HighlightNewsদেশ

Tripura: ত্রিপুরা ঘটনায় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের বিরুদ্ধেই মামলা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : ত্রিপুরায় মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সরজমিনে হালহকিকত দেখতে যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম রাজ্য সফরে গিয়েছিল সেই দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ইউএপিএ আইনে মামলা করল ত্রিপুরা পুলিশ। এই দল ‘টার্গেটেড অ্যাটাকস অন মুসলিমস ইন ত্রিপুরা’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট জারি করেছে, তাতে তাদের ত্রিপুরা সফরের বাস্তব চিত্রের বর্ণনা করা হয়েছে। পশ্চিম আগরতলা পুলিশ স্টেশন থেকে আইপিসির অন্তর্গত ৪১ নং ধারায় একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের এক সদস্য দিল্লির আইনজীবী মুকেশকে। সেই নোটিশে তাঁকে জানানো হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ আইনে মামলা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন এনসিএইচআরও’র সদস্য আইনজীবী আনসার ইন্দোরিকেও ইউএপিএ আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিল্লির প্রেস ক্লাবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের তরফে ত্রিপুরায় মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যরা। এঁরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের এহতেসাম হাশমি, আইনজীবী ল’ইয়ারস আইনজীবী ফর ডেমোক্র্যাসির অমিত শ্রীবাস্তব আইনজীবী এনসিএইচআরও’র আনসার ইন্দোরি এবং আইনজীবী মুকেশ প্রমুখ।

আইনজীবী মুকেশ জানিয়েছেন যে, নোটিশে ত্রিপুরা সফরে যাওয়া ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ইউএপিএ আইনে মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশের নোটিশে বলা হয়েছে, হিংসার উসকানি দিয়েছেন আপনারাই, তাই আপনাদের নামে মামলা হয়েছে। আপনারা সোশ্যাল মিডিয়ায় যে পোস্ট করেছেন এবং যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতার সৃষ্টি হয়েছে। আপনাদের বক্তব্য ছিল প্ররোচনামূলক যার ফলে শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুলিশের তরফে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে আইপিসির ১৫৩ এ এবং বি, ৪৬৯, ৫০৩, ৫০৪ এবং ১২০ বি ধারায়। পুলিশের নোটিশে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, হিংসার উসকানি দিয়েছেন আপনারা, তাই আপনাদের নামে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই নোটিশে আইনজীবী দু’জনকে অনুরোধ করা হয়েছে আপনাদের মনগড়া বিবৃতি প্রত্যাহার করুন এবং আপনারা ১০ নভেম্বরের মধ্যে পশ্চিম আগরতলা পুলিশ স্টেশনকে হাজিরা দিন। ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, তারা মিথ্যা এবং ভুয়ো পোস্ট করার অভিযোগে ৭১ জনের বিরুদ্ধে ৫ টি ফৌজদারি মামলা করেছে। এরা মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা সংক্রান্ত ভুয়ো খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ত্রিপুরা সরকার এবং পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছিল। পুলিশ বারবার দাবি করছে ত্রিপুরায় আইন – শৃঙ্খলার কোনও সমস্যা নেই। ত্রিপুরার বাইরে থেকে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে পুড়ে যাওয়া মসজিদের ভুয়ো ছবি পোস্ট করেছে যাতে ত্রিপুরা সরকারকে বদনাম করা যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একটি গোষ্ঠী ত্রিপুরা সফরের পর যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, ত্রিপুরায় যা ঘটেছে সেটি সম্পূর্ণ মুসলিম বিরোধী হিংসা। এই হিংসার জন্য দায়ী হিন্দুত্বগোষ্ঠী যাদের উদ্দেশ্য হল উত্তর-পূর্বের সংখ্যালঘুদের আক্রমণের নিশানা করা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হিংসার অজুহাতে হিন্দুত্ববাদী দল যেমন বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ত্রিপুরায় প্রতিবাদ মিছিল বের করেছে, যেখানে মুসলিম বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এর ফলে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে যাতে ১২ টি মসজিদে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। মুসলিমদের নয়টি দোকান এবং তিনটি বাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এই আইনজীবীরা ত্রিপুরার পানিসাগরের চামটিলা মসজিদও পরিদর্শন করেন। তাঁরা গিয়ে দেখেন মসজিদকে ভাঙচুর করা হয়েছে। অথচ পুলিশ দাবি করছে মসজিদ ভাঙচুরের ঘটনা নাকি ভুয়ো।

প্রতিবাদ মিছিলের সময় পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সা.-র বিরুদ্ধে অবমাননাকর স্লোগান দেওয়া হয়েছে এবং হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজরা পবিত্র কুরআন পুড়িয়েছে। আইনজীবীদের রিপোর্টে বলা হয়েছে এই হিংসার পেছনে রয়েছে যেমন হিন্দুত্ববাদীদের সক্রিয়তা, তেমনই দায়ী পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। যদি পুলিশ সতর্ক এবং সক্রিয় হত, তাহলে হিংসা আটকানো যেত। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, হিংসার ঘটনার চারদিন আগে মুসলিম সংগঠন জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের সদস্যরা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা তখনই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন যে, ত্রিপুরায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে এবং হিংসার ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু তারপরেও ত্রিপুরা সরকার কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মুসলিমরা হিংসার অভিযোগ জানাতে গেলে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আইনজীবীদের গোষ্ঠী তাদের রিপোর্টে ত্রিপুরার হিংসার ঘটনার বিচার-বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

সংবাদ সূত্র- পুবের কলম

Related Articles

Back to top button
error: