HighlightNewsসম্পাদকীয়

“শিশুদের হাতে তলোয়ার নয় বই রাখুন”

 

মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন

ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করতে নেমেছে তারা উত্তেজনা সৃষ্টি ও মেরুকরণের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ঘৃণ্য খেলায় মেতেছে। শিশুদের মনেও সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ঢেলে দিতে তাদের বিবেকে একটুও বাধছে না। দেশজুড়ে এখন রামনবমী, দুর্গা বাহিনী ইত্যাদির নামে চলছে শিশুদের অস্ত্র মিছিল। যা সরলমতি শিশুদের মনকেও বিষিয়ে দিতে পারে।

সম্প্রতি কেরালার তিরুবনন্তপুরমের কাছে একটি অস্ত্র মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলকারীরা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মহিলা শাখা দুর্গা বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবক বলে জানা যায়। এই মিছিলে শিশুদের হাতে অস্ত্র দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি কেরালিয়ান গায়ক শিবরামকৃষ্ণ। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “এই শিশুদের হাতে তলোয়ার নয় বই রাখুন। তাদের ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তি সম্পর্কে শেখান। প্রতিশোধ এবং ঘৃণা নয়। তাদেরকে মানুষ হয়ে বাঁচতে শেখান।”

বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ছোট্ট একটি ফেসবুক পোস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত এই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে জনমনে ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। শুধু শিশুদের অস্ত্র মিছিল নয় দক্ষিণ কেরালার একটি সমাবেশে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের বিরূদ্ধে উসকানিমূলক স্লোগান দিতে দেখা গেছে। অস্ত্র বহনকারী শিশুদের মুখে “ভারত মাতা কি জয়” স্লোগান ও দিতে দেখা গেছে। অস্ত্র বহনকারী শিশুরা অপ্রাপ্তবয়স্ক।

প্রতিবেশী কর্নাটকে অনুরূপ অনুষ্ঠান নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বজরং দলের পক্ষ থেকে শিশু-কিশোরদের গুলি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অনেক সময় শিশু-কিশোরদেরকে ত্রিশূল দীক্ষা দেওয়া হয়।

এই সমস্ত প্রয়াস বন্ধ হওয়া উচিত। ঘৃণা বিদ্বেষ কখনো মানব জাতির জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। হিংসা, ঘৃণা-বিদ্বেষ শুধু মানুষের মধ্যে ভেদাভেদই বাড়ায়। এতে মানবতার কোন কল্যাণ নেই। বরং শিশুদেরকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলতে হলে তাদেরকে প্রেম প্রীতি ভালোবাসার শিক্ষা দিতে হবে। অস্ত্র নয় তাদের হাতে তুলে দিতে হবে আদর্শ শিক্ষার বই। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সমস্ত মানুষের প্রতি প্রীতি ও ভালবাসার শিক্ষায় তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। এটাই মানবতার দাবি। যারা শিশুমনে হিংসা ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে, যারা ইতিহাস বিকৃত করে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে তারা প্রকারান্তরে ক্ষতি করছে ওই শিশুদেরই যাদের সামনে আদর্শ মানুষ হওয়ার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে। তাদেরকে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে ভবিষ্যতকে কলুষিত করে দেওয়া হচ্ছে। তাই এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সকলের প্রতিবাদী হয়ে উঠা উচিত। শিবরামকৃষ্ণ ফেসবুকের মাধ্যমে যে প্রতিবাদ করেছেন ও যে উপদেশ দিয়েছেন তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। সেই সঙ্গে সঙ্গে একথা বলতে হয় যে প্রচার মাধ্যম এবং পুলিশ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। দেশজুড়ে হিংসা ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার পায়তারা চালানো হবে আর পুলিশ প্রশাসন নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকবে তা চলতে পারে না। দেশের স্বার্থে মানবতার স্বার্থে প্রশাসনকেও যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

Related Articles

Back to top button
error: