HighlightNewsদেশ

‘দুর্নীতিগ্রস্ত’,’অযোগ্য’,’ভণ্ডামি’-কে ‘অসংসদীয়’ঘোষণা করল কেন্দ্র, মানতে নারাজ বিরোধীরা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘অযোগ্য’, ‘ভণ্ডামি’ সহ একাধিক শব্দকে সংসদ কক্ষে বিরোধীদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করল কেন্দ্র। মূলত: কেন্দ্রের সমালোচনায় সংসদে ব্যবহার করা বিরোধীদের শব্দগুলিকে ‘অসংসদীয়’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগেই সংসদের যে অভিধান প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বিরোধীদের ব্যবহার করা একাধিক শব্দকে ‘অসংসদীয়’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিরোধীদের তরফে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের তুমুল সমালোচনা করা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এবার আইনসভার অন্দরেও বিরোধী কন্ঠস্বর রোধ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, লোকসভা এবং রাজ্যসভা অধিবেশন চলাকালীন বেশ কিছু শব্দের প্রয়োগের উপর বুধবার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় লোকসভা সচিবালয়ের তরফে। প্রকাশিত ‘অংসসদীয় শব্দের’ তালিকায় রয়েছে, ‘লজ্জাজনক’, ‘অপব্যবহার’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘নাটক’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘অযোগ্য’ ‘ভণ্ডামি’র মতো বেশ কিছু আপাত নিরীহ শব্দ। সংসদের অধিবেশনে ‘নৈরাজ্যবাদী’, ‘শকুনি’, ‘স্বৈরাচারী’, ‘খলিস্তানি’, ‘বিনাশপুরুষ’, ‘জয়চাঁদ’ (পৃথ্বীরাজ চৌহানের বিরুদ্ধে মহম্মদ ঘোরিকে মদত দেওয়া কনৌজের রাজা), ‘তানাশাহি’-র মতো শব্দের প্রয়োগও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আগামী ১৮ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার আগে সাংসদের জন্য প্রকাশিত পুস্তিকায় নিষিব্ধ করা হয়েছে, ‘জুমলাবাজি’, ‘কোভিড স্প্রেডার’, ‘খুন সে ক্ষেতি’ (রক্ত দিয়ে চাষ), ‘স্নুপগেট’-এর মতো কিছু শব্দবন্ধের ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এর মধ্যে একাধিক শব্দ ও শব্ধবন্ধ অতীতে বিরোধীরা প্রয়োগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

সংসদে তরফে নতুন এই শব্দতালিকা প্রকাশের পরেই তোপ দেগেছেন একের পর এক বিরোধী নেতারা। কংগ্রেসের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক জয়রাম রমেশ থেকে শুরু করে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন।

কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ ট্যুইটারে লিখেছেন, “মোদি সরকারের সমালোচনায় বিরোধীদের ব্যবহার করা শব্দ অসংসদীয় তালিকায় ফেলা হয়েছে। এবার কি বিশ্বগুরু?”

তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ মহুয়া মৈত্র ট্যুইটারে লিখেছেন, “সত্য কি অসংসদীয়? স্বাস্থ্য ও জীবনধারণের ক্ষেত্রে ভারতের স্থান সর্বনিম্ন- ১৪৬। একমাত্র ভারতে পুরুষ ও মহিলার হার ৫ শতাংশের বেশি।”

অন্যদিকে, বুধবারের ‘অসংসদীয় শব্দ’ সংক্রান্ত নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, বেশ কিছু ‘মৌলিক’ শব্দ এবং শব্দবন্ধকে ‘অংসসদীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তা তিনি মানবেন না। প্রয়োজন বুঝলে আসন্ন বাদল অধিবেশন থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করারও ‘বার্তা’ দিয়েছেন ডেরেক।

টুইটারে ডেরেক লিখেছেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অধিবেশন শুরু হবে। সাংসদের উপর জারি করা হল তামাশার নির্দেশিকা। এখন, সংসদে বক্তৃতা দেওয়ার সময় আমাদের এই মৌলিক শব্দগুলি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আমি লজ্জিত। ‘অপব্যবহার’, ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘ভণ্ডামি’, ‘অযোগ্য’— আমি এই সব শব্দ ব্যবহার করব। আমাকে সাসপেন্ড করুন। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’

উল্লেখ্য, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে রবিবার পরপর দুটি বৈঠক রয়েছে নয়াদিল্লিতে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। অন্যদিকে, সেদিনই মল্লিকার্জুন খারগে বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই সংসদে বিরোধী শিবিরের কৌশল নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

Related Articles

Back to top button
error: