মদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আজকের দিনেই খুন হয়েছিলেন হাজী আক্তার হোসেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, মুর্শিদাবাদ: আজ থেকে ঠিক সাত বছর আগে মদ বিরোধি আন্দোলন করতে গিয়ে সমাজবিরোধীদের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছিল মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ ব্লকের প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব হাজী আখতার হোসেনকে। এলাকায় মদের কারবার বন্ধ করার দাবি নিয়ে গন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়েই ২০১৩ সালের ১০ ই নভেম্বর অর্থাৎ ঠিক আজকের দিনে নিজ বাড়ি থেকে আট কিলোমিটার দুরত্বে নিজের ফার্মেসি থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাত দশটার সময় ৩৪ নং জাতীয় সড়কে খুন হতে হয় তাকে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৬ বছর। সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এভাবে তাদের প্রিয় নেতাকে খুন করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতা জাতীয় সড়ক অবরোধ করতে গিয়েও তাদের জেলের পিঁড়িতে যেতে হয়। আজ সেই প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের দীর্ঘ সাত বছর খুন অতিবাহিত হলেও আজও সেই খুনের রহস্য উন্মোচিত হয়নি।

উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ ব্লকের চাচন্ড গ্রামের এক প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন হাজী আক্তার হোসেন। ততকালিন সময়ে সকলের কাছে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত ছিলেন তিনি। নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও সমাজ সংস্কারে তার অবদান অনস্বীকার্য। গ্রামের মদ, জুয়া, অশ্লীলতা সহ সার্বিক অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে তার গনপ্রতিরোধে সামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সেসময় সমাজের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য তিনি এলাকার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের নিয়ে গ্রাম্য কমিটি গঠন করেন। তারই উদ্যোগে এলাকার মানুষ খুশি হয়েছিলেন। পিছিয়ে পড়া চাচন্ড এলাকাতে যেন শান্তির বাতাবরণ বইছিলো। সেসময় হঠাতই ৩৪ নং জাতীয় সড়কের পাশে মদ ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা গৃহীত হওয়ায়
ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন গ্রাম্য কমিটির নেতা হাজি আখতার হোসেন। গ্রামের মানুষকে নিয়ে তিনি মদের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। মদ ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে ব্লক অফিস থেকে শুরু করে জেলাশাসকের দপ্তর সর্বত্র চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ও চিঠি দেন হাজি আখতার। সেই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি জোরালো হতে দেখে সমাজবিরোধীরা আখতার হোসেনকে খুন করার চক্রান্তে মেতে উঠেন। সেই সময় ১০ ই নভেম্বর রাতে তারাপুরে থাকা নিজস্ব ফার্মেসি থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৩৪ নং জাতীয় সড়কে নৃশংস ভাবে খুন হন তিনি। পুলিশ আক্তার হোসেনের খুনকে একসিডেন্ট বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও মেনে নেয়নি আমজনতা। কে বা কারা খুন করেছে এই বিচার দাবি করে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ফেটে পড়েন হাজার হাজার জনতা। টানা তিনঘন্টা পর অবরোধ উঠলেও পুলিশ সেসময় ৪৪ জন সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও তাদের তিনমাস জেল খাটার পর মুক্তি দেওয়া হয় ।

সেই হাজী আক্তার খুনের আজ সাত বছর অতিবাহিত। আজও রহস্য উন্মোচিত হয়নি সেই খুনের। পরিবার কিংবা বিনাদোষে জেল খেটে আসা মানুষরাও পায়নি বিচার।