HighlightNewsদেশ

চুরির সন্দেহে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারা হল ম্যানেজারকে! সুইমিং পুলে ফেলে বিদ্যুতস্পৃষ্ট করা হল, হাসপাতালের বাইরে ফেলে দেওয়া হল লাশ, প্রকাশ্যে ভিডিও

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে কয়েকজন ব্যবসায়ী শিবম জোহরি (৩২) নামে এক পরিবহন ম্যানেজারকে খুঁটিতে বেঁধে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ওই ম্যানেজারের লাশ হাসপাতালের বাইরে ফেলে দেয় তারা। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটে এবং বুধবার এর ভিডিও প্রকাশ পায়। আগামী মাসেই বিয়ে করার কথা ছিল শিবমের। পরিবহন ব্যবস্থাপক শিবমের বাবা জানান, ট্রান্সপোর্টে আসা কাপড় চুরির অভিযোগে ব্যবসায়ীরা শিবম সহ কোম্পানির আরও চার কর্মচারীকে মারধর করে। এই ঘটনায় শিবমের মৃত্যু হয়। আহত শ্রমিকরা বলছেন, সুইমিং পুলে ফেলে তাঁদের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করা হয়। শিবমের বাবা খুনের অভিযোগে দুই ব্যবসায়ী সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন।

জানা গিয়েছে, শিবম গত ৭ বছর ধরে সিউড়ি ট্রান্সপোর্টে কাজ করতেন। সেখানে তিনি ম্যানেজারের পদে ছিলেন। পরের মাসে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বাবা অধীর জোহরি জানান, কানহাইয়া হোসিয়ারি নামে একটি কাপড়ের কারখানা রয়েছে। এই কারখানার সমস্ত সামগ্রী সিউড়ি পরিবহনের মাধ্যমে পাঠানো হয়। শিবম সিউড়ি ট্রান্সপোর্টে ম্যানেজার ছিলেন। ৪-৫ দিন আগে পরিবহন গোডাউন থেকে ৫০-৬০ বান্ডিল কাপড় চুরি হয়। তারা এর জন্য আমার ছেলে এবং কোম্পানির কয়েকজন কর্মচারীকে দায়ী করেছে। ছেলে জানিয়েছিল যে নীরজ ও বঙ্কিম তার বিরুদ্ধে জিনিসপত্র চুরির অভিযোগ করেছে।

সদর বাজার থানায় কানহাইয়া হোসিয়ারির মালিক নীরজ গুপ্ত এবং সিউড়ি ট্রান্সপোর্টের মালিক বঙ্কিম সুরি সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন অধীর জোহরি। বাবার অভিযোগ, এই লোকেরাই শিবমের বিরুদ্ধে পোশাক চুরির অভিযোগ এনেছিল। তাকে কাগজে কলমে চুরির কথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়। অস্বীকার করলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ডাক্তারদের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, শিবমের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং বৈদ্যুতিক পোড়া দাগ রয়েছে। শিবম আজিজগঞ্জের জোহরি চক এলাকার মহল্লায় থাকতেন। তিনি ৭ বছর ধরে সিউড়ি ওই পরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপক ছিলেন। বাবা অধীর জোহরির কথায়, মঙ্গলবার বিকেলে শিবম গোডাউনে যাওয়ার কথা বলে চলে গিয়েছিল। বলেন, নীরজ গুপ্ত ও বঙ্কিম সুরিকে জামা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছেন। এর পর সন্ধ্যায় ফোন আসে। জানানো হয়, শিবম মেডিকেল কলেজে ভর্তি। তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। সেখানে পৌঁছে দেখা যায় শিবম মারা গেছে। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শুধু তাই নয়, শরীরের অনেক জায়গায় পুড়ে গেছে। মনে হচ্ছিল তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। সারা শরীর কালো হয়ে গিয়েছিল।

শিবমের বাবা জানান, অনেক দিন ধরেই ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনছিলেন কোম্পানির মালিক কিন্তু, আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে জানতাম না। বাবা অধীর জোহরির মতে, ছেলের মৃত্যুর পর রাতেই থানায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, পুলিশ সদস্যরা মামলা নিতে দ্বিধা করেন। এরপর, এসপি সিটিতে যান। তাঁর নির্দেশে সিও সিটি ও ইনচার্জ অমিত পান্ডে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছান। সেখান থেকে ছেলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। সিও সিটি জানিয়েছেন, শিবমের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসেছে। এতে মারধোরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মারধোরের কারণে মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। গভীর রাতে গোডাউনে তল্লাশি চালান এসপি। তিনি বলেন, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ক্লু পাওয়া গেছে, বিষয়টির অগ্রগতি দেখে মঙ্গলবার রাতেই মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছেছেন এসপি এস আনন্দও। মেডিক্যাল কলেজ থেকে সরাসরি কানহাইয়া হোসিয়ারিতে পৌঁছে যান তিনি। সেখানে গোডাউনে অভিযান চালান। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এ বিষয়ে এসপি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ক্লু রয়েছে। তার তদন্ত করা হচ্ছে। কোনো অপরাধীই রেহাই পাবে না।

এদিকে, বুধবার ওই ম্যানেজারকে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে শিবমকে লোহার খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেখানে অনেক লোকজন আছে। শিবমের অবস্থা ততক্ষণে শোচনীয়। মৃতপ্রায় অবস্থায় তাঁকে একটি স্তম্ভের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে তাঁকে ইতিমধ্যেই মারধর করা হয়েছে। শিবম অর্ধমৃত অবস্থায় থাকার পরও মারধর চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক ব্যাক্তি নির্দয়ভাবে শিবমের শরীর ও মাথায় রড দিয়ে আঘাত করছে। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর কোম্পানির এমন অনেক কর্মীরা এগিয়ে আসেন, যাদের সঙ্গে এধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, শিবমকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে তাঁরাও লোকেরা উপস্থিত ছিলেন। কাপড় চুরির সন্দেহে তাঁদেরও মারধর করা হয়।

Related Articles

Back to top button
error: