তাকওয়াবান মানুষ গড়ার লক্ষ্যে রোজা পালন শুরু
মুহাম্মদ সানাউল্লাহ: আল-হামদু লিল্লাহ। লাখো কল্যাণ আর মুক্তির সওগাতবাহী মাহে মোবারক রামাযান শুরু হয়েছে। মানুষকে তাকওয়ার গুণে সমৃদ্ধ করতে আবারও সমাগত হল সওমের মাস। আমরা যারা আবারও এ মাস পেলাম তারা কতই না ভাগ্যবান! এ কারণে মুমিন হৃদয় আনন্দ হিল্লোলে বিমোহিত, রবের সান্নিধ্য লাভের উন্মাদনায় শিহরিত, জান্নাত লাভের বাসনায় আনন্দিত, উদ্বেলিত রামাযানের পূণ্যলাভের আকাক্সক্ষায়। প্রকৃত অর্থেই রামাযান মাস একজন মুসলিম বান্দার জন্য আল্লাহর নেয়ামত ও করুণা লাভের এক মহাকল্যাণকর মওসুম। এ মাস কুরআন নাযিলের মাস, জান্নাত লাভের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস, তাকওয়া অর্জনের মাস। সালফে সালেহীনদের মতে, রজব মাস হলো বাতাসের ন্যায়, শাবান মাস হলো মেঘের ন্যায় এবং রামাযান হলো বৃষ্টির ন্যায় অর্থাৎ অবারিত রহমতের বারিধারা বয়ে চলার মাস রামাযান, অফুরন্ত কল্যাণের মাস রামাযান।
এ মাসের সওম প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর ফরজ। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যারা এ মাসে সমুপস্থিত থাকবে তারা যেন সাওম পালন করে। ইসলাম ধর্ম যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর দণ্ডায়মান তার একটি হল সাওম। এর শাব্দিক অর্থ হলো কোন কিছু থেকে বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পান, আহার, স্ত্রী-সান্নিধ্যসহ সকল প্রকার সিয়াম ভঙ্গকারী কার্যাবলী হতে সিয়ামের নিয়্যাতে বিরত থাকাকেই সিয়াম বলা হয়।
কেউ যদি সিয়াম পালন করাকে ফরয মনে না করে তাহলে উম্মাতে মুসলিমার ইজমা অনুযায়ী সে কাফের। সে ইসলাম হতে বিচ্যুত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হলো যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার’। (সূরা বাকারা আয়াত : ১৮৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন : ‘রামাযান এমন এক মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য। এতে রয়েছে হেদায়াতের সুস্পষ্ট দলীল। আর তা হলো সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। অতএব যে ব্যক্তি রামাযান মাসে উপনীত হবে সে যেন ঐ মাসের সিয়াম পালন করে। (সূরা বাকারা আয়াত: ১৮৫) আবূ হুরায়রাহ (রা) সূত্রে নাবী (সা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেছেন: ঈমান সহকারে সাওয়াবের আশায় যে কিয়াম করে (নফল সালাত আদায় করে) তার পূর্বের সকল (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করা হয়। ঈমান সহাকারে সাওয়াবের আশায় যে ব্যক্তি রামাযান মাসের সিয়াম পালন করে তার পূর্বের সকল (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করা হয়। (সহীহ বুখারী হা: ১৯০১, সহীহ মসলিম হা: ৭৬০)
আবূ হুরায়রাহ (রা) থেকে বর্ণিত, নাবী (সা) বলেছেন : পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এক জুমুআহ হতে আরেক জুমুআহ এবং এক রামাযান থেকে আরেক রামাযান এর মধ্যবর্তী সগীরা গুনাহের কাফ্ফারা যদি কবিরা গুনাহ বর্জন করা হয়। (সহীহ মুসলিম হা: ২৩৩)
পবিত্র রমজান মাসের রোযা সম্পর্কে মহানবী (সা.) সুসংবাদ শুনিয়েছেন- ‘যিনি সিয়াম পালন করবেন ঈমান আর পূণ্য লাভের আশায়, ক্ষমা করে দেয়া হবে তার পূর্বের সব অপরাধ’। বাস্তবিকই রামাযান পাওয়া একজন মুমিন বান্দার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। এ সুযোগ লাভ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে যাওয়ার তাওফীক অর্জন করা।
পবিত্র রমজান আগমনের অপেক্ষায় জান্নাতকে ১১ মাস ধরে সুসজ্জিত করা হয়। তেমনি প্রতিটি মুসলিমের উচিত রমজান মাস আসার আগে থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা যে, রমজান মাসকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাবো। মহানবী (স.)কে একদা মিম্বারে খুৎবা দিতে ওঠার সময় তিনবার ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ বলতে শোনা গেল। নামায শেষে সাহাবগণকে কারণ হিসেবে বলা হ’ল, আমাকে জিব্রাইল (আ.) এসে বললেন, যে রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না সে ধ্বংস হোক, আমি বললাম, ‘আমিন’।
এ মাসের বরকত ও কল্যাণ লাভ করে নিজেদের সব গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে তাই প্রতিটি মুসলিমের থাকা চাই একটি পরিকল্পনা। নিজেকে সব ধরনের সাংসারিক, বৈষয়িক, ব্যবসায়িক ঝামেলা থেকে মুক্ত করে রামাযানের ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। কুরআন তিলাওয়াত, রামাযানে সময়মত সালাত আদায়, রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা এবং সাধ্যমতো দান সাদাকাহ ও কল্যাণকর কাজ করা। পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে এবং মানবতার কল্যাণে যতটুকু সম্ভব ত্যাগের মহিমায় নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় পার্বণে দ্রব্যের মূল্য হ্রাস করে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, আর আমরা রামাযানে সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করে অর্থ উপার্জনে বিবেকহীন অন্ধ হয়ে যাই, যা বড়ই লজ্জা ও আফসোসের বিষয়। আল্লাহ আমাদের বিবেকবর্জিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখুন। আমীন।
ইনকিলাব