HighlightNewsরাজ্য

এবার হিজাব বিতর্কের উত্তাপ বাংলাতেও, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শিক্ষার্থীদের

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: হিজাব বিতর্ক এবার আছড়ে পড়ছে কলকাতায় অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বিএসসি নার্সিং বিভাগে ১০ জন ছাত্রীকে মস্তক আবৃত করে হিজাব পরার অপরাধে ‘অ্যাবসেন্ট’ বা অনুপস্থিত মার্ক করা হয়েছে মঙ্গলবার। করেছেন নার্সিং বিভাগে কো-অর্ডিনেটর মৌমিতা বিষ্ণু রায়। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং বিভাগের হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট (এইচওডি) ঊষা মল্লিকের সম্মতিতে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নার্সিং বিভাগের ছাত্রীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে যে, তাদের মনে রাখতে হবে, ধর্ম থেকে কর্ম বড়। নার্সিংয়ের মেয়েদের বলা হয়, তারা যদি একান্তই হিজাব পরতে চায়, তাহলে ক্লাসে আসতে হবে গলা থেকে বাকি অংশ অ্যাপ্রনের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে হবে।

নির্দেশ অমান্য করলে নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। প্রয়োজনে পরীক্ষার সময় দেখে নেওয়া হবে বলেও নার্সিং ছাত্রীদের লক্ষ্য করে মন্তব্য করা হয়। দু-একজন ছাত্রী তাদের শিক্ষিকাদের বলেন, তারা ফ্যাশন করার জন্য হিজাব পরে না। বরং পরেন তাঁদের ধর্মীয় অনুভূতি এবং পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী। পবিত্র কুরআনে হিজাব দ্বারা বুক ঢাকতে বলা হয়েছে। হিজাব অ্যাপ্রনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে তাতে তাদের হিজাব পরার উদ্দেশ্য পালিত হয় না। তাঁরা বিকল্প প্রস্তাব দেন, তাঁরা বরং সেপ্টিপিন দিয়ে হিজাব অ্যাপ্রনের উপর আটকে রাখবেন। কিন্তু এসব কথায় কো-অর্ডিনেটর মৌমিতা বিষ্ণু রায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক ছাত্রীকে বলেন, “আমি এখন তোমার বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারি।” এই সবই হচ্ছে নার্সিং ছাত্রীদের অভিযোগ। কেন একজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেননি। এরপর বুধবার ক্ষুদ্ধ ছাত্রীরা তাদের অভিযোগ নিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ডেপুটি রেজিস্টারকে এক পত্রে অভিযোগ জানান। তাঁরা ডেপুটি রেজিস্টার ড. আসফাক আলি সাহেবের অফিসে এসে ক্ষোভ জানান। এ সময় আসফাক আলি সাহেবের চেম্বারে উপস্থিত ছিলেন নার্সিং বিভাগের এইচওডি ঊষা মল্লিক। শেষপর্যন্ত স্থির হয়, ছাত্রীরা সার্জিক্যাল অ্যাপ্রন ক্যাপ ব্যবহার করবেন এবং প্রয়োজনে অ্যাপ্রনের উপর সেপ্টিপিন আটকে হিজাব পরবেন। ছাত্রীরা ‘পুবের কলম-এর প্রতিবেদককে জানান, তাদেরকে শিক্ষিকারা প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে রাখেন এবং প্রায় তাঁদের হিজাব নিয়ে অপ্রত্যক্ষভাবে নেতিবাচক কথা বলেন।

তাঁদের মধ্যে একজন ছাত্রী কেঁদে বলেন, “আমরা পড়তে এসেছি। কিন্তু যেভাবে আমাদের হেনস্থা করা হয়, তাতে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি।” তাদের আরও অভিযোগ কো-অর্ডিনেটর এক ছাত্রীকে সরাসরি বলেন, ‘তোমার মানসিক সমস্যা রয়েছে।’ এ কথা সত্য যে, আলিয়ার নার্সিংয়ের মেয়েরা চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে প্র্যাক্টিকেলের ক্লাস করে থাকেন। তাঁদের একদিন বলা হয়েছিল, তাঁরা যেন লেবার রুম ও অপারেশন থিয়েটারে হিজাব পরে না আসেন। ছাত্রীরা বলেন, “আমরা বিষয়টির সমাধান করে নিয়েছিলাম এবং যাতে হাইজিন নিয়ে কোনও অসুবিধা না হয় সেই ভাবে মেডিক্যাল কলেজে যাচ্ছিলাম। এ নিয়ে চিত্তরঞ্জনে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু আলিয়ার নার্সিং বিভাগের কিছু শিক্ষিকা বিষয়টি ভুলতে পারেননি। তাঁরা হিজাব পরা ছাত্রীদের প্রবল চাপের মধ্যে রাখেন। মাঝেমধ্যেই এমন সব মন্তব্য করেন, যাতে নার্সিংয়ের ছাত্রীরা হতাশ হয়ে পড়েন।”

কর্নাটকে হিজাব পরা নিয়ে মুসলিম মেয়েরা প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের মামলাটি শীর্ষকোর্টেও পৌঁছেছে। কিন্তু আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মুসলিম মেয়েরা বহু স্বপ্ন নিয়ে পড়তে এসেছেন, তাঁদের এমন অবস্থায় পড়তে হবে সেটা ভাবিনি, বললেন একজন অভিভাবক। আর সবথেকে বড় কথা, যাদের অনুপস্থিত করা হয়েছে, তাদেরকে আবারও ছুটির দিনে উপস্থিত থেকে ডিউটি করতে হবে, নইলে নম্বর কাটা যাবে বা শৃঙ্খলার ক্ষতি হবে, এ কথাও জানালেন কিছু ছাত্রী। সূত্র- পুবের কলম পত্রিকা

Related Articles

Back to top button
error: