HighlightNewsদেশ

গুজরাট দাঙ্গায় জাকিয়ার আবেদন খারিজ করে মোদিকে ক্লিন চিট দিল সুপ্রিম কোর্ট

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিন চিট দেওয়া এসাইটি রিপোর্টের বিরুদ্ধে পিটিশন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাট দাঙ্গায় মৃত এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি ​​এই আবেদন করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, জাকিয়ার আবেদনের কোনো যোগ্যতা নেই।

প্রসঙ্গত, ৭২ বছর বয়সী এহসান জাফরি একজন কংগ্রেস নেতা এবং সাংসদ ছিলেন। তাঁকে তাঁর উত্তর আহমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটির বাড়ি থেকে বের করে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। দাঙ্গার ষড়যন্ত্রের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন জাকিয়া। ম্যাজিস্ট্রেট এসাইটির ক্লোজার রিপোর্ট গ্রহণ করেন। ওই রিপোর্টে দাঙ্গার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ ৬৩ জনকে ক্লিন চিট দেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্টও এই রায় বহাল রেখেছে।

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গুজরাট দাঙ্গার তদন্ত করে এসআইটি। সুপ্রিম কোর্ট ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তার সিদ্ধান্ত সংরক্ষণ করে। বিচারপতি এএম খানউইলকর, বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী এবং বিচারপতি সিটি রবিকুমারের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট জাকিয়ার আবেদনের শুনানি শেষ করে এবং ৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে রায় সংরক্ষণ করে। আবেদনকারীর পক্ষে বরিষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিবাল, এসআইটির পক্ষে বরিষ্ঠ আইনজীবী মুকুল রোহাতগি এবং গুজরাটের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এই মামলায় যুক্ত ছিলেন।

শুনানি চলাকালীন আবেদনকারীর পক্ষে কপিল সিবাল জানিয়েছিলেন, এসআইটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তদন্ত করেনি। এতে প্রমাণ হয় এই ঘটনায় পুলিশ সক্রিয় ছিল না। সিবাল আরও বলেন, এসআইটি যেভাবে তদন্ত করেছে তাতে মনে হচ্ছে তারা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে এসআইটির পক্ষ থেকে আইনজীবী মুকুল রোহাতগি বলেন, কাউকে বাঁচানো হয়নি এবং পুরো তদন্ত গভীরভাবে করা হয়েছে। মোট ২৭৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গুজরাট দাঙ্গার পরে, জাকিয়া জাফরি রাজ্যের ডিজিপির কাছে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। জাকিয়া দাবি করেন, এই সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন ধারায় এফআইআর দায়ের করা হোক।

এরপর ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার তদন্তের জন্য এসআইটি গঠনের নির্দেশ দেয়। মামলার সমস্ত নথি এসআইটির হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে জাকিয়ার অভিযোগের তদন্তও এসআইটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসআইটির তদন্তে ক্লিন চিট পান নরেন্দ্র মোদী এবং ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, এসআইটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ক্লোজার রিপোর্ট জমা দেয়।

২০১৩ সালে জাকিয়া ক্লোজার রিপোর্টের বিরোধিতা করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন। ম্যাজিস্ট্রেট ওই আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন জাকিয়া। হাইকোর্ট ২০১৭ সালে ম্যাজিস্ট্রেটের সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখে। এরপর জাকিয়া হাইকোর্টের রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গোধরা ঘটনার পর গুজরাটে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়। পূর্ব আহমেদাবাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতি ‘গুলবার্গ সোসাইটি’কে টার্গেট করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি ​​সহ ৬৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে ৩৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং জাফরিসহ ৩১ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা যায়।

Related Articles

Back to top button
error: