রাজ্য

বর্ষায় ধসেছে মাটির দেওয়াল, ২০ বছর ধরে একটা পাকা ঘর চাইছেন অন্ত্যদয় যোজনাভুক্ত লছিমুদ্দিন

রেবাউল মন্ডল, টিডিএন বাংলা, করিমপুর: মাটির মেঝেতে পেতে রাখা ছোট ছোট ঘটি বাটি। নড়বড়ে পাটকাটির বেড়া আর টালির চাল। বর্ষা এলেই চালের ফুটো দিয়ে পড়ে জল। চলতি বর্ষায় ধসে গেছে মাটির দেওয়াল। কংগ্রেস আমল গেছে, বাম জামানা গেছে। প্রতিশ্রুতি মিলেছে বহু। কিন্তু আজও ঘরের দুর্দশা ঘোচেনি নদিয়ার করিমপুর-২ ব্লকের দোগাছি মিয়া পাড়ার লছিমদ্দিন সেখ এর। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি। তবুও সরকারি একটা আবাস তার কপালে জুটল না বলে অভিযোগ।

এদিকে টানা বর্ষায় মাটির দেওয়ালের পিছনের অংশ পড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বিপত্তি। এখন কোথায় থাকবেন? কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না বছর ছেষট্টির ওই অসহায় বৃদ্ধ। এখন তিনি শুধু সূর্যের পানে চেয়ে আছেন কখন রোদ উঠবে ভেজা কাঁথা কাপড় গুলি একটু শুকিয়ে নেবেন।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, গ্রামবাসীর সহায়তায় সাত মেয়ের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু ওদের যখন একসঙ্গে দশ সদস্যের সংসার ছিল আতঙ্কে কেটেছে কত কালবৈশাখীর রাত। চোখের নোনা জলে কেটেছে কত বিনিদ্র রাত। লছিমদ্দিন বলছেন, ঝড় বৃষ্টি হলে পলিথিন টাঙিয়ে ছেলেমেয়েদের বুকে আগলে রাতের পর রাত বসে কাটাতে হয়েছে ঘরের কোণে।

ঘর কবে হবে? এভাবে ঝড় বৃষ্টির সাথে লড়াই করেই কি কাটবে সারাটা জীবন? সেই চিন্তায় গত হয়েছেন স্ত্রী। কিন্তু সাত সাতটি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর লছিমদ্দিনের বর্তমান যে দৈন্যদশা পাকা বাড়ি তৈরি তো দূর অস্ত এখন ভেঙে পড়া দেওয়ালটি কিভাবে খাড়া করবেন সেই চিন্তায় ঘুম ছুটছে তার।

জনপ্রতিনিধিদের লিখিতভাবে ঘরের আবেদন করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। লছিমদ্দিন বলছেন, বারবার বলে বলে হাঁপিয়ে গিয়েছি।

কিন্তু তিনি শুনেছিলেন সরকার নাকি অসহায়দের পাশে দাঁড়ায়। অন্ত্যদয় যোজনাভুক্ত হওয়ায় তার আশা ছিল আর কেউ পাক বা না পাক অন্তত তিনি একটি ঘর পাবেন।

কিন্তু বছরের পর বছর কেটেছে, পরিবর্তন হয়েছে ঋতুর, সরকার পাল্টেছে কিন্তু অসহায় বৃদ্ধ লছিমদ্দিনের আজও ঘরটি হয়নি। পাড়াপ্রতিবেশীরা চাইছেন ওই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াক সরকার।

প্রতিবেশী কহর আলী সেখ এর প্রশ্ন, ওরা সত্যিই গরিব। বিশ বছর থেকে দেখছি ওর ঘরের ওই হাল। যাদের পাকা বাড়ি তারা যদি সরকারী ঘর পায় তাহলে এই লোকটা পাবে না কেন?

একমাত্র ছেলে মিনারুল ইসলাম আক্ষেপের সুরে বলছিলেন, ‘এবারের ভোটে আমি তৃণমূলের এজেন্ট ছিলাম। বহু বছর ধরে বাবার ঘরের জন্য চেষ্টা করছি। আমার মা ঘর ঘর করেই মারা গেছে। সকলকে বলেছি। কিন্তু হল কই!’

এব্যাপারে করিমপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজু মল্লিক বলেন, ‘বিধিনিষেধ কেটে গিয়ে অফিস চালু হলে বিষয়টি দেখা হবে।’ করিমপুর-২ ব্লকের বিডিও সামসুজ্জামান বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

Related Articles

Back to top button
error: