রাজ্য

রাখছেন রোজা, ৯০ বার রক্ত দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন শিক্ষক পিন্টু মন্ডল

রেবাউল মন্ডল, টিডিএন বাংলা, ডোমকল: একবার দুইবার তিনবার নয়। সাইত্রিশ বছরের জীবনে টানা ৯০ বার রক্ত দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন মুর্শিদাবাদের পিন্টু মন্ডল। ডোমকলের শ্রীপতিপুরের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক রক্ত দিয়ে মুমুর্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচাতেই ভালোবাসেন। কারও রক্তের প্রয়োজন হলেই একক প্রচেষ্টায় তিনি ছুটে বেড়ান এক জেলা থেকে অন্য জেলায়, এক রাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে। নিজের জেলা ছাড়াও কখনো তার দেখা মেলে আসানসোল, দুর্গাপুর কখনো ছোটেন কলকাতায় কখনো বা ঝাড়খন্ড।
এখন রমজান মাস। পিন্টু মন্ডল রোজা রাখছেন। রোজার পর ফের দেবেন রক্ত।

যখনই কেউ রক্তের জন্য বিপদে পড়েছেন খবর পেলেই তিনি ছুটে গেছেন হাসপাতালে। নিজের শিক্ষকতা পেশার বাইরেও রক্ত দেওয়া তাঁর নেশায় পরিণত হয়ে গেছে। পিন্টু মন্ডল বলছিলেন, যখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র তখন একবার আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে বাবা মা কে লুকিয়ে বহরমপুর মেডিকেল কলেজে গোপনে রক্ত দিয়েছিলাম। তারপর থেকেই প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর রক্ত দিয়ে আসছি। কই কোন দিন কোন সমস্যা হয়নি। আমি মনে করি রক্তদান জীবন দান। আর এই রক্ত দেওয়ার মাধ্যমেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। কেননা রক্তের মধ্যে কোন হিন্দু মুসলমান থাকেনা। মহামিলন ও ঐক্যের একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব রক্তদানের মাধ্যমেই।

এই সাইত্রিশ বছরের জীবনে অনেককেই তিনি রক্ত দিয়েছেন। কাকে কাকে দিয়েছেন কোথায় দিয়েছেন অত সব কিছু হয়তো তার মনে নেই। কিন্তু তিনি চাইছেন ১০০ বার রক্ত দেবেন। তার কথায়, কোন একজন ব্যক্তি যাতে রক্তের অভাবে না মরে সেটা দেখাই আমার লক্ষ্য। আমি চাই সারা রাজ্যের হাসপাতাল গুলিতে দালাল মুক্ত ব্লাড ব্যাংক তৈরি হোক। আর এইকাজে যুব সমাজ এগিয়ে আসুক। নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চাও করেন পিন্টু মন্ডল। নেই ধূমপানের নেশা।

আমাদের সমস্ত খবর আপনার মোবাইলে পেতে যোগ দিন হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপে
লিঙ্ক-
https://chat.whatsapp.com/BrSWcr9WSTpEz2WlCVkpBu

মানব কল্যানে রক্তদান নামে ডোমকলের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবেও কাজ করেন পিন্টু মন্ডল। কারও রক্তের দরকার পড়লেই সংস্থার মাধ্যমে ডোনার পাঠিয়েও মানুষের পাশে থাকেন তিনি।

রক্ত পেয়ে অশোক চন্দ্র নাগ জানালেন, ‘পিন্টু বাবুর রক্ত এখন আমার শরীরে। দুঃসময়ে উনি যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সেই উপকার কোনদিন ভুলব না।’ ডোমকলের স্বর্ণদ্বীপ শীল জানান, ‘বাবার কেমোর জন্য কোথাও রক্ত পাচ্ছিলাম না, তখন ওই পিন্টু দাদাই দেবদূত হয়ে বাবার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।’

কিন্তু এই মহান কাজ যিনি করেন। ১০০ বার রক্ত দেওয়া যার প্রতিজ্ঞা তার পাশে যদি সরকার দাঁড়াতো, পুরস্কারের ব্যবস্থা কেউ করত তাহলে পিন্টু বাবুদের মত অনেকেই প্রেরণা পেয়ে একাজে এগিয়ে যেতে পারতেন। যদিও পিন্টু মণ্ডলের দাবি, পুরষ্কারের জন্য আমি একাজ করিনা। বিপদে মানুষের আসে দাঁড়ানোই আমার লক্ষ্য। এতেই পুণ্য এতেই মুক্তি।

ষষ্ঠীতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০৬ সাল থেকে তিনি পার্শ্ব শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ মহম্মদ গুল হাসান বলছিলেন, এই মহান কাজের মাধ্যমে পিন্টু মন্ডল আমাদের স্কুলের সুনাম ছড়িয়েছেন। ওনার দ্বারা বহু মানুষ প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। ওনার বীরত্বে আমরা গর্বিত।

পিন্টু মন্ডলের কাছ থেকে ফিরেই ভাতসালার মোড়ের কাছে তার নাম করতেই স্থানীয় মেহবুব আলম বলছিলেন, সত্যি এক আশ্চর্য মানুষ। আমরা যেখানে জীবনে একবার রক্ত দিতে পারেনি। সেখানে তিনি ৯০ বার রক্ত দিয়েছেন। এইসব মানুষগুলি আছে বলেই অসুস্থ্য মানুষগুলি আজও রক্ত পাচ্ছেন। মানুষের জন্য কাজ করতে যে কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম দরকার পড়েনা পিন্টু মন্ডল নিজেই সেটা করে দেখিয়েছেন। আমরা রক্ত দিতে না পারলেও এই মহান মানুষটিকে স্যালুট।

Related Articles

Back to top button
error: