HighlightNewsদেশ

চাল চুরি করার অভিযোগে খুন আদিবাসী যুবককে: কেরালার বিশেষ আদালতের রায় ৫ বছর পর; দোষী সাব্যস্ত ১৪ জন, আগামীকাল শাস্তি ঘোষণা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: কথায় বলে মানুষের বাঁচার জন্য প্রয়োজন হয় তিনটি মূল জিনিসের। সেগুলি হল অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থান। সেই মূল প্রয়োজনের জিনিসের মধ্যে একটি অর্থাৎ অন্ন মানে, ভাত বা, চাল চুরি করার অভিযোগে খুন হতে হয়েছিল আদিবাসী যুবক মধুকে। এই মর্মান্তিক ঘটনা বেশিদিনের পুরনো নয়। পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঘটে এই ঘটনাটি। মধুর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায় যে, অভ্যন্তরীণ আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

২০১৮ সালের ওই দিন কেরালার পালাক্কাডের কাছে আট্টাপ্পাডিতে চাল চুরি করার জন্য একদল ক্ষিপ্ত জনতার হাতে মরতে হয়েছিল আদিবাসী যুবক মধুকে। ২৭ বছর বয়সী মধুকে লাঠি ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ আহত মধুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি তাকে। মৃত্যু হয় তার। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর কেরালা পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। এর মধ্যে ১৪ অভিযুক্তকে বুধবার মানারক্কাদের বিশেষ আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। এই ঘটনায় খালাস পেয়েছেন ২ জন। আগামী ৫ এপ্রিল সকল দোষীর শাস্তি ঘোষণা করা হবে।

মধুর মৃত্যুর চার বছর পর ২০২২ সালের জুন থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হয় এবং প্রায় ১২২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে, মামলা চলাকালীন দুই আইনজীবী মামলা ছেড়ে চলে যাওয়ায়, দীর্ঘ সময় ধরে এই মামলা চলে। মান্নারক্কাদ আদালত এই মামলায় সাক্ষ্য হিসেবে অভিযুক্তের সেলফিকে বেছে নিয়েছে। আদালত হোসেন, মারাক্কর, শামসুদ্দিন, আবুবকর, সিদ্দিকী, উবায়েদ, নজীব, জাজুমান, সজীশ, সতীশ, সঞ্জীব, হরিশ, বিজু এবং মুনিরকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তবে অনিশ ও আবদুল করিমকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

কেরালা হাইকোর্ট এর আগে বেশ কয়েকটি শর্তে অভিযুক্তদের জামিন দিয়েছিল। তবে, অভিযুক্তদের নির্দেশে বেশ কয়েকজন সাক্ষী নিজেদের সাক্ষ্য বদলালে জামিন বাতিল করে বিশেষ আদালত। হাইকোর্ট ২০২২ সালে জামিন বাতিলের বিষয়টিও বহাল রাখে।

প্রয়াত মধুর পরিবারে এখন শুধুমাত্র তার মা মল্লিকা এবং দুই বোন সরসু এবং চন্দ্রিকা রয়েছে। পাঁচ বছর আগে কেরালার পালাক্কাড জেলায়, ২৭ বছর বয়সী চিন্দাক্কি উপজাতির আদিবাসী যুবক মধুকে কিছু লোক জঙ্গল থেকে নিয়ে এসে হাত-পা বেঁধে মারধর শুরু করে। ঘটনার সময় কয়েকজনকে সেলফি তুলতেও দেখা গেছে। এরপর তাকে আধমরা অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ মধুকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। পুলিশের মতে, মধু মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। মাঝে মাঝে জঙ্গল থেকে শহরাঞ্চলে আসত।

মধুর অবস্থা দেখে অনুমান করা হয়েছিল যে, সে গত কয়েকদিন ধরে ক্ষুধার্ত ছিল। সেজন্য সে জঙ্গল থেকে শহরে এসেছিল। ক্ষুধার জ্বালায় ভাত ও কিছু খাবার চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। আর তাই ছিল তার চরম অপরাধ। সেই অপরাধের মাসুল তাকে দিতে হয়েছিল নিজের প্রাণ দিয়ে।

Related Articles

Back to top button
error: