HighlightNews

ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে রাশিয়া! ইসলামী ব্যাংক চালু করার সিদ্ধান্ত

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: রাশিয়া ইসলামী ব্যাংকিং চালু করতে চায়। দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত চারটি অঞ্চলে আপাতত এটার বাস্তবায়ন করা হবে। অঞ্চল চতুষ্টয় হলো চেচনিয়া, দাগেস্তান, তাতারস্তান ও রাশিয়ান বাশকিরিয়া। আশা করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত দেশটির অর্থনৈতিক খাতে বড় ধরনের সুফল বয়ে আনবে। ইসলামী ব্যাংকগুলো শরিয়াহ নীতিমালা অনুসারে পরিচালিত হয়। সেখানে রিবা নিষিদ্ধ। এছাড়া এর সুনির্দিষ্ট মডিউল রয়েছে। যার মধ্যে ইজারা, মুশারাকা ও কিস্তিভিত্তিক লেনদেন অন্যতম। রাশিয়া ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র নীতিমালা প্রণয়ণ করছে। এতে ইসলামী ব্যাংকগুলো কিভাবে পরিচালিত হবে, এর বিস্তর বিবরণ তুলে ধরা হবে। দেশটির জেনারেল ব্যাংকিংয়ের চেয়ে আলাদাভাবে এই নীতিমালা প্রণয়ণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশটি একদিকে মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশগুলোর প্রয়োজন মেটাতে চায়। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। ইতোমধ্যে অনেকেই দেশটির ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। নতুন এ প্রকল্প তাদের সুযোগকে অবারিত করে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শেয়ার বাজারের স্টেট ডোমা কমিটির চেয়ারম্যান আনাতোলি আকসাকভ মনে করেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের চাহিদা দেশব্যাপী তৈরি হতে পারে। একইসাথে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের জন্য রাশিয়ায় বিনিয়োগের দরজা উন্মোচিত হবে, যা রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের ‘গেম-চেঞ্জার’ হতে পারে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। সেখান থেকে উত্তরণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এতে পশ্চিমা অর্থায়নের বিকল্প হিসেবে তারা মুসলিম দেশ থেকে অর্থায়নের আশা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রায় ১৪ শতাংশ। যার আনুমানিক মূল্য ১. ৯৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং শিল্পের প্রায় ছয় শতাংশ।

ইসলামী ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংক থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে। তারা ধর্মীয় ও নৈতিক নিয়ম অনুসরণ করে, যাতে সুদ ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। ফাইন্যান্সিং পার্টনারশিপ অর্গানাইজেশন (এফপিও) নামে রাশিয়ার এই ব্যাংকিং প্রকল্প বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের সেবা দেবে। তারা সুদ ছাড়াই ঋণ দেবে। বিশেষ চুক্তিতে অর্থ বাণিজ্য করবে। অংশীদার হয়ে ও গ্যারান্টি প্রদান করে ব্যবসায় সহায়তা করবে। এছাড়া ইজারা মুশারাকা ও কিস্তিভিত্তিক লেনদেন আঞ্জাম দেবে। সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ রাশিয়া এই এফপিওগুলোকে তত্ত্বাবধান করবে। তারা শরিয়াহ নীতিমালা মানতে বাধ্য করবে। যাইহোক এই নতুন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হওয়ার আগে গভীর আলোচনার প্রয়োজন আছে। তাই এটি দুই বছরের মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে চালু হবে। এই এফপিওগুলো নির্দিষ্ট কর থেকে মুক্ত থাকবে।

কেন প্রয়োজন ইসলামী ব্যাংকিং
শুধুমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই নয়, পশ্চিমা দেশগুলোতেও ইসলামী ব্যাংকিংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ এটিকে ব্যাংকিংয়ের একটি স্থিতিশীল ও নৈতিক উপায় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সুদ-ভিত্তিক ঋণের মাধ্যমে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনকারী সাধারণ ব্যাংকগুলোর বিপরীতে ইসলামী ব্যাংক অংশীদারিত্ব ও ঝুঁকি ভাগাভাগির ওপর মনোযোগ দেয়। এ কারণে অনেকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংকের বিকাশ নিয়ে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু সবার সন্দেহকে উপচে ইসলামী ব্যাংকিং দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে এবং বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রাশিয়ার পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ ও কৌশলগত। এটি তার আর্থিক ব্যবস্থাকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে তাদের সহযোগিতা করবে। যদিও এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এই পদক্ষেপে রাশিয়ার অর্থনীতি ও মুসলিম বিশ্বের সাথে তার সম্পর্কের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সূত্র : দি ইসলামিক ইনফরমেশন, নয়া দিগন্ত

Related Articles

Back to top button
error: