Highlightদেশ

দীপাবলির দিনেই ধোঁয়াশায় ঢাকল রাজধানী দিল্লি , বিপদ সীমা ছাড়িয়ে গেল বায়ু দূষণ

টিডিএন বাংলা ডেস্ক :  দিপাবলীর পর দিল্লির বায়ু দূষণের পরিমাণ বিপদসীমা পেরিয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদরা আগেই আশঙ্কা করেছিল যে দিপাবলীর পর দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়বে। তাদের সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে শুক্রবার ভোর ৩টে নাগাদ দেখা গেছে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে হয়েছে ৭৭৪.৬৯। ফিরল গত বছরের স্মৃতি।

দীপাবলির আগে থেকেই দূষণ বাড়ছিল দিল্লিতে। আর দীপাবলির দিন বিকেল থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করেছে। রাতে বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছে যায় বাতাসের গুণমান। শুক্রবার সকালেও পরিস্থিতি বদলায়নি। অবশ্য এটা ঘটনা গোটা বছরই দিল্লির বাতাসের গুণমান থাকে অনেক নিচে। কিন্তু গত মাসে একটানা প্রবল বৃষ্টিতে দূষণের মাত্র খানিকটা কমেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাতাসে নিশ্বাস নিয়েছে দিল্লিবাসী।

শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ নেহেরু স্টেডিয়ামে দূষণের মাত্রা ছিল ১১০৩ এবং ওখলায় ছিল ১১০০। যা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। সন্ধের পর আতশবাজি পোড়ানো সঙ্গে সঙ্গে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকলে সকাল ৫টার সময় দূষণের মাত্রা নেড়ে দাঁড়ায় ১০৫৩। কেন্দ্রের দূষণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে যে, গত ২৪ ঘন্টায় দিল্লির বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দূষণের পরিমাণ ছিল ৬৬১, বুধবার ছিল ৩১৪ এবং মঙ্গলবার ছিল ৩০৩। দূষণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, দীপাবলির আগে শুধুমাত্র খড় পোড়ানোর কারণে রাজধানীর দূষণের মাত্রা ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। দিল্লি ছাড়াও নয়ডা, গাজিয়াবাদ এবং গুরুগ্রামের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ। সকাল ৬টা’তে সেখানে দূষণের মাত্রা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৫৬, ৭২৯ এবং ৭৩৭। স্যুইস সংস্থা একিউআই ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৩০টি শহরের মধ্যে ভারতের রাজধানী দিল্লি ২২তম স্থানে রয়েছে। ল্যানসেট বলে আরও একটি সংস্থা ২০১৯ সালে ভারতের বায়ু দূষণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীতে ১৭ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) বলতে বোঝায়। কোন পরিস্থিতি সংকেত দেয় বিপদের। শূন্য থেকে ৫০ – ভাল , ৫১ থেকে ১০০ – সন্তোষজনক, ১০১ থেকে ২০০- সহনীয়, ২০১ থেকে ৩০০-খারাপ, ৩০১ থেকে ৪০০- খুব খারাপ, ৪০১ থেকে ৫০০ – বিপজ্জনক

দীপাবলির দিন সকাল থেকে দিল্লির আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সময় য়ত গড়িয়েছে ধোঁয়া ঢেকেছে সূর্যের মুখ। অনেকেই বলছেন, বাজি না পোডা়তেই যদি আকাশের এই হাল হয়, তবে বাজি পোড়ালে পরিস্থিতি কোন জায়গায় যাবে সেটা ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু বছর আগে দীপাবলিতে দিল্লিতে য়ত বাজি পোড়ানো হয়েছে এ বছর তার অর্ধেক বাজি পোড়ানো হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

সাফার (সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ) বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ৫ এবং ৬ নভেম্বর দিল্লি এবং দিল্লি সংলগ্ন এলাকায় বাজি পোড়ালে দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ-এই তিন রাজ্যে খড় এবং শস্য আবর্জনা পোডা়লে দিল্লির বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠবে।

দীপাবলিতে এবার আতশবাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাজি বিক্রি হতে দেখা যায়। সেই বাজি পোড়ানোর জেরেই এই অবনতি। বায়ুর মান ‘বিপজ্জনক’ পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে একহাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না। পুরু ‘ধোঁয়াশা’য় ঢেকেছে গোটা রাজধানী।

Related Articles

Back to top button
error: