টিডিএন বাংলা: লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আইএসএফ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছে, “অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে বিজেপি’র নেতৃত্বে এনডিএ জোট ফের সরকার গঠন করতে চলেছে। যেভাবে বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি’র বিশাল জয় চিত্রিত করা হয়েছিল তা কার্যত হয়নি। একক দল হিসেবে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এটা এককথায় ভারতের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ। ভারতের জনগণ নরেন্দ্র মোদীর একমেবাদ্বিতীয়ম হবার ইচ্ছায় রাশ টেনে ধরেছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মেরুকরণ আবারও সামনে চলে এসেছে। আসলে যেসমস্ত অন্যায় করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস সেটা চলতে থাকবে। বিচারের নামে শুধু প্রহসন হবে। দুই দলই ক্ষমতার মসনদে থেকে এই অপরাধগুলি চালিয়ে যাবে এবং সাধারণ গরিব মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে সমাজ জীবনে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হবে। আসলে, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির অর্থনৈতিক নীতি, সাম্প্রদায়িক বিভাজন নীতি একইরকমের।
অন্যদিকে, যারা আইএসএফকে পাত্তা দিতে চায়নি, তারা আইএসএফের শক্তি টের পাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত গ্রামঞ্চলে, আইএসএফের পক্ষে মানুষের সমর্থন আছে, সেটি ভোটের ফলাফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণ থেকেই বোঝা যাচ্ছে। আইএসএফের নেতৃত্বে মানুষকে অধিকার পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির একটি বিকল্প শক্তি দানা বাঁধছে। এত কঠিন লড়াই আমাদের লড়তে হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারচুপি, রিগিং, ছাপ্পা ভোট, পুলিশের অত্যাচার, কেন্দ্রীয় বাহিনীর কার্যত নীরব ভূমিকা পালন সত্ত্বেও মানুষ ভোট দিতে এগিয়ে এসেছেন। আমরা মানুষের এই লড়াকু ভূমিকাকে কুর্নিশ জানাই। লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতি জানাই কৃতজ্ঞতা।
আমরা সবসময় বলে এসেছি এটা গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই। ভোট অনেক জায়গায় ঠিকমতো হয়নি। হলে আমাদের ফল নিঃসন্দেহে আরো ভাল হত। তবুও আমরা মানুষের রায়কে সম্মান জানাচ্ছি। বেশ কয়েকটি আসনে আমাদের প্রার্থী লক্ষাধিক ভোট পেয়ে ভালো লড়াই দিয়েছেন।
রাজ্যের এই ভোটের ফল থেকে আইএসএফ মনে করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি একটি ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। বিজেপি’র অস্তিত্ব সেরকম এখানে নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপি’র ভয় দেখিয়ে, নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে রেখে, একধরণের নিরাপত্তাহীন করে বিজেপিকে আরো শক্তিশালী প্রদর্শন করানো হল। এই শক্তিশালী দেখানোটা তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা সেটিং ছাড়া কিছু নয়। তৃণমূলের এটি দরকার নিজেদের বিভিন্ন কুকর্ম থেকে বাঁচার জন্য। বিজেপির এখানে কোন সংগঠন নেই। শুধুমাত্র ধর্মীয় তাস খেলছে তারা। এটাকে তৃণমূল বিশেষ করে তুলে ধরছে যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভয় পায়। তৃণমূল কংগ্রেস কখনোই বিজেপিকে আদর্শগতভাবে মোকবিলা করতে পারবে না। এই দুই দলের যাঁরা জিতেছেন তাঁরা প্রায়ই সুবিধামত দলবদল করেন। শীলভদ্র দত্ত, মুকুটমনি অধিকারী, নিশীথ প্রামানিক, কৃষ্ণ কল্যানী , সৌমিত্র খাঁ ইত্যাদিরা কখন বিজেপিতে আছেন, কখন তৃণমূল কংগ্রেসে আছেন তা বোঝা খুব মুশকিল। আসলে তৃণমূল কংগ্রেস এই বাইনারিকে জিইয়ে রাখতে চায়।
এই রাজ্যের আর্থ সামাজিক অবস্থা শোচনীয়। এখানে দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি পরিয়ায়ী শ্রমিক আছে। শুধুমাত্র ভাতা অনুদান দিয়ে মানুষকে তাঁর অধিকার, মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে দুর্নীতিতে মত্ত থেকে তৃণমূলীরা সামান্য ভাতা দিয়ে ভাবছে মানুষকে দখল করে রাখবে। তাই এই সেটিং বা বাইনারির খেলা। সেজন্যই এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে।
আইএসএফ সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেমেছে। এই লড়াই দীর্ঘমেয়াদী লড়াই। এই লড়াই জারি থাকবে। একটা নির্বাচনে এই লড়াই শেষ নয়। একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গঠনে আইএসএফ সবসময় লড়াই করে যাবে।
আইএসএফ ২০২১ সালে তৈরি হওয়ার পরেই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেয় দল। ভোট পরবর্তী ভয়াবহ হিংসার সম্মুখীন হতে হয়। কর্মীরা শহীদ হয়েছেন, মিথ্যা মামলায় হাজতবাস হয়েছে অনেকের। এরপর গত বছর পঞ্চায়েতের নির্বাচনে যে প্রহসন হয়েছে, সেখানেও দলের কর্মীদের হিংসার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী বণ্ড থেকে তোলা বিপুল কর্পোরেট অর্থের মোকাবিলা করে আমাদের কর্মীরা যেভাবে লড়াই চালিয়েছেন তার জন্য তাঁদের আমরা অভিবাদন জানাচ্ছি । অভিনন্দন সমস্ত বুথ এজেন্ট, পোলিং এজেন্টদেরও। যেভাবে মাটি কামড়ে থেকে হার না মানা জেদ নিয়ে তাঁরা দুষ্কৃতীদের রুখেছেন, সেটা তারিফযোগ্য। ধন্যবাদ সমস্ত স্তরের নেতৃবৃন্দকে।
আজ ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ভাঙড়, ক্যানিং সহ বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেস দুষ্কৃতীরা আইএসএফ কর্মী সমর্থকদের উপরে জুলুম নির্যাতন শুরু করেছে। কর্মীদের মারধর , ঘর বাড়ি লুট এলাকায় বোমাবাজি করে ২০২১ এর ভোট ফলাফল পরবর্তী হিংসাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। প্রশাসনকে অবিলম্বে হিংসা দমন করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলার গণতন্ত্র রক্ষায় রাজ্য সরকারকে রাজ ধর্ম পালন করতে হবে।”