মৃত্যুর আগে খাবারের লাইনে দাঁড়িয়েছিল ইউক্রেনে নিহত ভারতীয় ছাত্র
টিডিএন বাংলা ডেস্ক: মঙ্গলবার সকালে ইউক্রেনের খারকিভের রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযান চলাকালীন নিহত হয় কর্ণাটকের ২১ বছর বয়সী মেডিকেল ছাত্র নবীন শেখরাপ্পা জ্ঞানগৌদার। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওই ছাত্র রাজ্যপালের সরকারি আবাসনের কাছে একটি মুদির দোকানের লাইনে দাঁড়িয়েছিল। সেইসময় হঠাৎ একটি রাশিয়ান যুদ্ধবিমান হামলা চালায় রাজ্যপালের আবাসনের ওপরে। সেহি বিস্ফোরণেই প্রাণ হারান ফাইনাল ইয়ার মেডিকেলের ওই ছাত্র। জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই তার সাথে তার বাবার শেখর গৌড়ার টেলিফোনিক বার্তালাপ হয়। এরপরেই খাবার এবং কিছু নগদ অর্থ সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারের ওই ছাত্র।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুখপ্রশ করেছেন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি। একটি তিনি লিখেছেন,”গভীর দুঃখের সাথে আমরা জানাচ্ছি যে আজ সকালে খারকিভে গোলাগুলিতে এক ভারতীয় ছাত্র প্রাণ হারিয়েছেন। মন্ত্রকের তরফ থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা ওই ছাত্র পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।”https://twitter.com/MEAIndia/status/1498591112188989442?s=20&t=WeZXkIIF3w-9kzvfntPVTA
একই সাথে ওপর একটি টুইট তিনি জানান,”পররাষ্ট্র সচিব রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দূতদের আহ্বান জানাচ্ছেন যে সমস্ত ভারতীয় নাগরিক এখনও খারকিভ এবং অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে আটকে রয়েছেন তাদের জন্য জরুরি নিরাপদ পথের জন্য আমাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করতে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের আমাদের রাষ্ট্রদূতরা একই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন।”
Foreign Secretary is calling in Ambassadors of Russia and Ukraine to reiterate our demand for urgent safe passage for Indian nationals who are still in Kharkiv and cities in other conflict zones.
Similar action is also being undertaken by our Ambassadors in Russia and Ukraine.
— Randhir Jaiswal (@MEAIndia) March 1, 2022
একইসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করেছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাই। ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে পিতা শেখর গৌড়া জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ছেলের সাথে এদিন সকালে কথা বলেন এবং প্রতিদিনই দিনে দু থেকে তিনবার তিনি ফোন করতেন ছেলেকে।
নবীনের এক সহপাঠী শ্রীধরণ গোপালকৃষ্ণন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এদিন তিনি শেষবারের জন্য জীবিত অবস্থায় দেখেন তাঁর বন্ধু নবীনকে। শুধু তাই নয় তিনি জানান, নবীনের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তার অন্য ব্যাখ্যা রয়েছে তাঁর কাছে। তিনি জানান, ইউক্রেনের সময় অনুযায়ী সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ নবীন গুলি খেয়ে মারা যায়। নবীন একটি মুদির দোকানের লাইনে দাঁড়িয়েছিল যেখানে রাশিয়ান সেনা অকাতরে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। তিনি আরো জানান, তাদের নবীনের মরদেহ কোথায় আছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তাঁদের মধ্যে কেউই হাসপাতালে যেতে পারছেন না। সম্ভবত সেখানে রাখা হয়েছে নবীনের মৃতদেহ।
প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার ভারতীয় ছাত্র ইউক্রেনে আটকে রয়েছে। অধিকাংশ ছাত্ররাই নিজেদের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করছেন। কেউ আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যাংকের থেকে, কেউ মেট্রো স্টেশন বা বম্ব শেল্টার থেকে ছবি পোস্ট করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সেনার হাত থেকে বাঁচতে ওই সমস্ত জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার ভারতীয়কে বিভিন্ন বিমানে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।