রাজ্য

প্রখ্যাত মুসলিম বুদ্ধিজীবী আবু রিদার সাক্ষাৎকার

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: একুশ শতকে দুই বাংলা থেকে ইসলামী ইতিহাস, সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে কে কাজ করেছেন জিজ্ঞেস করলে যার নাম প্রথমেই আসে তিনি আবু রিদা। তালীম প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করে প্রায় ২০০ বেশির বই প্রকাশ করেছেন তিনি। সব বইগুলোই সমসাময়িক মুসলিম বিশ্ব এবং ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লেখা। তিনি চাইলে অন্যধারার বই লিখে সার্বজনীন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারতেন, কিন্তু সেটা না করে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন মুসলিম দুনিয়া ও রাজনৈতিক ঘটনাবলীকে মলাটবন্দী করার কাজে। তাসলিমা নাসরিনকে মোক্ষম জবাব থেকে হাল আমলের মুখমন্ত্রীর কাজকে প্রশ্ন করেছেন তিনি। গোল্ড মেডেলিস্ট পাওয়া ছাত্র, পড়াশোনা শেষ না হতেই চাকরি, চাইলেই পারতেন অত্যন্ত আরামের জীবন পার করতে। কিন্তু সেটা না করে ঝুঁকি নিয়ে শুরু করলেন লেখার কাজ। আজ বাংলার প্রকাশনা জগতের কিংবদন্তী তিনি। তাঁর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় নিজাম পারভেজ।

প্রশ্ন: আপনার শৈশব কাল কেমন ছিলো?

আবু রিদাঃ শৈশবে আমি বেশ কল্পনা প্রবণ ছিলাম এবং শৈশবে সেই কল্পনার সময় অন্য ছেলেরা যখন খেলে বেড়াতো, আনন্দ করত তখন আমি আমার কল্পনা জগতে ডুবে থাকতাম। যেহেতু আমি একটু দূর্বলই ছিলাম ফলে আমি ততটা খেলতে পারতাম না। খেলাধুলা আমার জন্য সহজ ছিলো না। সেই জন্য খেলার সাথীরা আমাকে এড়িয়ে চলত। ফলে ঘরে বসে থাকতাম, ৮/১০ ঘন্টা করে পড়াশুনো করতাম যার ফলে শৈশবকালটায় আমার পড়াশোনার অভ্যাস তৈরী হচ্ছিলো। ক্লাস ফোর পড়াকালীন আমি বড় বড় গল্প মুখস্ত বলতে পারতাম। অংকে একশো তে একশো নম্বর পেতাম। এই রকম ভাবে আমার শৈশব কাল কেটেছে। কোন বেলাল্লাপনায় কাটেনি। নিয়ম মাফিক কেটেছে।

প্রশ্নঃ প্রাথমিক শিক্ষা এবং উচ্চ শিক্ষা কোথায় লাভ করেন?

আবু রিদাঃ আমি প্রাথমিক শিক্ষা আমার গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে করেছি। বলদে পোতা হাই স্কুল এবং সেই স্কুলের একজন মাস্টার খুবই ভালো ছিলেন। তিনি একদম পারসোনালি কেয়ার করতেন। এমনকি বড়লোক এর ছেলে, হিন্দু পরিবারের ছেলে, ব্যানার্জি পরিবারের ছেলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পড়াতেন টিউশন পড়ানোর মত। হাই স্কুল ওই পাশেই আমাদের বাড়ি থেকে ৫/৭ মিনিটের রাস্তা। তখন ছিলো ডাইরেক্ট হায়ার সেকেন্ডারি মানে ইলেভেন ক্লাস পর্যন্ত। ইলেভেন ফাইনাল। ইলেভেন ক্লাস পাশ করে আমি * কলেজে অনার্সে ভর্তি হই। অনার্সে আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হই। তারপর আমি কোলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই মাস্টার্সে। সেখানেও আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হই এবং গোল্ড মেডেল পাই।

প্রশ্নঃ পড়াশোনা শেষে চাকরি জীবনে কখন প্রবেশ করলেন?

আবু রিদাঃ চাকরি জীবনে আমি এক মাসও বসে ছিলাম না। মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর পরই চাকরি হয়ে যায়। পরীক্ষা দেওয়ার পরেই রেজাল্ট বেরোনোর আগে আমি এক মাসের জন্য দক্ষিণ ভারত ইউনিভার্সিটির টাকায় বেড়াতে যাই। আমাদের ট্যুরে কন্টাক্ট করা ছিলাম। আমি গ্রুপের লিডার ছিলাম। সেখান থেকে এসেই ওরা একটা ইন্টারভিউ নেয়। মুর্শিদাবাদ এর সাগরপাড়া হাই স্কুল ছিলো। বিরাট স্কুল। ছাত্র গিজগিজ করতো। সেই স্কুলে আমার চাকরি হয়। মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্টের আগেই চাকরি পেয়ে যাই। ১৯৭৪ সালে আমি আমার প্রথম চাকরি পাই।

প্রশ্নঃ আপনার বয়স কত ছিলো তখন?

আবু রিদাঃ এম এ পাশ করলে যেরকম বয়স হয় সেরকম।

প্রশ্নঃ আপনি তো অনেকবার স্কুল পরিবর্তন করেছেন। সেগুলো নিয়ে যদি বলেন একটু।

আবু রিদাঃ সাগরপাড়া হাই স্কুলে আমি ৩/৪ মাস ছিলাম। ওটা ছিলো বর্ডার এরিয়া। আমার একটু অসুবিধাই হতো।

প্রশ্নঃ আপনার বাড়িও তো ছিল বর্ডার এরিয়ায়!

আবু রিদাঃ সেটা ঠিক। তবে সেই বর্ডার এরিয়া না। সাগর পাড়া যে এরিয়া একদম বর্ডারের কাছে। আর আমার তো বর্ডার থেকে ১২/১৩ কি.মি. দূরে। কিন্তু চোরাচালান অতটা হয়না এখানে।

প্রশ্ন-এখানে আপনাদের চেক পোস্ট ছিলো?

আবু রিদা-হ্যাঁ। মানে কোলকাতার কাছে চোরাচালান নেই। চেকপোস্ট আছে। কিন্তু সেখানে তো চোরাচালানের রমরমা।

প্রশ্নঃ সেটা ছাড়ার পর কোথায় জয়েন করেছিলেন? 

আবু রিদাঃ খড়গপুর হাই স্কুল। ওটা ছিলো খড়গপুর আলিয়া হাই স্কুল। হয়তো কোন লোকের নাম ছিলো আলিয়া। তিনি ওটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে আমি ২/৩ বছর চাকরি করি। তারপর আমি ইন্টারভিউ দিতে থাকি। ইন্টারভিউ দিতে দিতে পিএসসিতে সিলেকশন হলাম। পিএসসিতে নির্বাচিত হয়ে আমাকে নিয়োগ দিলো টাকি গভমেন্ট হাই স্কুলে। এখানে পার্টির আক্রমন নেই।

প্রশ্ন- তারপর চাকরি বদলে করলেন কবে?

আবু রিদাঃ কোথায় আর করবো। ওখানেই। গভমেন্ট চাকরি তো ভালো। এসব জায়গায় সেখানে তো পার্টির বিরাট প্রভাব। তোমাকে যদি পার্টি টার্গেট করে তো শেষ। তারপর ওই গভমেন্ট স্কুলে অনেক দিন চাকরি করেছি। তারপর ১৯৯১ সালে আমাকে টাকি গভমেন্ট হাইস্কুল থেকে হুগলি মাদ্রাসায় ট্রান্সফার করা হয়। সেকেন্ড ওল্ডেস্ট স্কুল ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল।

প্রশ্নঃ তার মানে হুগলি মাদ্রাসার ধ্বংস আপনার আমলেই শুরু হয়েছে?

আবু রিদাঃ ধ্বংস হয়েছে বলতে আমরা তো আন্দোলন করেছি এক নাগাড়ে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত ধ্বংস হয়নি। এক সময় সিপিএম বন্ধ করে দিচ্ছিলো। সিপিএমকে থামিয়ে দিয়েছিলাম বিরাট আন্দোলন করে। কিন্তু তৃণমূল তো কারোর কথা শুনবেনা। সেতো তার মত চলবে। অতএব তৃণমূল বন্ধ করে দিয়েই ছাড়লো। এত আন্দোলন করেছি। সেই সিদ্দিকুল্লাহ তখন তো তৃণমূল বিরোধী। তাকে নিয়েই গেলাম। সিদ্দিকুল্লাহ বললো যে, আমার নাম বলতে কোন অসুবিধা নেই, হুগলি মাদ্রাসার পর আর কোনায় আমি গোটা হুগলি বন্ধ করে দেবো। তার এক সপ্তাহ পরে বললো আবার প্রোগ্রাম হবে। তখন সিদ্দিকুল্লাহকে যখন ফোন করছি সে আর ফোন ধরে না। তার দুদিন পরে শুনলাম উনি তৃণমূল এ যোগ দিয়েছেন।

প্রশ্ন-আপনি কত সালে রিটায়ার করেছেন?

আবু রিদাঃ ২০১৬ সালে।

 

প্রশ্নঃ হুগলি মাদ্রাসায় কত বছর ছিলেন?

আবু রিদা-হুগলি তে ছিলাম কত পর্যন্ত তা খেয়াল পরছেনা তবে অনেক দিন ছিলাম।

প্রশ্ন- ১৯৯১ থেকে ২০১১/১২?

আবু রিদা-হুম। ওরকমই।

প্রশ্নঃ তারপর?

আবু রিদাঃ তারপর প্রমোশন পেয়ে হেড মাস্টার হয়েছি ক্যালকাটা মাদ্রাসার।

প্রশ্ন-ক্যালকাটা মাদ্রাসা থেকে আপনি রিটায়ার্ড করেন হেড মাস্টার হিসাবে?

আবু রিদা-হ্যা।

প্রশ্নঃ আপনি প্রকাশনা জগতে এলেন কিভাবে বা লিখালিখি কিভাবে শুরু হলো আপনার?

আবু রিদা-লেখালিখির ইচ্ছা ছিলোই। ওই যে বললাম কল্পনাপ্রবণ ছিলাম যে লেখালিখি করবো। এখন পরবর্তী কালে যখন আমি মানে লেখালিখিই করবো বলে মনস্থির করলাম তবুও আর একটু সময় নিলাম ভালো করে জানার জন্য। পড়াশুনো শুরু করলাম যেসব বিষয়ে লিখবো সেসব বিষয়ে আরো বেশি জ্ঞান অর্জিত হোক। তখন এই করতে করতে একটু দেরিই হয়ে যায় লেখা। আরো আগে থেকে ধরা উচিত ছিলো। ধরিনি ইচ্ছা করেই। কোন এক সময় আমিও ভাবলাম যে ধরে রাখতে পারবো। ১৯৯২ সাল তখন, বাবরি মসজিদ ভাঙলো একদিকে আর এক দিকে বসনিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষকে মারছে আর লক্ষ লক্ষ নারী কে ধর্ষন করছে। ওরা ওপেনলি ডিক্লেয়ার দিলো যে মুসলিমদের গর্ভে আমরা খ্রিস্টানদের বাচ্চা পয়দা করবো। তখন আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলাম না। তখন বসনিয়ার ওপরেই প্রথম বইটা লিখেছিলাম এবং সে বই এত চলে যে এক মাসে দু হাজার কপি শেষ হয়ে যায়।

প্রশ্ন-সে বই এর প্রকাশ কে করেছিলো?

আবু রিদা-আমি নিজেই?

প্রশ্নঃ- তার মানে আপনি প্রথম থেকেই নিজের বই প্রকাশ করেছেন?

আবু রিদাঃ হ্যা। নিজের বই নিজেই প্রকাশ করি। কারন আমি জানি আমার মত করে করবেনা কেউ। আমি যেভাবে করতে চাই সেভাবে তো করবেনা। হয়তো কোন একটা শব্দ পরিবর্তন করলো বা এখনকার যে সরকার আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করিনা। আমার পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কোন ব্যপার নেই। আমি যা লিখবো সেটা নির্ভুল ছাপতে হবে।

প্রশ্ন-এখোনো পর্যন্ত কতগুলো বই আপনি লিখেছেন ও প্রকাশ করেছেন?

আবু রিদা-এক্সাক্ট বলতে পারব না তবে ২০০ র মত বই। এখনও আমি লিখছি।

প্রশ্ন- ২০০ বইএর মধ্যে এমন কিছু বইএর নাম বলুন যেগুলো আপনার কাছে মনে হয় যে খুবই ভালো হয়েছে এবং ইফেক্ট পড়েছে সমাজে। আপনার সেরা ৫ বই এর নাম? 

আবু রিদাঃ তাহলে বলতে হয় রক্তাত বসনিয়া, স্বাধীনতার জেহাদে চেচনিয়া, তসলিমা নাসরিন; জীবন বোধ ও যৌন চেতনা, সমৃদ্ধ মুসলিম ভারত, বঞ্চিত শোষিত ব্রিটিশ ভারত এবং আরও অনেকগুলোই আছে।

প্রশ্ন-তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে কি বই লিখলেন?

আবু রিদা- তসলিমা নাসরিনের জীবন নিয়ে।

প্রশ্ন- তাতে কি ছিলো?

আবু রিদাঃ সেইসময় তসলিমাকে নিয়ে মুসলিমরা বিরাট হেনস্থার শিকার হতে হয়। এখন তো মুসলিমদের যতটা জোর তখন এতটাও জোর হয়নি। সেই মুহুর্তে তসলিমা আসলো। ও তখন এমনভাবে বই লিখে মুসলিমদের বিদ্রুপ করতো যে হিন্দুরা ওপেনলি রাস্তা ঘাটে বাসে মুসলমানদের বিদ্রুপ করতো। ওর একটা বই আমি পড়লাম। তখন দেখলাম ও যা লিখেছে সব ফলস কথা। আমি বই লিখে দেখিয়ে দিলাম যে ও বিকৃত কথা বলছে ভুলভাল কথা বলছে এবং ও খালি যৌনতায় বিশ্বাসী। যৌনতাই ওর কাছে মেইন বিষয়। তখন সেইসব বিষয় নিয়ে আমি একটা বই লিখলাম। দেখালাম যে ও কিভাবে প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য কে দেখাতে গিয়ে তসলিমা (সংস্কৃতের মহা পন্ডিত হলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য) সুকুমারী ভট্টাচার্যের বইটিকে হুবহু চুরী করছে। আমি তখন সুকুমারী ভাট্টাচার্যের বই থেকে একটা বাক্য আর ওর বই থেকে সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকে একটা বাক্য পাশাপাশি লিখে দেখিয়ে দিলাম যে চুরি টা কি রকম ভাবে করেছে? একদম পুকুর চুরি!

প্রশ্ন-কাজ করতে গিয়ে বাধা কখনো পেয়েছেন বা পেলে সেটা কি রকম বাধা?

আবু রিদাঃ তা তো পেয়েছি কাজ করতে গিয়ে।

প্রশ্ন-কারা বাধা দিয়েছে?

আবু রিদাঃ অনেকে তো এমনি বলতো। কিন্তু বড় বাধা পেয়েছিলাম যখন আফগানিস্তানে গন্ডগোল চলছে। আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন চালাচ্ছিলো। আমি আফগানিস্তানের ওপর একটা বই লিখেছিলাম। তখন প্রসঙ্গক্রমে লাদেনের প্রসঙ্গ এসে যায়। আসবে এটা স্বাভাবিক। কারণ লাদেন তখন মেইন চরিত্র। তখন আমার বই এর কভার পেজ টা নিয়ে বড় করে প্রথম পাতায় হেডিং দিলো প্রতিদিন। যে সরকারি বই মেলায় লাদেনের বই বিক্রি হচ্ছে। তখন হৈ চৈ পরে গেলো। সবাই বলছে কোথায় এসব হচ্ছে? এই দোকানে সেই দোকানে খোঁজ করছে। গোয়েন্দারা কি করছিলো জানিনা কিন্তু তারা কখনো আমার কাছে আসেনি। আমি যেখানে যাচ্ছি সবাই বলছে আপনার বই এর খোঁজ করতে এসেছিলো। মানে আমার লেখা বই আরো যেখানে যেখানে থাকে গেলেই বলতো যে আপনার বই এর খোঁজে এসেছিলো। এভাবে অনেক দিন গেছে। আরএসএস এর লোকেরা বাড়ি এসে বলছে যে এরকম যদি লেখে আমরা কিন্তু ওকে দুনিয়ায় রাখবো না। মার্ডার করে দেবো। মেয়েরা বলছে আব্বা আর লিখতে হবেনা। আমি বলি থামো তো। ওসব ছাড়ো।

প্রশ্নঃ বই লেখা ছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার আপনি নিয়মিত লিখতেন। আপনার লেখা যেখানে দিতেন তাদের থেকে কোন বাধা এসেছে বা কোনরকম সাপোর্ট পেয়েছেন?

আবু রিদাঃ সাপোর্ট বলতে সেরকম পাইনি। কেউ সাপোর্ট দিয়েছে কেউ দেয়নি। যখন ওই লাদেনের ব্যপারটা জানাজানি হলো,পেপার পত্রিকায় লেখালেখি হলো তখন নতুন গতি প্রথম পাতায় বড় বড় করে লিখে দিলো “তাকে আমি চিনিনা,ও আমার কাগজে লেখে না, ওর সাথে কোন রকম সম্পর্ক আমার নেইঃ। এই বলে ও বিবৃতি দিলো পেপারে।

প্রশ্নঃ কত দিন লিখেছেন আপনি নতুন গতিতে?

আবু রিদা -তাও ১২/১৩ বছর লিখেছি। তাও কি একটা লেখা নয়। তখন তো খুব বেশি লেখক ছিলো না। যখন ওর শুরু করে তখন ওর এক হাজার করে সার্কুলেশন ছিলো। আমি লেখার পর থেকে ওটা বেড়ে হয় এক বছরে পাঁচ হাজার এবং সেই ভাবেই চলছিলো। এবং লেখার জন্য কোনরকম সাম্মানিকও কখনও দেয়নি। আমি ছ টা ভাষা জানতাম। ছ টা ভাষার পেপার কিনতাম। আরবি আর ফার্সিটা পেতাম না। বাকি সব কটাই পেতাম। তো সব মিলিয়ে ১৫/১৬ টা কাগজের দাম কত! এত পড়াশোনা করে খাটাখাটি করে লেখা দিতাম কিন্তু কখনোই সে কোনরকম সাম্মানিক দেয়নি।

প্রশ্নঃ আপনাকে কোন টাকা পয়সাই দিতো না!

আবু রিদাঃ কখনোই না। উলটে ওকে আমি টিফিন খাওয়াতাম। কারন আমি জানতাম ও খাওয়াবে না।

প্রশ্ন-আপনি যেসব লিখেছেন বেশিরভাগই মুসলিম বিষয়ক লেখা। আপনি অন্য লেখায় গেলেন না কেন? আপনি ভালো লেখ, গল্প-উপন্যাস লিখতে পারতেন?

আবু রিদাঃ এটা একটা ভালো প্রশ্ন। এই প্রশ্ন টা অনেকেই করেছে আমাকে। হিন্দুরাও করেছে। কিন্তু আমি এই কারণেই লিখিনি যে আমি যেসব বিষয় নিয়ে লিখছি সেসব নিয়ে লেখার কেউ নেই। কারন মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে অন্যায় অত্যাচার চিরকালই হয়ে যাচ্ছে এই বিষয়ে কেউ লিখবেনা বা সত্যকে আরো বিকৃত করে লিখবে আরো অসত্য লিখবে। সত্য কেউ উন্মোচিত করবেনা। আমি মনে করলাম সত্য কে ধরে রাখা উচিত। এই যামানায় আমার বই বিক্রি হোক আর না হোক। পরবর্তীকালে এটা রেকর্ড হয়ে থাকবে এবং হয়েছেও তাই। শুধু তাই নয় বিক্রি শুধু হয়নি তা নয় বিশাল ভাবে বিক্রি হয়েছে। বসনিয়ার বই যখন বের করলাম তখন এক মাসে দু হাজার বই বিক্রি হয়েছে। তসলিমা নাসরিন টাও ওরকম সাতটা আটটা এডিশন হয়েছে। বসনিয়াও ওরকম ছটা সাতটা এডিশন হয়েছে। তো অনেক বই এর একাধিক এডিশন বের হয়েছে এখন পর্যন্ত।

প্রশ্নঃ সাম্প্রতিককালে কোন বই নিয়ে কাজ করছেন?

আবু রিদাঃ একটা বই নিয়ে আপাতত কাজ করছি সেটা অল্প কিছু এগিয়েছে। এখন আবার আমার ওই ডাইরিটা শেষ করে তারপর আবার ধরবো। আমার ডাইরিও খুব জনপ্রিয়। মানে না বার করলে হয়তো লোকে মারবে ধরে। এই ডাইরির কাজটা এখন করছি।

প্রশ্নঃ জীবনের এতটা সময় পার করে এসে আপনার জীবনের আক্ষেপ কি বলে মনে হয়? 

আবু রিদাঃ-আক্ষেপ কি? আক্ষেপ তো আমার নেই। হয়তো আমি যদি মুসলিম না হতাম বা আমি যদি এই ধরনের লেখা না লিখতাম তাহলে আমি হয়তো আরো বড় জায়গায় যেতাম। সেটা করিনি, কারণ আমি জানি সত্যকে আমার তুলে ধরতেই হবে। সেই সত্য কয়েকশো বছর টিকে থাকবে। কিয়ামাত পর্যন্ত টিকে থাকবে। এমন কিছু বই আছে যেমন বসনিয়া সম্পর্কে জানতে বাংলা ভাষায় আমার বই ছাড়া কোন উপায় নেই।

Related Articles

Back to top button
error: