আন্তর্জাতিক

ফের শুরু হচ্ছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা কোভিড-১৯ এর টিকার ট্রায়াল আবার শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগে দেশটির এক রোগীর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার পর টিকার ট্রায়াল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
মঙ্গলবার অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, গবেষণা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল এবং তদন্ত করে দেখা হচ্ছিল যে ওই খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টিকার কারণে হয়েছে কিনা।
শনিবার, বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তারা ধারণা করছে যে টিকার পরীক্ষা অব্যাহত রাখা নিরাপদ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক ট্রায়াল আবার শুরুর এই খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন।
“এই স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত এটাই প্রমাণ করে যে আমরা সবসময়ই নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেবো। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই কেবল আমরা আমাদের বিজ্ঞানীদের কার্যকর টিকা আনার পক্ষে সমর্থন দেবো।”

এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বলে যে, এ ধরণের বড় মাপের ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কিছু অংশগ্রহণকারী অসুস্থ হয়ে পড়বে বলেই ধরে নেয়া হয়।
যুক্তরাজ্যের মেডিসিন্স এন্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি এবং একটি স্বতন্ত্র রিভিউ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এখন থেকে এই গবেষণা চলবে বলেও জানানো হয়।

গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এখনো রোগীদের অসুস্থতা সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলে যে, যুক্তরাজ্যের এই ট্রায়ালে এক রোগী ট্রান্সভার্স মেলাইটিস নামে এক ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগে মেরুদণ্ডে এক ধরণের প্রদাহের উপসর্গ দেখা দেয় যা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৮০টি টিকার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তবে কোনটিই এখনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে পারেনি। আশা করা হচ্ছে যে এই টিকাটিই বাজারে সবার আগে আসবে। কারণ এরইমধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় সাফল্য এসেছে।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ হাজার অংশগ্রহণকারী ঠিক করা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে করা হয় এবং এতে বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে।
গত বুধবার সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্স ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অক্সফোর্ডের ট্রায়ালে যে বিষয়টি ঘটেছে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

“নিয়ন্ত্রণ হারানোর” ঝুঁকি

সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাদের গ্রুপ সেইজ এর এক সদস্য অধ্যাপক স্যার মার্ক ওয়ালপোর্ট সতর্ক করেন যে, যুক্তরাজ্য ভাইরাসের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এমন সতর্কতার পর পরই এই খবর আসে।
তিনি বলেন: “ফ্রান্স এবং স্পেনে কি হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য চ্যানেলে চোখ রাখলেই হবে।”

শনিবার প্রকাশিত সরকারি হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে আরো ৩,৪৯৭ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর ফলে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটিতে তিন হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো।
এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৬৫,১৭৪ জনে। এরমধ্যে সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯ এ প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১,৬২৩ জনে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস মহামারি আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গত মার্চ মাসের পর প্রথমবারের মতো ভাইরাসটির আর নম্বর বা রি-প্রোডাকশন রেট ১ থেকে ১.২ এ উঠেছে।
এরমধ্যে স্কটল্যান্ড সরকারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দৈনিক সংখ্যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২২১ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছে যা গত ৮ই মের পর থেকে সর্বোচ্চ। ওই দিন ২২৫ জনের মধ্যে শনাক্ত হয়েছিল।
সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার থেকে নতুন নিয়মকানুন যা “রুল অব সিক্স” নামে পরিচিত সেটি আবার কার্যকর করা হয়েছে।
ইংল্যান্ডে কাজে যাওয়া বা স্কুলে যাওয়া ছাড়া এক সাথে ৬ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এই নিয়ম মানবে না তারা জরিমানার মুখে পড়তে পারেন।
স্কটল্যান্ডে ঘরের ভেতরে কিংবা বাইরে ছয় জনের বেশি মানুষ এক সাথে হতে পারবে না। তবে এক্ষেত্রে পাশাপাশি বাড়ি দুটির মানুষ এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ছাড় দেয়া হবে।
ওয়েলসে সোমবার থেকে বাড়ির ভেতরে এক সাথে ছয় জনের বেশি জড়ো হওয়া বেআইনি। কিন্তু বাড়ির বাইরে ৩০ জন এক সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে।
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট এবং বেলিমিনায় সোমবার থেকে স্থানীয় বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোতে।
ওয়েলসে সোমবার থেকে ইনডোরে এক সাথে ৬ জনের বেশি জড়ো হওয়া বেআইনি। কিন্তু আউটডোরে এক সাথে ৩০ জন পর্যন্ত থাকতে পারবে।
সূত্র: বিবিসি

Related Articles

Back to top button
error: