HighlightNewsসম্পাদকীয়

ঈদ-পুজো শেষ হল, চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন কবে শেষ হবে?

 

মোকতার হোসেন মন্ডল: যখন ঈদ এলো তখন ওরা ভেবেছিলেন এবার বোধহয় চাকরি মিলবে। পুজো যখন এলো, তখনও ওদের ধারণা ছিল, এবার হয়তো নিয়োগ হবে। শীতের পর যখন গ্রীষ্ম এলো, তখন ওদের ধারণা ছিল, এবার হয়তো চাকরিটা হবে। কিন্তু না, আজো ওরা চাকরি পাননি! মাসের পর মাস ওরা ঘর ছেড়ে, সংসার ছেড়ে, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে আন্দোলন করছেন। কেউ বিকাশ ভবনের কাছে তো কেউ আবার ধর্মতলার গান্ধিমূর্তির পাদদেশে। কেউ শহীদ মিনারের মাতঙ্গিনী মূর্তির কাছে তো আবার কেউ কেউ জেলায় জেলায়, ঝড়ে বৃষ্টিতে ওদের আন্দোলন চলছে। খেয়ে না খেয়ে ওদের আন্দোলন চলছে। ওরা এসএসসি পাস, ওরা প্রাইমারি পাস, ওরা মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন পাস। ওরা এ বাংলার ছেলেমেয়ে। চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেকের বয়স পেরিয়ে গেছে, তবুও সংসার করা হয়নি!
ওরা কেউ অযোগ্য নয়। ওরা সকলেই পাস করে ঘরে বসে। ওদের অভিযোগ, যারা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেল, যারা ফেল করে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, তাদের সকলকে স্কুল থেকে তাড়াতে হবে। অযোগ্যদের হটিয়ে যোগ্যদের নিয়োগ দিতে হবে।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন নিয়োগ নেই। তাই সমস্ত শূন্যপদে আপটুডেট ভ্যাক্যান্সিতে নিয়োগ দিক সরকার। যারা পাস করে বসে আছে তাদের সকলকে নিয়োগ দিক।
অনেকের চাকরির নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নিয়োগ বন্ধ থাকায় তারা হতাশ। অনেকে স্বপ্ন দেখেছিলেন, চাকরি পেলে বিয়ে করবেন, কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অনেকের বাবা মারা গেছেন, অনেকের মা মারা গেছেন। অনেকের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবী বিদায় নিয়েছেন। অনেকে পেটে সন্তান নিয়ে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন, তারপর সেই সন্তান বড় হয়ে গেছে, তবুও চাকরি হয়নি। এখন অনেকে কোলে সন্তান নিয়ে আন্দোলন করছেন! বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, মাকে রেখে এসে অনেকে আন্দোলন করছেন। প্রতিদিন বাড়ি ছেড়ে থাকতে হচ্ছে, এক ভয়ঙ্কর কষ্ট, বুকে যন্ত্রনা নিয়ে ওদের আন্দোলন করতে হচ্ছে।
মঞ্চে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলির নেতা নেত্রীরা আসছেন। মাঝে মাঝে টিভিতে খবর হচ্ছে। কখনো কখনো সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না! একদিকে মামলা, আরেকদিকে আন্দোলন- চাকরি প্রার্থীরা বাঁচার গল্প বুনছেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একেরপর এক রায়ে আশার আলো দেখছেন। কিন্তু নিয়োগ হবে কবে? আমাদের বাংলার ছেলেমেয়েরা রাজপথের আন্দোলন ছেড়ে কবে স্কুলে চাকরিতে যোগ দেবেন? কবে প্রতি বছর নিয়োগ হবে? এই দুর্নীতি, এই অনিয়ম, চাকরি প্রার্থীদের প্রতি সরকারের এই অসহযোগিতার কি শেষ হবেনা? হয়তো হবে, সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমরাও দিন গুনছি- একদিন..দুইদিন..তিনদিন..চারদিন…..করতে করতে ৫৭০ দিন… ৫৭১ দিন….

Related Articles

Back to top button
error: