HighlightNewsআন্তর্জাতিক

ইসরায়েল, ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকার অস্ত্র বাজার চাঙ্গা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়, এই প্রবচনটি যুগে যুগে প্রযোজ্য। যেকোন যুদ্ধে সাধারণত নিরীহ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে এই যুদ্ধকে হাতিয়ার করে অস্ত্র ব্যবসা করে রাষ্ট্র।

গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে আমেরিকা যুক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা কোম্পানি ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সামরিক সরঞ্জাম কেনা বাড়িয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে মস্কোর সম্ভাব্য আগ্রাসনের আশঙ্কায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নিজেদের অস্ত্রে সজ্জিত করছে। যুক্তরাষ্ট্র যেসব সরঞ্জাম কিনছে, তার একটা অংশ পাঠানো হচ্ছে ইউক্রেনে।

খবরে প্রকাশ, ইউক্রেনে সরাসরি অস্ত্র সরঞ্জাম পাঠানো অথবা ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্রের ঘাটতি পূরণ করার লক্ষ্যে দেওয়া ক্রয়াদেশের চুক্তি গত বছরে স্বাক্ষর করা হয়েছে। ফলে বড় বড় প্রতিরক্ষা কোম্পানির জন্য অর্থ আসতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনে লকহিড, জেনারেল ডাইনামিকস ও আরটিএক্স সবাই জানিয়েছে যে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আয় করেছে তারা।

বড় বড় প্রতিরক্ষা কোম্পানির নির্বাহীরা আশা করছেন যে ইউক্রেনে যুদ্ধ ও হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত অদূর ভবিষ্যতে অস্ত্রের চাহিদা আরও বাড়াবে।

জেনারেল ডাইনামিকসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জেসন আইকেন বুধবারে ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকদের এক আলোচনায় বলেন, ‘আমরা আগে প্রতি মাসে ১৪ হাজার আর্টিলারি গোলা তৈরি করতাম। সেখান থেকে আমরা দ্রুতই ২০ হাজার গোলার পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এখন আমরা উৎপাদনক্ষমতা ৮৫ হাজার রাউন্ডে নিতে চাই। এমনকি মাসে এক লাখ রাউন্ডও হতে পারে।’

জেসন আইকেন আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ইসরায়েলের পরিস্থিতি চাহিদা কেবল বাড়িয়েই তুলবে।’

জেনারেল ডাইনামিকসের কমব্যাট সিস্টেমস ইউনিট ইউক্রেনে ব্যবহার হয় এমন সাঁজোয়া যান, ট্যাংক ও গোলাবারুদ তৈরি করে। এই ইউনিটের আয় এক বছর আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বজুড়েই অস্ত্র বিক্রি বাড়ছে। সুইডেনের সাব কোম্পানির অস্ত্র বিক্রি বাড়ার কারণে তারা তাদের পুরো বছরের বিক্রির পূর্বাভাস বাড়িয়ে দিয়েছে। জার্মানির রাইনমেটাল বলেছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদের চাহিদা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের মুনাফা বেড়েছে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০ অক্টোবর ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের নতুন তহবিলের চাহিদা জানিয়েছেন। এই অর্থ দিয়ে যে অস্ত্র কেনা হবে, তা যাবে ইউক্রেন, ইসরায়েল, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও সীমান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষা জোরদার করার কাজে। বাইডেন উল্লেখ করেন যে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র আরিজোনায়, আর গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবারুদ দেশের ১২টি রাজ্যে তৈরি করা হয়। এসব রাজ্যের অন্যতম পেনসিলভানিয়া, ওহাইয়ো ও টেক্সাস।

অনেকে মনে করেন, পৃথিবীর বড় ব্যবসা হলো অস্ত্রব্যবসা। আর যুদ্ধ হলেই জমজমাট অস্ত্র বিক্রি হয়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) নতুন তথ্যে দেখা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সরবরাহ ব্যবস্থায় কিঞ্চিৎ ভাটা পরলেও রমরমা হয়েছে অস্ত্র ব্যবসা। ২০২১ সালে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী বিশ্বের ১০০ বড় কোম্পানির বিক্রি ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। এই ১০০ প্রতিষ্ঠানের ৪০টিই যুক্তরাষ্ট্রের। অস্ত্র ব্যবসার অর্ধেকের বেশি তারা নিয়ন্ত্রণ করে।

এই মুহূর্তে বিশ্বে বৈধ অস্ত্র ব্যবসার মোট মূল্য ৫৯২ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বজুড়েই অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। ছোট বড় সব দেশ অস্ত্র কিনছে নিজেদের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। এসআইঅপিআরআই-এর এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ। যা ২০২১ সালে ১ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ হোক কিংবা ইসরাইল-হামাস, অস্ত্র ব্যবসায়ীরা সুযোগ খুঁজছে, মানুষের লাশের স্তূপ দেখতে চায় তারা, কেননা মানুষ মারার জন্যই তো অস্ত্র! মানুষকে ভয় দেখানোর জন্যই তো অস্ত্র! যার যত অস্ত্র আছে সেই নাকি শক্তিশালী রাষ্ট্র! এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা কবে শেষ হবে জানিনা, কবে পৃথিবী থেকে যুদ্ধ বিদায় নেবে তাও জানিনা। শুধু জানি, রোজ মানুষ মরছে, চোখের নোনা জলে তৈরি হচ্ছে এক একটা সাগর।

Related Articles

Back to top button
error: