতে ধ্বনি মতের মাধ্যমে বিল পাশ না হয় অর্থাৎ মত বিভাজন করা হয় তাহলে সম্ভবত, নিরপেক্ষ দলগুলি ওয়াক আউট করবে কিংবা এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না। সেক্ষেত্রে দেখে নেওয়া যাক, নিরপেক্ষ দলগুলির হাতে কত সমর্থন রয়েছে। অসম গণপরিষদের ১ জন, বিএসপির ৪ জন, বিজু জনতা দলের ৯ জন, টিআরএসের ৭ জন এবং টিডিপির ১ জন সাংসদ রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে লোকসভার মত রাজ্যসভায় মোদি সরকারের কাছে বহুমত না থাকলেও এই বিলের সমর্থনকারী দলগুলির সাংসদ সদস্য মিলিয়ে যে সংখ্যা উঠে আসছে তা বহুমতেরই সমান। তাই লোকসভার মতই রাজ্যসভাতেও এই বিল পাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি রয়েছে।
এই কৃষি বিল কি?
লোকসভাতে গতকাল কৃষি সম্পর্কিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করা হয়। এই তিনটি বিল হল:
১) কৃষি উৎপাদন ব্যবসা এবং বাণিজ্য বিল ২০২০
২) মূল্য আশ্বাস এবং কৃষি পরিষেবাদি বিল ২০২০ সম্পর্কিত কৃষক চুক্তি,
৩) প্রয়োজনীয় সংশোধনী বিল
প্রথম বিল অনুযায়ী, কৃষকরা নিজেদের পছন্দ মতন জায়গায় কৃষিজ উৎপাদন বিক্রি করতে পারবেন। এমনকি কোনো রকম বাধা ছাড়াই অন্যান্য রাজ্যে ও নিজের ফসল বিক্রি করতে পারবেন। এপিএমসির বাইরেও কেনাবেচা সম্ভব হবে। কৃষকরা নিজেদের ফসল ইলেকট্রনিক ট্রেডিং-এর মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন, যা বিপণন ব্যয় করবে এবং কৃষকরা আরো ভালো দাম পাবেন। শস্য বিক্রি করতে কোন শুল্ক দিতে হবে না।
দ্বিতীয় বিল অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক চাষ শেষ করা হবে। কৃষকদের জন্য এক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি থাকবে না, সমস্যা তৈরি হবে চুক্তি প্রস্তুতকারকদের। কৃষক নিজের নির্ধারণ করা মূল্যে কোম্পানিগুলিকে ফসল বেচবে। কৃষকের আয় বৃদ্ধি হবে, কৃষিক্ষেত্রে কোন মিডিয়াম থাকবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিবাদ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তৃতীয় বিল অনুযায়ী, শস্য, ডাল, ভোজ্যতেল, আলু এবং পেঁয়াজ প্রয়োজনীয় বিষয় হবে না। উত্পাদন, স্টোরেজ, বিতরণের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ শেষ হবে।খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলার আধুনিকায়ন সাহায্য করবে এই বিল। ক্রেতাদের জন্য সবজির মূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।সবজির দাম দ্বিগুণ হলে স্টক লিমিট প্রযোজ্য হবে।
প্রকৃতপক্ষে, এই বিল এপিএমসির বাজার অর্থাৎ কৃষি বাজারগুলিকে ধ্বংস করবে। এই বিলের সহায়তায় কৃষকরা কৃষি বাজারের বাইরে ও নিজেদের পছন্দ মতন জায়গায় ফসল বিক্রি করতে পারবেন। এদিকে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষি বাজারে এই ফসল কৃষকদের কাছ থেকে কেনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চার্জ আছে এবং বিভিন্ন ধরনের শুল্ক রয়েছে। পাঞ্জাবে এই ফি প্রায় সাড়ে চার শতাংশ। তাই বাজারের বিপণনকারী না আশঙ্কায় রয়েছেন যে বাজারের বাইরে নিখরচায় যখন ফসল বিক্রি হবে তখন কোন ক্রেতাই বাজারে আসতে চাইবেন না।
অপরদিকে,পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় কৃষি বাজারে গম এবং ধানের সরকারী ক্রয় করা হয়। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন যে নতুন আইনের পরে কৃষি বাজারে কোনও ক্রয় হবে না কারণ বাজারে বাইরের কেনাকাটির ক্ষেত্রে ফসলের দাম কৃষি বাজারের থেকে নিচে হবে না বলে দিলে কোনো ব্যাখ্যা করা নেই।