নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদে এই প্রথম জাতীয় প্রেস দিবস পালন করল জামাআতে ইসলামী হিন্দ। বৃহস্পতিবার বহরমপুরের সাংবাদিক সংঘে এক মনোজ্ঞ আলোচনার মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়। জামাআতে ইসলামী হিন্দের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি সামসুল আলম বলেন, জীবিকা অর্জনের বিষয়তো থাকবে কিন্তু সত্যের পথে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে খবর পরিবেশন করতে হবে। এই কঠিন সময়েও সাহসের সঙ্গে একটি সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য সাংবাদিকদের কাজ করতে হবে।
জেলা জামাআতের মিডিয়া সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষায় উজ্জীবিত হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জেলায় এই প্রথম জাতীয় প্রেস দিবস পালিত হচ্ছে, মূলত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াতেই এই উদ্যোগ। জামায়াত সারা দেশে মিডিয়া ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে কাজ করছে। মুর্শিদাবাদেও এক গুচ্ছ লেখক তৈরি করা হয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকি।
সাংবাদিক আলমগির হোসেন আক্ষেপের সুরে বলেন, এক সময় গান্ধীজি,জওহরলাল নেহরু, কাজী নজরুলের মতো মানুষ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। আর এখন কর্পোরেট মালিক মিডিয়া চালাচ্ছে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
তিনি বলেন, মুসলিম সমাজে বহু শিল্পপতি আছেন, কিন্তু মিডিয়া খোলার ব্যাপারে কেউ এগিয়ে আসেননি। আমাদের ছেলেমেয়েদের ডাক্তার ইঞ্জনিয়ার বানাচ্ছি, সাংবাদিক, লেখক হতে উৎসাহ দিচ্ছি না। এই অবস্থায় সত্যের পক্ষে কে লিখবে? আমাদের দায়িত্ব বিকল্প মিডিয়া করা, সেটা মুসলিম ব্যাবসায়ীরা করছেন না। তবে জামাআতে ইসলামী হিন্দ মুর্শিদাবাদ জেলা যেভাবে সাংবাদিকদের জন্য ভাবছে সেটা কেউ ভাবেনি। অতীতে কোনও মুসলিম সংগঠন প্রেস ডে পালন করেছে বলে আমার জানা নেই।
দেশে বর্তমানে কিভাবে সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে সাংবাদিক মোকতার হোসেন মণ্ডল জানান, ১৮০ টি দেশের মধ্যে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারতবর্ষ বর্তমানে ১৬১ তম। শতশত সাংবাদিকের নামে মামলা চলছে। বহু সাংবাদিককে জেল খাটতে হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন তদন্তমূলক সাংবাদিকতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত, স্টিং অপারেশন হত, এখন সেইসব কমে গেছে। মূল ধারার মিডিয়া হাউজগুলি বড্ড অসহায়! একদিকে সরকারী নজরদারি আরেকদিকে বিজ্ঞাপনের বাধ্যবাধকতা, ধীরে ধীরে সংবাদ মাধ্যম তার দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে। দেশের মানুষ, নাগরিক সমাজ বলিষ্ঠ ভূমিকা না নিলে সমূহ বিপদ। সংবাদ মাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সেই সঙ্গে ঘৃণা ভাষণ, সাম্প্রদায়িক উস্কািমূলক খবর কড়া হাতে দমন করতে হবে।
সাংবাদিক সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য জামাআতের এই উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন। উপস্থিত ছিলেন লেখক ইমাম হোসেন সহ অনেকে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হেলালউদ্দিন আহমেদ।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সাল থেকে প্রতি বৎসর ১৬ নভেম্বর দেশজুড়ে জাতীয় প্রেস দিবস পালিত হয়। ভারতে প্রথম প্রেস কমিশনের সুপারিশে পার্লামেন্ট কর্তৃক ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই গঠিত হয় – ‘প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’। মূলত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংবাদের মান রক্ষা ও উন্নতি সাধনের লক্ষ্যেই গঠিত হয় ওই সংস্থা। সে বছর ১৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। তারপর থেকে প্রতি বছর দিনটি পালিত হচ্ছে।