নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৪ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪টায় মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের নিকটবর্তি সালুয়া দারুল কোরআনিয়া মাদ্রাসায় মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। “বর্তমান সময়ে নিজামিয়া মাদ্রাসা গুলির সংকট ও উত্তরণের পথ” শীর্ষক এই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ওয়াসিফ আলি অধ্যাপক জিন্নাতুল্লাহ ও লেখক মোঃ নুরুদ্দিন প্রমূখ। বক্তাগণ নিজামিয়া মাদ্রাসার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। মোহাম্মদ নুরুদ্দিন বলেন শিক্ষাকে জীবনমুখী ও গণমুখী করতে হবে। যে শিক্ষা জীবনমুখী নয়, যে শিক্ষা মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখে না, সেই শিক্ষা ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। আমাদের রাজ্যের মাদ্রাসা গুলোতে প্রধানত আরবি ভাষা শেখানো হয় কিন্তু তারপরও আরবি ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ছাত্রদেরকে দক্ষ হতে দেখা যায় না। ভাষা শিক্ষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে হলে মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী একজন শিক্ষিত ব্যক্তিকেও অন্য কোথাও থেকে আরবি শিখতে হয় তবেই তারা আরবি ভাষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। নিজামিয়া মাদ্রাসাকে উন্নত করতে হলে এই দুর্বলতা অবশ্যই দূর করতে হবে। তিনি বলেন শিক্ষাকে গণমুখী করার প্রয়োজন আছে। গণমুখী করার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যদি দায়িত্ব গ্রহণ না করে তাহলে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে সে দায়িত্ব পালন করার জন্য এগিয়ে আসতে হয়। আমাদের দেশের প্রচলিত নিজামিয়া মাদ্রাসার পরিচালন ব্যবস্থা এই সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে এসেছে। সমাজের একটি বড় অংশ তাদের পকেটের অর্থ দিয়ে মাদ্রাসাগুলি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো উন্নত করতে হলে যেমন পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে, গুণগত শিক্ষার দিকে নজর দিতে হবে, অংক বিজ্ঞান ইংরেজি কে আবশ্যিক করতে হবে, শিশু মনকে লক্ষ্য রেখে তার উপযোগী সিলেবাস তৈরি করতে হবে তেমনি শিক্ষকদেরকেও উপযুক্ত ভাবে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। শুধু তাই নয় প্রয়োজন মাদ্রাসা পরিচালন সমিতির প্রশিক্ষণেরও। কেননা বর্তমান যুগ পেশাদারিত্ব ছাড়া থাকতে পারে না। তাই পেশাদারিত্বের বিষয়ে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে। দ্বীন ইসলাম কোন সংকীর্ণ ধারণার নাম নয়। জীবনের দৈনন্দিন প্রয়োজনের থেকে দ্বীন পৃথক হতে পারে না। তাই মাদ্রাসাগুলি যদি জীবনমুখী শিক্ষার ব্যাপারে অগ্রসর হয় তাহলে সমাজে এর চাহিদা বাড়বে এবং বর্তমান সংকট থেকে মাদ্রাসাগুলি বের হয়ে আসতে পারবে।
আলোচকদের অনেকেই ছাত্র এবং শিক্ষকদের বিল হাতে নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে চাঁদা কালেকশনের নিয়মকে নিন্দা করেন। যেকোনো মূল্যে এই মানসিকতা থেকে আমাদেরকে বের হতে হবে। এক্ষেত্রে বৃত্তশালী ব্যক্তিদেরকে অগ্রসর হতে হবে। তারা যদি দায়িত্ব গ্রহণ না করেন তাহলে মাদ্রাসাগুলির এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া মুশকিল। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন আমরা অনেক অর্থ অপচয় করি আমাদের বিলাসিতার পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করি কিন্তু আদর্শ শিক্ষার পিছনে আমরা অর্থ ব্যয় করি না। যার ফল স্বরূপ সমাজে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এ বিষয়ে আমাদেরকে আরো দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। যাকাতের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।