রাজ্য

মুকুলের তৃণমূলে ফিরে আসা ও ত্রিপুরায় শুদ্ধিকরণ

টিডিএন বাংলা ডেস্কঃ আজকাল চায়ের আসরে একমাত্র আড্ডার আলোচ্য বিষয় হল মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফিরে আসা। কেউ বলছে নেওয়া উচিত হয়নি। আবার কেউ বলছে কোন অসুবিধা নেই। রাজনীতিতে কোনো বাধা নেই। তাছাড়া নেতাদের তো কোন লজ্জা নেই। এইসব কথা আপনি রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে হোক বা মধ্যবিত্তের ডাইনিং এ, প্রায় শুনতে পাবেন। কিন্ত একটু যুক্তি দিয়ে বিচার করা যাক। মুকুলের একুল সেকুল আবার তৃণমূল করার পিছনে গণিত টা কোথায়? মুকুলকে দলে নেওয়াতো হলো। তা আবার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জীর হাত ধরে, মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতে। তার অনেক কারণ আছে। সাংবাদিক সম্মেলনটা যদি কেউ একটু ভালো করে লক্ষ্য করেন তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছেন এক প্রশ্নের উত্তরে মমতা ব্যানার্জির সটান উত্তর। আমি কোন মিডিয়াকে সন্তুষ্ট করার জন্য উত্তর দেবো না। সেইজন্য আমি এখানে আসিনি। মুকুল ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছ ব্যাস এই টুকুই ? এতটাই সহজ এই অংক। যত দিন যাচ্ছে ততই পাকা রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন সর্বভারতীয় স্তরে।

একটু ভাবুন ২০১৭ সালে যখন মুকুল রায় চলে যায় তখন তৃণমূলের মধ্যে অনেক উইকেটের পতন হয়েছিল নিঃশব্দে। ভোটের আগে যে দলবদল ঘটেছিল সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেক আগে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরায় ঘটেছিল সেই নির্ঘণ্ট। তখনকার সময়ে প্রাক্তন কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে সুদীপ রায় বর্মন এসেছিল তৃণমূলে মুকুল রায়ের হাত ধরে। যার ফলে সুদীপ রায় বর্মন হয়েছিল ত্রিপুরায় বিরোধী দলনেতা। মুকুল তৃণমূল ছাড়ার পর আবার সুদীপ রায় বর্মন চলে গেলেন তারই সঙ্গে বি জে পি তে। ফলে ত্রিপুরায় বিজেপির হাত হয়ে গেল শক্ত। ক্ষমতা দখল করল বিজেপি। শুধু ত্রিপুরায় নয়, মুকুলের তৈরি করা সংগঠনের বলে বলিয়ান হল বিজেপি। আসাম মনিপুর অরুণাচল প্রদেশে তৃণমূলের তৈরি করা সংগঠন হয়ে গেল বিজেপির।

মুকুল বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ায় তার ভারতীয় রাজনীতিতে একটা পরিচিতি ঘটেছে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে হারানো সংগঠন ফিরে পাওয়ার চেষ্টা তৃণমূল করবেনা তা কেমন করে হবে। অভিষেক ব্যানার্জীর কথা মনে আছে? “আমরা কোন রাজ্যে কেবল উপস্থিতির জন্য যাব না। যেখানেই যাব জেতার জন্য যাব। “তার এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাকে সফল করতে হলে মুকুল রায়ের মতো পোড় খাওয়া একজন সেনাপতি তার দরকার।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন মুকুলের মতো একজন হেভিওয়েট নেতাকে দলে নেওয়া মানে কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর মতবিরোধ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তিনি আলাদা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারেন‍। এবং তার ফলে দলে ভাঙন অনিবার্য হতে পারে৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি। দলের মধ্যে সাংগঠনিক ক্ষমতার জন্য মুকুলের কার্যকারিতা অনেক কিন্তু দলের বাইরে সাধারণের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা একদম নেই বললেই চলে। তাই তিনি কখনও এককভাবে নেতা হয়ে উঠতে পারবেন না। তৃণমূলের এখন একমাত্র লক্ষ্য, সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল সুপ্রিমোকে তুলে ধরা। জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে তিনি এখন দ্বিতীয় স্থানে আছেন। তাই তার প্রধান সেনাপতি প্রশান্ত কিশোর যেমন বিরোধী দলনেতাদের নিজ নিজ রাজ্যে ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছেন ঠিক তেমনি তৃণমূলকে তার ক্ষমতার প্রসার, প্রচার ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করাচ্ছেন। এই আঙ্গিকে দেখতে গেলে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরা হচ্ছে পাখির চোখ। বর্তমানে ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরে যে চাপা বিরোধ চলছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরায় দলের সংগঠন বাড়াতে চাইছে তৃণমূল। তাই মুকুলকে ত্রিপুরার দায়িত্ব দিলে একদিকে যেমন কার্যসিদ্ধি হবে। অন্যদিকে এই পরীক্ষায় মুকুল সফল হতে পারলে তার শুদ্ধিকরণ হয়ে যাবে। আর এই ভাবেই হবে সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির পথ প্রশস্ত। বাড়বে গ্রহন যোগ্যতা। এখন শুধু দেখার পালা ত্রিপুরায় ঘাস ফুল কবে ফোটে।

Related Articles

Back to top button
error: