আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ থেকে আত্মহত্যার কারণেই মৃত্যুহার বেশি মার্কিন সেনার : সমাধানের খোঁজে বিশেষজ্ঞরা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ক্যারল গিয়াকোমোর মতে, ‘প্রতিদিন গড়ে ২০ জন মার্কিন সেনা আত্মহত্যা করছে।’ বেশ কয়েক বছর ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন মার্কিন সেনাবাহিনীর মধ্যে আত্মহত্যার হার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ছে। যা ভবিষ্যতে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এবার সেই কথা স্বীকার করে নিল মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেন্টাগনের একটি রিপোর্ট।

পেন্টাগনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে , ‘সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশেষ করে পুরানো সেনা সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ৪৫ হাজারের বেশি পুরানো সেনা সদস্য অথবা ছয় বছরের অভিজ্ঞ সেনা সদস্য আত্মহত্যা করেছে।’ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পেন্টাগন জানিয়েছে, ‘তারা এই আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে।’

বিভিন্ন খবরে জানা গেছে মার্কিন সেনা মধ্যে আত্মহত্যার সামাজিক প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গিয়েছে যে সব সেনারা আত্মহত্যা করেছে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা মার্কিন কর্তৃপক্ষকে বেশি চিন্তিত করে তুলেছে। সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে যতটা মার্কিন সেনারা প্রাণ হারিয়েছে তার চেয়ে বেশি মারা গিয়েছে আত্মহত্যার কারণে।

বিভিন্ন সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার যথাক্রমে প্রায় ২৪০০ ও ৫০০০ সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে হাজার হাজার সেনা যার মধ্যে একটি বড়ো অংশ আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। এছাড়াও তারা সিরিয়া,লিবিয়া, ইয়েমেন প্রভৃতি যুদ্ধেও প্রত‍্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। এই সমস্ত যুদ্ধে আমেরিকার কোটি কোটি ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। তবে বর্তমানে দেশের মধ্যে এই যুদ্ধ নীতির ব‍্যাপক বিরোধিতা শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে অভ‍্যন্তরীন চাপের কারণেই মার্কিন প্রশাসন বিদেশ থেকে সেনাবাহিনীর প্রত‍্যাহার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

মার্কিন সেনাদের এই আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গিয়েছে অধিকাংশ মার্কিন সেনারা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের সময়ে যে হিংস্রতা ও বর্বরতা দেখেছে এবং তাদের কমান্ডারদের অমানবিক কর্মকাণ্ড তাদেরকে মানসিকভাবে ডিপ্রেশনে নিয়ে যায়। অপরাধবোধ একসময় তাদেরকে ঘিরে ফেলে আর এই অপরাধ বোধ থেকেই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেকের মতে, মার্কিন সেনারা যুদ্ধ থেকে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরও বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যা তাদেরকে আরো বেশি মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। ফলে তারা এর থেকে মুক্তির জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এছাড়া মার্কিন সেনারা দীর্ঘদিন প্রতিনিয়ত যুদ্ধে জড়িয়ে থাকায় প্রচন্ড মানসিক চাপ পের থেকে তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। যা তাদের আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।

Related Articles

Back to top button
error: