একজন ছেলে এবং মেয়ে কি শুধু বন্ধু হতে পারে ??
মুতাসিম ফাইয়াদ
বন্ধু শব্দটা খুবই সাধারণ হলেও এর প্রাণকেন্দ্রে আছে একটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরি, যার উদগীরণ কখনও এক ভয়ঙ্কর রূপ নেয়, ধ্বংস করে অজস্র প্রাণ, ভূপ্রকৃতি সহ হাজার কোটি সম্পত্তি, কখনও আবার তা ভূমিরূপ গঠনেও সহায়তা করে।ভূগোলের ছাত্ররা জেনে থাকবে ডেকান প্লেটো এই লাভা শিলা দ্বারা গঠিত যা কিনা ওই অগ্নেও গিরির জ্বলা মুখ থেকেই সংগৃহীত হয়।আমার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হয়েছে বন্ধুক্ত বিষয়টাও ঠিক সেইরকম। যদি তার মধ্যে সততা, নিষ্ঠা, প্রয়োজনীয়তা, শালীনতা, সম্মান আর মহান প্রভুর কোনো প্রকার সন্তুষ্টিমূলক বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সে বন্ধুক্ত ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সেই সম্পর্ক একটা সিসা ঢালা প্রাচীর নির্মানে সহায়তা করবে।
“মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা ভাল কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে”। (সূরা তওবা -৭১)
কিন্তু এই বন্ধুক্ত যদি হয়, উপরে বর্ণিত বিষয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজস্ব সার্থ চরিতার্থ করার জন্য,আমাদের আপন দুনিয়ায় এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য, উন্মুক্ত ভাবনায় বিলীন হওয়া এক মরুভূমি গঠনের জন্য তাহলে তা শুধু যে আল্লাহতালার পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ তা নয়, সাথে সাথে তা আমাদের জন্য জাহান্নামের নিরকৃষ্ঠতম স্থানের অধিকারী বানিয়ে দেয়। আমরা আমাদের সাথে বন্ধুক্তের নামে এই সম্পর্কের অপব্যাবহার করি। সম্মুখে কোনো বন্ধু – বান্ধবীর ব্যাপারে প্রশংসায় কিংবা শালীনতায় উধভাসিত হলেও পরক্ষণে আমরা আমাদের বন্ধু মহলে তার প্রকৃত সম্মানের নিশ্রংশ হত্যা করে ফেলি। বর্তমান সময়ে এসে কলেজে কিংবা স্কুলে মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সংলাপ খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁরা আপনার উপর এক গুচ্ছ আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রতিনিয়ত উপনিত হয় । কিন্তু যে মেয়েটি আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার উপরে তার নিরাপত্তার ভরসা করে, আসলে তা আপনার কাছে এক তাসের ঘর। যে কোন মুহূর্তেই এই আত্মবিশ্বাসের বীজ কফিনে ঢাকা পড়ে যায়, ঘোটে যায় হাজার অঘটন। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন যদি কোন নর-নারী একাকি অবস্থান করে তাহলে তাঁদের তৃতীয় প্রতিনিধি হয় শয়তান। সুতরাং বর্তমান সময়ের নিরিখে এই ধরনের ভ্রান্ত নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বন্ধুক্ত সম্পূর্ণ হারাম। আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব আল্লাহর উপরে নাস্ত করাই আপনার জন্য স্রেও। কারণ একবার খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনি আপনার নিরাপত্তার নামে যার সঙ্গে সংলাপ করেছেন সে আপনার ঐ নিরাপত্তার উপরে পৈশাচিক এক নৈরাশ্যের দুনিয়া তৈরি করে ফেলেছেন। আজ শুধু বন্ধুক্তের দোহাই দিয়ে আমরা নোগ্ন এক দুনিয়ার সাথে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি আর যার ফলে গোটা বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে ধর্ষণ, খুন আর আত্মঘাতী পরিস্থিতি। নিমেষেই খালি হচ্ছে কত শত মায়ের কোল। পরিলক্ষিত হচ্ছে অজস্র বোনের চোখে মৃত্যু যন্ত্রণার ভয়। যুগে যুগে যত মহিলা, বন এই দুনিয়ার বুকে এসেছে তারা যতই নারী অধিকারের কথা বলুক অবশ্যই কোথাও কোনো না কোনো ভাবেই তারা তাদের ভাই, বন্ধু, পিতা স্বামীর উপরে নির্ভরশীল।
ইসলাম তাদেরকে অসংখ্য স্বাধীনতা প্রদান করেছে, পড়াশোনা, ইসলামী আন্দোলন, অফিস, আদালত সব কিছুতেই তাদের স্বাধীনতা আছে তার পরেও আজ তারা যে স্বাধীনতার কথা বলছি সেটা স্বাধীনতা চাইছে তা নয়, তা তো অনেক আগেই ইসলাম তাদের প্রদান করেছে। বাস্তবতা হলো তারা এখন নেতৃত্ব চাইছে, ক্ষমতা চাইছে, স্বামী, পিতার উপরে কর্তৃত্ব চাইছে যা শুধু ইসলাম ধর্মই নয় সর্ব ক্ষেত্র থেকেই নিষিদ্ধ। একটা বিষয় আমি লক্ষ করেছি যখন ব্যাংকে কিংবা কোনো অফিসে, বা যেকোনো এমন জায়গা যেখানে পুরুষ এবং মহিলার সারিবদ্ধ লাইন, সেখানেই তারা গা গেশতে থাকে কোনো ভাবে একটু আগে যাওয়া যায় কি না, সেখানে আর তাদের মনে পড়েনা সমান অধিকারের কথা, সেখানে আমরাও তাদের দুর্বল বলে একটু জায়গা করে দিলেও তারা বিন্দু মাত্রও মুখ কালো করে না। কিন্তু পরক্ষণে সেচ্ছাচারিতার অজুহাত আসলেই কেমন জানি তাদের মধ্যে এই সমান অধিকারের পোকা বিড়বিড় করে মাথায় চেপে বসে। একটু ভাবলেই আমাদের সামনে সব উন্মুক্ত হয়ে যাবে কিন্তু সমস্যা হলো আমরা ভাবি না।সূরা আল আরাফের মধ্যে একটা অসাধারন ব্যাপার উল্লেখ আছে – আমাদের আদি পিতা- মাতা আদম ও হাওয়া বিবি কে শয়তান ধোঁকা দিয়ে তাদের জান্নাতী বস্ত্র খুলে ফেলে ছিলো, আসলে এখানে একটা বিষয় ভাববার আছে সেটা হলো শয়তান প্রথমেই তাদের লজ্জায় আঘাত হানে, তাদের কে উন্মুক্ত করতে চেয়ে ছিল। আজও শয়তান সেটাই চায় যে পুরুষের সামনে নারীদের লজ্জা অবৃত পোশাকের অবনম। নারীরা যখন থেকেই তারা তাদেরকে এই বিষয়ে স্বাধীন ভাবতে শুরু করেছে তখন থেকেই একটা সমাজ তাদেরকে সমাজের পণ্য হিসেবে ব্যাবহার করছে। এর সব থেকে বড় বাস্তবতা হলো বেশ কিছুদিন আগে নিউজের শিরোনামে বেশ কিছু প্রসিদ্ধ জন-প্রতিনিধির উন্মুক্ত চেহারা বর্তমান আর আমরা সেই শয়তানের সূক্ষ্ম পরিকল্পনায়।বন্ধুক্ত আর স্বাধীনতার নামে নিজেদের কে পর পুরুষের সামনে উন্মুক্ত করছি। এটা একটা শয়তানের ঘৃন্য পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে এই ধরনের বন্ধু বা বান্ধবীদের মূল উদ্দেশ্য হলো বন্ধুক্তের নামে পরপুরুষ কিংবা মহিলাদের সান্নিধ্যে অর্জন করা। নারীরা কখনো আমাদের বোনের ভূমিকায় কখনো কারোর স্ত্রীর ভূমিকায় আর কখনো মায়ের ভূমিকায় নিজদের কে মর্যাদাশীল পর্যায়ে উন্নীত করে তাহলে তারা বন্ধুক্তের নামে যে উন্মুক্ত পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের সাক্ষাৎ ঘটাচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্য কি হতে পারে..??
আসুন বন্ধু আমরা বন্ধু নির্বাচনে বিবেচনার জন্য নিজেদের কে তৈরি করি। স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে নয় আমাদের বন্ধুক্ত হোক আল্লাহর সন্তুস্টির উদ্দেশ্যে। ছেলে কিংবা মেয়ে, বন্ধুক্তের সীমানা হোক জান্নাতের সীমানায়। আমরা আমাদের ভালো চিনি আমি সব থেকে ভালো জানি আমি কোনো মেয়ের সঙ্গে কেনো বা কি উদ্দেশ্যে কথা বলছি, সেই উদ্দেশ্য যদি আমাদের জান্নাতের পরিপন্থি হয় এবং তা জাহান্নামের ইন্ধন হয় তাহলে সেই বন্ধুক্ত পরিত্যাগ করুন। শুধু মাত্র পৃথিবীর আনন্দ ফুর্তির জন্য কোনো বন্ধু হতে পারে না।
“আমরা যা শিখছি তা যদি আমাদের বিশ্বাসের উপরে কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, আমাদের কে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যেতে না পারে, আমাদের বিশ্বাস কে মজবুত করতে না পারে, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে আমাদের নিয়তে কিংবা উদ্দেশ্যে ভুল আছে”
আজ থেকে সেই সব বন্ধুদের পরিত্যাগ করুন যারা আপনার আমলনামা কালো করছে। নাহলে একটা দিন এমন আসবে সেই দিন আপনাকে আফোসোস করে বলতে হবে – “হায়! আমার দূর্ভাগ্য, হায়! আমি যদি অমুক কে (নিজের) বন্ধু না বানাতাম”। (সূরা ফোরকান – 28 ) একটা ভাবনা আপনাদেরকে ভাবিয়ে আমি শেষ করতে চাই, আপনি যে বন্ধু কে বা যে বান্ধবী কে বন্ধু বা বান্ধবী হিসাবে গ্রহণ করলেন তা যেনো এমন না হয় কেয়ামতে সে উঠে আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষী দায় আর এই দাবি করে যে তার আমলনামা ধ্বংসের জন্য আপনি দায়ী।
যদি কেউ আপনার প্রভুর আনুগত্য পছন্দ না করে তবে আপনারও তাকে পছন্দ করার কোন যুক্তি নেই।
সে তুমি আমার কোনো বন্ধু নয়।
যে তুমি আলোর দেখা পাওনা, আমার চলার পথ আগলে দাড়াও জান্নাতে যেতে দিতে চাওনা।
-ড. বিলাল ফিলিপ্স
নুরুজ্জামান নুর