Highlightপাঠকের কলমে

বঞ্চিত হিজাবধারী তরুণীদের কনস্টেবল পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

সালমা সুলতানা, টিডিএন বাংলা: আবেদন পত্রে দেওয়া ছিল মুখ খোলা ছবি। কিন্তু মাথায় হিজাব থাকার কারণে ২৬সেপ্টেবরের রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষায় বসার সুযোগই পেল না প্রায় হাজার খানেক মুসলিম তরুণী। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন সেইসাথে ব্যথিতও হলাম। এমনিতেই সারা দেশ সহ এরাজ্যেও চাকরির বাজার মন্দা। ২০২০সালে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল ও লেডি কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড।

আর তাতে অনেক আশা নিয়ে আবেদন করে কয়েক লক্ষ তরুণ তরুণী। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে সেই নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে গেল।

কিন্তু শুধু হিজাব (মাথা ঢেকে আবেদনপত্রে ছবি দেওয়ায়) পরার কারণে ওই পরীক্ষার ঠিক প্রাক মুহূর্তে কিছু মুসলিম তরুণীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রায় হাজারের কাছাকাছি মুসলিম তরুণী তাদের এডমিট ডাউনলোড করতে পারার সমস্যা নিয়ে তারা ছুটে যায় বিধাননগরের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের হেড কোয়ার্টারে। সেখানে তারা জানতে চায়, নির্ধারিত ১৭০ টাকা (যেখানে এসসি এসটি দের দিতে হয়েছে মাত্র ২০টাকা) ফিজ দিয়ে সঠিক নিয়মে আবেদন জমা দিয়েও কেন তাদের এডমিট ডাউনলোড করা গেল না?সেখানে তারা জানতে পারে তাদের মুখ খোলা থাকলেও মাথা কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকার কারণেই নাকি এডমিট আসেনি। যার চরম মূল্য দিতে হল ওই আবেদনকারীদের। রবিবার তাদের ছাড়াই পরীক্ষা হয়ে গেল নির্বিঘ্নে। একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মীয় নিয়ম পালনের কারণে তারা পরীক্ষায় বসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল। যা অত্যন্ত দুঃখের।

ভারতে ৪২তম সংবিধান সংশােধনের সাহায্যে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির সংযােজন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল সব ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন। সংবিধানের ২৫-২৮ নং ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ঘােষিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এদেশে শিখরাও তাদের ধর্মীয় নিয়মে মাথায় পাগড়ি ও লম্বা চুল দাঁড়ি নিয়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন।

পুলিশ নিয়োগের পরীক্ষায় এই রকম সিদ্ধান্ত বা নিয়ম সংবিধান বিরোধী এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল। কর্তৃপক্ষের ওই নিয়ম ধর্মীয় স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অবিলম্বে সেই নিয়ম হটানো হোক। এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছি যাতে করে বঞ্চিত পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এনে তাদের পুনরায় পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়। কেননা হিজাব পরার কারণে তাদের শারীরিক সক্ষমতা বা মেধা তো আর কমে যায় না।

ইতিমধ্যে লেডি কনস্টেবল পরীক্ষায় হিজাব সমস্যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন গণ সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের অফিস সল্টলেকের আরক্ষভবনে একটি স্বারকলিপি প্রদান সহ মুখ্যমন্ত্রীকে মেল প্রেরণ কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। কিন্তু কা কস্য পরিবেদনা। তাদের ছাড়াই সম্পন্ন হয়ে গেল পরীক্ষা।

এমতাবস্থায়, স্বাধীন দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা চাইব আবেদনকারী হিজাব পরিহিতা মুসলিম তরুণীরাও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাক। বাতিল হওয়া আবেদন গুলি নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হোক। সেগুলি পুনর্বিবেচনা ও সংশোধনের সুযোগ দিয়ে তাদেরকেও পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়া হোক। হিজাব পরার জন্য প্রয়োজনে আলাদা করে পরীক্ষা সেন্টারে মহিলা আধিকারিক দিয়ে তাদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা করা হোক। এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী হিসেবে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

Related Articles

Back to top button
error: