Highlightআন্তর্জাতিক

অনলাইনে নিলামে ‘বিক্রি’ দেশীয় মুসলিম নারীদের , ‘সুল্লি ডিলস’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে সরব বিশিষ্টজনেরা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : গত কয়েক দিন আগে হুট করেই বেশ কিছু মুসলিম নারী জানতে পারেন, একটি অ্যাপে নিলামে বিক্রির জন্য তাদের নাম তোলা হয়েছে। রীতিমতো ছবিসহ প্রোফাইল তৈরি করে তাদের নিলামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে বলে। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা তাদের ছবি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাপটিতে। সেখানে তাদের ‘ডিলস অব দ্য ডে’ বলে পরিচয় করানো হয়েছে।

সুল্লি ডিলস নামের ওই অ্যাপটিতে যেসব নারীকে নিলামে তোলা হয়েছে তাদের সবাই মুসলিম এবং তারা অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার। পেশাগত জীবনে তাদের প্রায় সবাই সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, শিল্পী কিংবা গবেষক। অ্যাপটিতে গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ৮৩ জন মুসলিম নারীর ছবি দিয়ে তাদের ‘বিক্রির আয়োজন’ করা করা হয়।

“সুল্লি” শব্দটি মুলত মুসলিম মহিলাদের জন্য অবমাননাকর গালিগালাজ করার জন্যই বযাভার করা হয়ে থাকে।

মুসলিম নারীদের প্রতি অবমাননাকর গালি হিসেবে এই সুল্লি শব্দটি ব্যবহার করে উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা। আর এই অ্যাপেও তাদের জঘন্যভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। যদিও এটি কোনও বাস্তব নিলাম ছিল না; তবে মুসলিম নারীদের সম্মানহানি করা, ছোট করা, অপমান করা, অপদস্থ করা ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। এই অ্যাপে ব্যবহারকারীদের বলা হয় যে অনলাইনে একজন “সুল্লি“ কেনার এখনই সুযোগ।

সুল্লি অ্যাপে যাঁদের অপদস্থ করা হয়েছে তাঁদের সবাই অবশ্য ভয়ে চুপ হয়ে যাননি। তাঁদের অনেকেই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এসব ‘বিকৃত’ মানসিকতার মানুষদের দেখে নেওয়ার সংকল্পের কথা লিখেছেন। তাঁরা পুলিশের কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন। এদের কেউ কেউ এরমধ্যেই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে ভয় পাচ্ছেন এমন আরো হেনস্থা তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

সুল্লি ডিলস অ্যাপটি তৈরি যেসব টুইটার আ্যকাউন্ট থেকে করা হয়েছিলো, গত এক সপ্তাহে টুইটার তার সবগুলো বন্ধ করে দেয়। সমাজের অনেক প্রতিনিধি এবং অধিকার কর্মী মুসলিম নারীদের এভাবে অপমান করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

দিল্লি কমিশন অফ ওমেন চেয়ারপার্সন স্বাতী মালোয়াল পুলিশ কে নোটিশের মাধ্যমে এই সাইবার ক্রাইমের বিরূদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। মুসলিম নারীদের ছবি ও পার্সোনাল তথ্য তাদের সম্মতি ছাড়া নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাবহারের জন্য এফআইআর দায়ের করেছেন।

হানা মহসিন খান, একজন বিমান চালক, গত সপ্তাহে এক বন্ধু তাকে একটি লিঙ্কে দিয়েছিলেন যা ওই অ্যাপেও মহিলাদের ছবি গুলির একটি গ্যালারিতে নিয়ে যায়।‎

‎এই বিষয়ে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন “চতুর্থ ছবিটি আমার ছিল। তারা আক্ষরিক অর্থে আমাকে তাদের দাস হিসাবে নিলাম করেছে।

‎গিটহাব বলেছে যে তারা এখন ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে, তারা বলেছে যে তারা হয়রানি, বৈষম্য এবং সহিংসতা উস্কে দেওয়ার বিষয়ে তার নীতি লঙ্ঘন করেছে।‎

বিরোধী দল কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সমন্বয়কারী হাসিবা আমিন বলেন, কট্টরপন্থী রাজনীতির সমর্থকদের বেশ কয়েকটি অনলাইন আ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এভাবে অনলাইনে মুসলিম নারীদের অপদস্থ করার এরকম ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ১৩ মে ঈদুল ফিতরের দিন ইউটিউবের একটি চ্যানেলে ‘ঈদ স্পেশাল’ নামে এক অনুষ্ঠান হয় যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের মুসলিম নারীদের নিলামে তোলা হয়েছিলো।

অনলাইনে অপদস্থ করা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর গত বছরের এক রিপোর্টে বলা হয়, যেসব নারীরা যতো বেশি সোচ্চার, তারা ততো বেশি টার্গেট হচ্ছেন।

Related Articles

Back to top button
error: