HighlightNewsদেশ

শেষ মুহূর্তে কেন কংগ্রেসে যোগ দিলেন না প্রশান্ত কিশোর?

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে লাগাতার ১০ দিন ধরে চলা লম্বা আলোচনা পর্বের পরেও শেষ মুহূর্তে এসে কেন প্রশান্ত কিশোর পিছিয়ে এলেন? কেন যোগ দিলেন না কংগ্রেসে? প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে শামিল না হওয়ার পেছনে ঠিক কি কারণে রয়েছে? একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রশান্ত কিশোর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদ্রাকে দলের সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন এবং একইসাথে দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার স্বার্থে ‘ফ্রি-হ্যান্ড’ চেয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি চেয়েছিলেন গোটা কংগ্রেসে তিনি নিজের মতন কাজ করবেন। কিন্তু, সূত্রের খবর অনুযায়ী সোনিয়া গান্ধী রাহুল গান্ধীকেই পার্টির অধ্যক্ষ করতে চান এবং একইসঙ্গে প্রশান্ত কিশোরকে “সম্পূর্ণ স্বাধীনতা” দিতেও রাজি নয় গান্ধী পরিবার। মূলত, এই কারণেই শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসতে হয়েছে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট অনুসারে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ছিল গান্ধী পরিবার এবং প্রশান্ত কিশোরের মধ্যে। সোমবার কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী রাজনৈতিক সঙ্কটগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ‘এম্পাওয়ার্ড অ্যাকশন গ্রুপ ২০২৪’ গঠন করার ঘোষণা করেন এবং প্রশান্ত কিশোরকে এই গ্রুপে সামিল হওয়ার অফার দেন কিন্তু প্রশান্ত কিশোর এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে জানান, কংগ্রেসে আমার নয়, ভালো নেতৃত্ব এবং বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে এআইসিসির মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা একটি টুইট করে প্রশান্ত কিশোরকে দেওয়া প্রস্তাব এবং তাঁর সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানান। এরপরই প্রশান্ত কিশোরের ওই সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ রয়েছে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে।

প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে না শামিল হওয়ার পেছনে দুটি সম্ভাব্য কারণ প্রকাশ্যে এসেছে। কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, প্রশান্ত কিশোরকে একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল অথচ, প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন তাঁর ওপর নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রশান্ত কিশোর এপ্রসঙ্গে নিজের করা ট্যুইটে সাফ জানিয়েছেন, কংগ্রেস তাঁর দেওয়া বড় আকারের প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়, যার মধ্যে এআইসিসির পরিকাঠামোতে পরিবর্তন এবং একই সঙ্গে কংগ্রেসের সভাপতির কার্যসময়ের বিষয়টিও শামিল রয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, কংগ্রেস তাঁকে শুধুমাত্র নির্বাচনী রণনীতি পর্যন্তই সীমিত রাখতে চায়।

জানা গিয়েছে, ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর পরামর্শ দিয়েছিলেন পার্টিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে এবং সেইসঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা ও সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট শাখা তৈরি করতে হবে। এছাড়াও তিনি দলে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ ‘স্বাধীনতা’ চেয়েছিলেন কিন্তু কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা তাঁকে এতটা ‘ছাড়’ দিতে প্রস্তুত ছিলেন না।
কংগ্রেসের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে প্রশান্ত কিশোর চেয়েছিলেন, পার্টি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য আলাদা মুখ এবং সভাপতি পদের জন্য অন্য একজনকে নির্বাচন করুক। দলের সভাপতি পদের জন্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর কিন্তু, সোনিয়া গান্ধী সহ সমস্ত প্রবীণ নেতারা রাহুল গান্ধীকেই আবারও দলের প্রধান করতে চেয়েছেন। ধারণাগত অমিলের কারণেই প্রশান্ত কিশোর এবং কংগ্রেসের পথ আলাদা হয়ে গেছে।
একইসঙ্গে, জানা গিয়েছে, প্রশান্ত কিশোরের তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও-এর সঙ্গে বৈঠক এবং রাওয়ের দল টিআরএস-এর সঙ্গে তাঁর সংস্থা আইপ্যাকের চুক্তি স্বাক্ষর নিয়েও কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। যদিও প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন তিনি বর্তমানে আর আইপ্যাকের সঙ্গে যুক্ত নন। কংগ্রেসের তরফ থেকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে দলে যোগ দেওয়ার পর প্রশান্ত কিশোরের সমস্ত দলের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব শেষ করতে হবে। এই বিষয় নিয়েও মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছিল।

Related Articles

Back to top button
error: