HighlightNewsদেশ

জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার ৩৩ মাস পরে ক’জন পন্ডিত ফিরে গেছেন কাশ্মীরে? বাজেট অধিবেশনে সরকারকে প্রশ্ন বিরোধীদের

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: মঙ্গলবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনেই জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে তকমা দেওয়ার ৩৩ মাস পরে মোদি সরকারের করা কি কি প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে তা জানতে চাইলেন বিরোধীরা। গত তিন বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। বিজেপির তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে। গত ৩৩ মাসে কতজন পন্ডিত কাশ্মীরে ফিরে গেছেন এদিন মোদি সরকারের কাছে তাই জানতে চান বিরোধীরা। একইসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন কবে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপির সাংসদেরা।
মঙ্গলবার বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিন ছিল জম্মু কাশ্মীরের বাজেট পেশ ও তা নিয়ে আলোচনার দিন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, বাজেট পেশের দিনই বাজেট নিয়ে আলোচনা করা যায় না। তবে সেই নিয়মকে এ দিনের জন্য স্থগিত রেখে বাজেট পেশ ও তা নিয়ে আলোচনা করতে সংসদে প্রস্তাব আনেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। তবে স্পিকার শেষ পর্যন্ত নির্মলা সীতারামনকে বাজেট পেশ ও তা নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেন। এরপর, জম্মু কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসনের ৩৩ মাস পর মোদি সরকারের কি কি লক্ষ্য পূরণ হয়েছে তা জানতে চেয়ে কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন,”আমি জানি উত্তর হলো না। উল্টে কেবল ভারত-পাকিস্তানই নয়, লাদাখ-চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে নয়াদিল্লি।” তিনি আরো বলেন,”সংসদে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ দুজনেই জম্মু-কাশ্মীরকে দ্রুত রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকার এখনো সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি।” মণীশ তিওয়ারির এই প্রশ্নের পর বিএসপি সাংসদ দানেশ আলি, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এবং এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলেরা নির্মলা সীতারামনের কাছে জানতে চান জম্মু-কাশ্মীরে কবে বিধানসভা ভোট হবে।

এদিন এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে প্রশ্ন করেন,”জম্মু-কাশ্মীরের বেকারত্ব ২৪ শতাংশ ছুঁয়েছে। সাত বছরে কেন্দ্র কি করেছে কাশ্মীরের জন্য?” পাশাপাশি কতজন কাশ্মীরি পন্ডিতকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে সেই প্রশ্নও তোলেন বিরোধীরা। একইসঙ্গে, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় উপত্যকায় যথেচ্ছভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার যে প্রবণতা প্রশাসন তৈরি করেছে, তার সমালোচনায় সরব হন। তিনি বলেন, এতে ছোটদের পড়াশোনা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে এদিন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, সঠিক সময়ে বিধানসভা নির্বাচন করা হবে এবং সিএমআইয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও গত ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরে বেকারত্বের হার ১৩.২ শতাংশে নেমে এসেছে। পর্যটন ব্যবসা বেড়েছে কয়েক গুণ। তিনি আরো বলেন, গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে ৫০ লক্ষ পর্যটক পা দিয়েছেন। একইসঙ্গে কাশ্মীরি হিন্দু তথা পণ্ডিতদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে নির্মলা সীতারামন জানান,”ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পন্ডিত কাশ্মীরে ফিরে এসেছেন। পণ্ডিতদের পুনর্বাসনের কাজ চলছে।” তিনি আরো জানান, কাশ্মীরে যে পণ্ডিতরা ফিরেছেন তাদের জন্য ১০২৫টি নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করেছে সরকার। আরও ১৪৪৮টি বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। যাঁরা আসছেন, তাঁদের নগদ টাকা এবং খাবার সরবরাহ করছে সরকার। উপত্যকায় ৪,৬৭৮ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই জবাবের পর আরো কয়েকটি প্রশ্নের ব্যাখ্যা চান বিরোধীরা। তবে সেই সুযোগ না পাওয়ায় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপির সাংসদেরা।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই প্রকাশিত হয়েছে বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রীর চলচ্চিত্র “কাশ্মীর ফাইলস”। ১৯৯০ সালের ১৯ জানুয়ারি কাশ্মীরের উপত্যকা থেকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কিভাবে বিতাড়িত করা হয়েছিল তার নাটকীয় রূপান্তর দেখানো হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। সিনেমাটি প্রকাশের পর নিজেদের দেশে ৩২ বছর ধরে রিফিউজি হিসেবে কাটানো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের অধিকার, পুনর্বাসন এবং তাদের প্রতি হওয়া অত্যাচারের বিচার নিয়ে সরব হয়েছে নাগরিক সমাজ। সিনেমাটিকে সাধুবাদ জানাতে সিনেমার প্রযোজক ও নির্দেশকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

Related Articles

Back to top button
error: