HighlightNewsরাজ্য

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির, মৃত হিন্দুর দেহ শ্মশানে নিয়ে গেল মুসলিম যুবকরা

নিজস্ব সংবাদ, টিডিএন বাংলা : নদীয়ার চাপড়ায় মুসলিম যুবকদের কাঁধে চড়েই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হল গোঁড়া হিন্দু ঘরের বৃদ্ধা বাসন্তী দেবীর মৃতদেহ। যুগের পর যুগ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন হিন্দু মুসলিম বৈষম্য নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির পুঁজি বৃদ্ধি করে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন জিইয়ে রেখে হয়ে ওঠে নেতা। ঠিক এমনই এক অসহিষ্ণু পরিবেশের মধ্যে বেনোজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করল চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া শিবির পাড়ার বাসিন্দারা। সেখানে হিন্দু-মুসলিম নয় সকলেই বাস করেন আন্তরিক প্রতিবেশী হিসাবে। ধর্মের থেকেও বড় আন্তরিকতা এবং মানবিকতা নিয়ে।

এই গ্রামেরই পঞ্চাশোর্ধ বাসিন্দা রবীন দে হকারি পেশায় মনোহারী দ্রব্য বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়েন দিনের আলো ফুটতেই। আর ফেরেন রাতের গভীর অন্ধকারের মধ্যেই। বাকি দুই ভাইয়ের একজন থাকেন ভিন রাজ্যে অন্য জনেরও আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত দুরাবস্থা। তাই দাদার মতন সেও সারাদিন ঘুরে বেড়ায় অর্থ উপার্জনের জন্য। বাড়িতে ৭০ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা মা। গতকাল পরলোকগমন করেন তিনি।

তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে এলাকাবাসী রাজু খালিফা, আব্দুল সেখ সহ ২০০ জন যুবক মিলে আর্থিক সাহায্য তুলতে বেরিয়ে পড়েন। খবর দেওয়া হয় দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনদের। তাদের আপ্যায়নে হিন্দু শাস্ত্র মতে মৃত্যুর পর পরলৌকিক ক্রিয়াকর্মের কোন ত্রুটি রাখেনি তারা। বেলা বেড়ে যাওয়ার কারণে মালশা ঘুনসি ঘাট থেকে স্নান করে নতুন কাঁছা পড়ে নিজেদের তৈরি করা বাশের খাটিয়াসহ কাঁধে তুলে নেন বাসন্তী দেবীর মৃতদেহ। দৈবক্রমে ইতিমধ্যে বড় ছেলে রবীন দে এসে উপস্থিত হন। তিনি জানান, শরীরিক অসুস্থতা এবং মনের অস্থিরতার কারণেই অর্ধেক কাজ করে ফিরে এসেছেন। তবে এ দুঃসময় প্রতিবেশীদের এভাবে পাশে দাঁড়ানো তার কাছে নতুন নয়। তিনি বলেন, এই গ্রামে সকলেই সকলের আত্মীয়।

অন্যদিকে রাজু খলিফা, আব্দুল কাদেররা জানায় ধর্ম যার যার নিজের। যদি উনি আসতে দেরি করতেন তাহলে আমরাই মুখাগ্নি করতাম, কারণ সেই অধিকার এখনো নষ্ট হয়নি আমাদের এলাকায়। অবশেষে জলঙ্গী নদীর ধারে কাঠের আগুনে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী সমস্ত অন্তোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয় বৃদ্ধার মৃতদেহের। একদিকে যখন রাজনৈতিক কারণে বারবার হিংসার শিকার হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবক যুবতীরা। সেখানে এক হিন্দু মায়ের সৎকারে এগিয়ে এলেন মুসলিম যুবকেরা।

Related Articles

Back to top button
error: