টিডিএন বাংলা ডেস্ক: বহুবিবাহ বেশি অমুসলিমদের মধ্যেই। সম্প্রতি এমনই রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় সমীক্ষায়। উল্লেখ্য, ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির দাবিদারদের প্রধান টার্গেট ছিল মুসলিম পরিবারে বহু বিবাহ বন্ধ করতে হবে। যদিও, জাতীয় সমীক্ষার রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বহু বিবাহ বেশি অমুসলিম পরিবারেই।
পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা দেশে বিভিন্ন ধর্ম ও গোষ্ঠীর মধ্যে বহু বিবাহের প্রবণতা অনেক কমেছে। তবে, এখনও বহুবিবাহের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে তফশিলি উপজাতিদের মধ্যে। ২০১৯-২১ সালের সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে বহু বিবাহের গড় ১.৪ শতাংশ। এই সংখ্যা ছিল ২০০৫-০৬ সালে ১.৯ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ সালে ১.৬ শতাংশ।
বর্তমান সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে ১.৪ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের স্বামীর দ্বিতীয় পত্নী রয়েছে। এই গড় ১.৪ শতাংশের মধ্যে ২.৪ শতাংশ হল সিডিউল ট্রাইব পরিবার। তফসিলি জাতি পরিবারে একটু কম ১.৫ শতাংশ আর ওবিসিদের মধ্যে ১.৩ শতাংশ, অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সংখ্যা ১.২ শতাংশ।
ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিচারে মুসলিমদের মধ্যে বহু বিবাহের সংখ্যা ১.৯ শতাংশ যেখানে সিডিউল ট্রাইবদের সংখ্যা ২.৪ শতাংশ এবং সিডিউল কাস্টে ১.৫ শতাংশ। যেহেতু, সংখ্যার বিচারে বিবাহিত মুসলিম মহিলাদের সংখ্যা হিন্দুদের তুলনায় অনেক কম তাই বলা যেতে পারে, দেশের মধ্যে অমুসলিম পরিবারেই বহু বিবাহের উদাহরণ রয়েছে বেশি। তবে, পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বহু বিবাহের প্রবণতা কমছে সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই।
মুসলিমদের মধ্যেও এই প্রবণতা অনেক কমেছে। ২০০৫-০৬ সালের সমীক্ষায় যে সংখ্যা ছিল ২.৬ শতাংশ এখন সেটা কমে হয়েছে ১.৯ শতাংশ। যদিও বারবার গেরুয়া শিবিরের তরফে অভিযোগ করা হয়, মুসলিম পার্সোনাল ল’ একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়ে রেখেছে মুসলিমদের জন্য সেই কারণে, মুসলিম পরিবারে বহু বিবাহ বেশি। শুধু তাই নয়, গেরুয়া শিবিরের এই বক্তব্যের সমর্থনে অপপ্রচারও চালায় এক শ্রেণির মিডিয়া। দেশে মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বহু বিবাহ বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও বহু অমুসলিম পরিবার বহু বিবাহ মেনে নিয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অমুসলিমদের মধ্যে বহু বিবাহের প্রবণতা বেশি রয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যে এবং আদিবাসী মহলে। শুধু তাই নয়, চারটি রাজ্য এমন রয়েছে যেখানে মুসলিমদের মধ্যে বহু বিবাহের সংখ্যার থেকে বেশি হিন্দুদের মধ্যে বহু বিবাহ। তেলেঙ্গানায় হিন্দু ৩ শতাংশ, মুসলিম ২.১ শতাংশ, ছত্তিশগড়ে হিন্দু ২ শতাংশ ও মুসলিম ১.৬ শতাংশ, তামিলনাড়ুতে হিন্দু ২ শতাংশ ও মুসলিম ১.৭ শতাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশে হিন্দু ১.৯ শতাংশ ও মুসলিম ১.৮ শতাংশ।
অন্যদিকে, রিপোর্ট অনুযায়ী, অসমে হিন্দুদের থেকে মুসলিম পরিবারে বহু বিবাহ বেশি। হিন্দু ১.৮, মুসলিম-৬ শতাংশ। আর এই তথ্য দেখে সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও। তবে, এই তথ্যের সঙ্গে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে যে, বহু বিবাহের সংখ্যা বেশি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারে। যেখানে, ধনী পরিবারে বহু বিবাহ ০.৫ শতাংশ সেখানে, দরিদ্র পরিবারে ২.৪ শতাংশ।
এছাড়া, রাজ্য অনুযায়ী বহু বিবাহের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মেঘালয়ে। এখানে ৬.১ বিবাহিত মহিলারা জানিয়েছেন, তাঁদের স্বামীর একাধিক স্ত্রী রয়েছে। মেঘালয়ের পরেই রয়েছে মিজোরাম, সিকিম, অরুনাচল প্রদেশ ও তেলেঙ্গানা। সবচেয়ে কম বহু বিবাহের অঞ্চল গোয়া। মাত্র ০.২ শতাংশ।
