HighlightNewsইতিহাস ঐতিহ্যদেশ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী মাওলানা শরীয়ত উল্লাহর সংগ্রামী জীবন

মুহাম্মদ নুরুদ্দীন, টিডিএন বাংলা: উত্তর ভারত জুড়ে যখন আহমদ শহীদ বেরলবী সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছেন তখন বাংলায় সংস্কার আন্দোলনে এগিয়ে এলেন মাওলানা শরীয়ত উল্লাহ। তাঁর পুত্র মাওলানা আলাউদ্দিন (দুদু মিয়াঁ), মাওলানা নিসার আলী (তিতুমীর) প্রমূখ। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর জেলার বন্দর পরগনায় মাদারীপুর গ্রামে শরীয়ত উল্লাহর জন্ম। পিতা আব্দুল জলিল তালুকদার ছিলেন শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ। শৈশবে পিতাকে হারিয়ে শরীয়তউল্লাহ চাচা মোহাম্মদ আজিমের কাছে মানুষ হন। চাচা থাকতেন মুর্শিদাবাদের নবাব পরিবারে। তাই শরীয়তউল্লাহকে শৈশবে মুর্শিদাবাদে থাকতে হয়েছে। শরীয়তউল্লাহ কলকাতার প্রখ্যাত আলেম বাশারত আলীর কাছে শিক্ষা অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি হুগলির ফুরফুরা মাদ্রাসায় ভর্তি হন।

শিক্ষাদীক্ষায় শরীয়ত উল্লাহর ছিল প্রবল আগ্রহ। শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি মক্কায় গমন করেন এবং সেখানে প্রায় কুড়ি বছর অবস্থান করেন। এই সময়ে প্রখ্যাত যুগ সংস্কারক আব্দুল ওহাব নজদীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। সৈয়দ আহমদ বেরলবীর সঙ্গেও তার আলাপ মক্কাতেই।

আব্দুল ওহাব নজদী মুসলমানদেরকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী জীবন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। শরীয়তউল্লাহ দেশে ফিরে দেখেন কুসংস্কারে ছেয়ে গেছে বাংলা। তিনিও সংস্কার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি দেখেন ইংরেজ নীলকুঠিদের অত্যাচার আর বাংলার জমিদারদের শোষণের করুন চিত্র। বাংলার গরিব হাভাতে হিন্দু মুসলমানের উপর বিদেশি শাশকদের এই অত্যাচার তাকে সাংঘাতিকভাবে ব্যথিত করে। তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। বাংলার অত্যাচারিত কৃষক,তাঁতি, তিলি, জোলা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে আসেন। শরীয়তউল্লাহ মানুষকে বোঝাতে থাকেন নিজেদেরকে কুসংস্কারমুক্ত পবিত্র জীবন যাপন করতে হবে এবং অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে। তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বোঝান মুসলমানদের মূল আদর্শ কুরআন ও হাদীস। কুরআন হাদীস ছেড়ে নিজেদের খুশি মত চললে মুসলমান থাকা যায়না। তিনি (ফরজ) আবশ্যিক নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানান। ফরজ কথাটি থেকে এই আন্দোলন এসেছে বলে ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ একে ফরাজি আন্দোলন বলেন।

শরীয়ত উল্লাহর ধর্ম সংস্কার আন্দোলন পরবর্তীকালে অত্যাচারী জমিদার ও ইংরেজদের হাত থেকে গরিব মানুষের মুক্তি আন্দোলনে পরিণত হয়। কোন কোন ঐতিহাসিক একে কৃষক বিদ্রোহ বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। ঐতিহাসিক সুরজিৎ দাশগুপ্ত তার ভারত বর্ষ ও ইসলাম গ্রন্থে দেখিয়েছেন বাংলার ফরাজী আন্দোলন ছিল মুসলিম নেতৃত্বে পরিচালিত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। অসীম সাহসী এই মাওলানার তৎপরতায় এক সময় বাংলার ব্রিটিশ শাসকরা ততস্থ হয়ে উঠে ছিল। ৮৪০ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা শরীয়তউল্লাহ পরলোকগমন করেন।

Related Articles

Back to top button
error: