HighlightNewsদেশ

কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কে মানতে নারাজ মুসলিম ছাত্রীরা, বাড়ছে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনকারীদের সংখ্যা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিজাবের ওপর সরকারের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাকে এদিন বহাল রাখে কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়। ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার কর্ণাটক উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ জানিয়েছে, হিজাব পরা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন নয়। তাই এক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার রক্ষাকবচ প্রযোজ্য নয়। একইসঙ্গে, স্কুল পরিচ্ছদের অঙ্গ হিসেবে হিজাব বা অন্য কোনো ধর্মীয় উত্তরীয় বা আবরণ নিষিদ্ধ করার কর্ণাটক সরকারের সিদ্ধান্তকেও পড়ুয়াদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হিসেবে দেখছে না উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের এই রায় ঘোষণা হওয়ার পর “দ্য কুইন্ট” পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী অধিকাংশ মুসলিম ছাত্রছাত্রীকে আগামী দিনে পরীক্ষা দেওয়া বর্জন করতে হবে। একটি মুসলিম সংগঠনের মতে, এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মুসলিম শিক্ষার্থী প্রতিদিনের ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করতে বাধ্য হয়েছেন।

“দ্য কুইন্ট”পত্রিকাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উদুপির এক মুসলিম ছাত্রী জানিয়েছেন, তাঁকে টিসি নিতে হবে এবং হিজাব পরার অনুমতি না দেওয়া হলে তাঁকে কলেজ ছেড়ে যেতে হবে।

এর আগে, ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল মুসলিম ছাত্র ছাত্রীদের পরিধেয় পোষাক কী হবে তা নিয়ে চলতে থাকা বিতর্কের জেরে কর্নাটকের ৭৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ হাজার ২৯১জন ছাত্রছাত্রীকে তাদের নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করতে হয়েছিল। অপর একটি সংগঠন উদুপি মুসলিম অক্কুট্টা জানিয়েছে, উদুপি জেলার কমপক্ষে ২৩০জন মুসলিম ছাত্রীকে অন্তর্বর্তীকালীন পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। যদিও কর্নাটকের সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গোটা রাজ্যে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জন মুসলিম ছাত্রছাত্রীকে ক্লাস মিস করতে হয়েছে।

কর্ণাটক হাইকোর্টের রায় প্রকাশের পরে মঙ্গলবার উদুপিতে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসকের তরফ থেকে এই দিনটিকে ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১ জানুয়ারি কর্নাটকের উদুপিতে একটি প্রি-ইউনিভার্সিটির কয়েকজন হিজাব পরিহিত মুসলিম পড়ুয়াকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়া হয়। কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট ওই পড়ুয়াদের জানিয়ে দেন, হিজাব পরে তাঁরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না। এই নিয়ে কলেজ চত্বরে শুরু হয় বিতর্ক। সেই বিতর্কের রেশ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। এর জেরে বেশ কয়েকটি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে শান্তির আহ্বান জানানো হয় এবং সমস্ত স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপর জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ কর্ণাটক সরকার এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। বলা হয়, ওই কমিটির নির্দিষ্ট সুপারিশ করা পর্যন্ত ছাত্রীরা শুধুমাত্র ইউনিফর্ম পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবেন হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয় পরার অনুমতি নেই। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে উদুপির কয়েকজন ছাত্রী কর্ণাটক হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ওই পিটিশনে ছাত্রীরা উল্লেখ করেন, হিজাব পরা তাদের মৌলিক অধিকার যা কোনভাবেই বাতিল করা যায় না।
এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তি, বিচারপতি কেএস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জেএম খাজি অন্তর্বর্তী রায় দিয়ে বলেন, যতদিন না রায় ঘোষণা হচ্ছে কর্নাটকে স্কুল-কলেজ খোলা হলেও কোনো পড়ুয়া ধর্মীয় প্রতীকমূলক কোনো পরিধান পরে আসতে পারবেন না। এরপরে আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের রায়, “ইসলামে হিজাব পরা কোন বাধ্যতামূলক অনুশীলন নয়”। স্বভাবতই এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত মুসলিম ছাত্রীরা।

Related Articles

Back to top button
error: