নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা: সামনে ঈদ, কিন্তু তার আগেই বিষাদ মুর্শিদাবাদ জেলায়। গরীবের ঘরে সুখে সংসার করার বহু স্বপ্ন নিয়ে মন না চাইলেও সৌদি আরবে কাজে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফিরতে হল কফিন বন্দি হয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে ‘ বঞ্চিত ‘ মুর্শিদাবাদ জেলার খড়গ্রাম থানার অন্তর্গত ইন্দ্রাণী গ্রামে। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম ঝন্টু সেখ। তিনি দীর্ঘ দুই বৎসর ধরে সৌদি আরবের এক কোম্পানিতে কাজ করতেন। পরিবারে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
জানা গেছে, সৌদি আরবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর গত ১০ মার্চ ঝন্টু সেখ মদিনাতে মারা যান। ঝন্টু সেখের সাথে যারা কাজ করতেন তারা পরিবারের লোককে খবর দিলে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবার পরিজনেরা। শেষবারের মতো ঝন্টুর মুখ দেখতে চেয়েছিল পরিবার। কিন্তু কী করে বিদেশে থেকে মৃত দেহ আনা যাবে এই নিয়ে চিন্তায় তাদের দিন কাটছিল। এমতাবস্থায় ঝন্টু সেখের পরিবারের নিকট আত্মীয় জাবির সেখ প্রতিবেশী নীমগ্রাম বেলুড়ি হাই স্কুলের শিক্ষক মো: কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করেন। ঝন্টু সেখের নিকট আত্মীয় জাবির সেখ জানান, ‘কামাল হোসেন ও তার বন্ধুরা মিলে এর আগেও একটি মৃত দেহ সৌদি আরব থেকে এনেছিলেন এটা জানতাম। সেই জন্য আমি সরাসরি কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করি।’
কামাল হোসেন তার বন্ধু মাহবুব আলম ও সাবিনা খান কে বিষয় টা জানান। মাহবুব আলম মালদা সাহাবাজপুর আবাসিক মিশন চালান, সাথে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকেন। সাবিনা খান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চন্ডীপুর থানার অন্তর্গত চৌখালী গ্রামের একজন ব্যাবসায়ী ও সমাজসেবী। সাবিনা খান, মাহবুব আলম বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরবের দূতাবাস জেদ্দাতে যোগাযোগ করেন। দূতাবাস থেকে জানানো হয় কী কী কাগজপত্র লাগবে। যেহেতু এর আগে এইধরনের মৃত দেহ সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে সেহেতু পুরনো অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে এই মৃত দেহ কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন কামালরা।
কামাল হোসেন জানান ‘কাজটা মোটেই সহজ ছিল না, কিন্তু কঠিনও না। মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা থাকলে অন্তর থেকে করতে হয়। আন্তরিকতার সাথে কাজ করলেই সেই কাজে সফল হওয়া যায়। মৃতের পরিবারকে কথা দিয়েছিলাম সেই কথা রাখতে পেরেছি এটা আমাদের সৌভাগ্য।’ সাহাবাজপুর আবাসিক মিশনের কর্নধার মাহবুব আলম বলেন ‘দূতাবাসে যোগাযোগের পর আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়, এবং যেদ্দা তে ঝন্টু সেখ এর পাশের গ্রামের নীলচাদ সেখ প্রথম থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন। নীলচাদ সৌদি আরবে অন্য এক কোম্পানি তে কাজ করেন। যখন যা কাগজপত্র দূতাবাস চেয়েছে উনারা আমাদের জানিয়েছেন আমরা সেইসব রেডি করে দিয়েছি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চন্ডীপুর থানার অন্তর্গত চৌখালী গ্রামের ব্যাবসায়ী সাবিনা খান এর কথায় ‘সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সকলেরই কর্তব্য রয়েছে। তাই সকলের সামাজিকতা বজায় রাখতে হবে যাতে করে সমাজ সুন্দর সুষ্ঠু থাকে। জেদ্দাতে ঝন্টু সেখের মৃত দেহ ফিরিয়ে আনার জন্য দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাস থেকেই নীলচাদ এর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। নীলচাদ ও দূতাবাসে গিয়েছিলেন। আমাদের পুরো সহযোগিতা করেছে কনস্যুলেট জেনারেল অফ ইন্ডিয়া জেদ্দা এবং ওখানে উপস্থিত নীলচাদ শেখ ও সুরজ শেখ।
অবশেষে সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে ঝন্টুর মৃত দেহ এসে পৌঁছায়। বাড়ি তে যখন মৃত দেহ এলো তখন গ্রামের লোকজন ভীড় করে। তারপর হল জানাজা, চির বিদায় জানালো পরিবার। ঝন্টু সেখের ভাই রমজান সেখ জানান ‘ আমরা হতাশাগ্রস্ত ছিলাম, ভাই এর জানাজা পড়তে পারবো কি না, ভাই কে দেশের মাটিতে দাফন করা হবে কি না? কামাল হোসেন, মাহবুব আলম, সাবিনা খান, নীলচাদ এদের প্রচেষ্টায় আমার ভাইয়ের মৃত দেহ বাড়ি আনা হল। জানাজা ও দাফন হল। এদের টিমের সবাইকে আল্লাহ ভালো রাখুক। আমার ভাইকেও আল্লাহ জান্নাত দান করুন।