রাজ্য

“আইনের শাসন নেই , আছে শাসকের আইন” ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রিপোর্ট পেশ, রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে রীতিমতো রাজ্যের সমালোচনা করল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে,”পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। আছে শাসকের আইন।” ভোট পরবর্তী অশান্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে এই ভাষাতেই রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে।

পাশাপাশি ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশও করেছে কমিশন। এমনকি রাজ্যের বাইরে ট্রায়ালের পক্ষেও সওয়াল করা হয়েছে। ছত্রে ছত্রে রাজ্য সরকারের সমালোচনা। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এই রিপোর্ট জমা দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি। ভোট পরবর্তী অশান্তির প্রেক্ষিতে জেলায় জেলায় গিয়ে কমিটির সদস্যদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা নথিবদ্ধ করা হয়েছে নথিতে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘প্রতিশোধমূলক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। প্রধান বিরোধী দলকে যাঁরা ভোট দেওয়া বা সমর্থন করার সাহস দেখিয়েছিলেন, তাঁরা হিংসার শিকার হয়েছেন। অত্যাচার এবং আতঙ্কে ক্ষতিগ্রস্তরা অসহায় এবং আশাহীন হয়ে পড়েছিলেন।’ কমিশনের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যে যেভাবে হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবিকায়। হিংসার জেরে অসংখ্য মানুষ এখনও বাড়ি ছাড়া হয়ে আছেন। ভয়ে মানুষ মুখ খুলতে পারছেন না।

এতে আরও দাবি করা হয়েছে, এত হিংসাত্মক ঘটনার পরও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি রাজ্য সরকারের চরম উদাসীনতা প্রতিফলিত হয়েছে। রিপোর্টে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে প্রধান বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর প্রতিশোধমূলক হিংসা চালিয়েছে শাসকদল।
যদিও বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বিরোধীদলের প্রতি আক্রমণের যে অভিযোগ এসেছিল, সেগুলি নিয়ে আলোচনা খুবই কম।

ভোট-পরবর্তী হিংসার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গরিব এবং সাধারণ মানুষ পুলিশে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। প্রায় সকল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষই তদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন যে পুলিশকে ফোন করে পাওয়া যায়নি বা ঘটনাস্থলে এলেও নেহাত দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়েছিল পুলিশ। তখন গুন্ডারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হিংসা চালিয়ে যেত।’ সঙ্গে বলা হয়েছে, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলায় রুজু করেছে পুলিশ অথবা অভিযুক্তদের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে উলটে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের দায়ের করা মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের দায়ের করা মামলায় কিছু করেনি।’

৫০ পাতার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে জমা পড়া রিপোর্টে, কোনও স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্ত করানোর সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সেক্ষেত্রে সরাসরি CBI তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেছে তাঁরা। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, আদালতের পর্যবেক্ষণ তদন্ত করা হোক। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সুরক্ষা দিতে হবে সাক্ষীদের। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্যের বন্দোবস্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। মামলায় বিশেষ সরকারি আইনজীবী নিযুক্ত করতে হবে বলেছে।

‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির…’-রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন উল্লেখ করে কমিশনের অভিযোগ, ২ মে ফল ঘোষণার পর থেকে এ রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। রবীন্দ্রনাথের মাটিতে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। শেষ দু’মাসে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে। বিধানসভার ফল ঘোষণার পর থেকে এ রাজ্যে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যা, এই মাটির সম্মান নষ্ট করেছে।

রিপোর্ট নিয়ে বৃহস্পতিবার কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই কোনও মন্তব্য করবেন না। সেইসঙ্গে স্পষ্ট করে দেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা যখন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন হিংসার ঘটনা ঘটছিল।

অন্যদিকে রিপোর্টে নাম রয়েছে ক্যানিংয়ের তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লার। এনিয়ে কমিশনকে ‘বিজেপির দালাল’ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, কমিশনের ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’-র তালিকায় নাম রয়েছে শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর। রয়েছেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তৃণমূল নেতা পার্থ ভৌমিক, বিধায়ক খোকন দাস, প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ, কাউন্সিলর জীবন সাহা, নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এজেন্ট থাকা শেখ সুফিয়ান এবং ক্যানিংয়ের তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লা। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে ওই তালিকায়।

Related Articles

Back to top button
error: