HighlightNewsদেশ

“ম্যাডাম বলতেন তোমরা স্নান করোনা, স্কুলে আসবে না”, অভিযোগ সরকারি স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় পড়তে আসা হিন্দু আদিবাসী শিশুদের

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ভোপালের বিদিশায়, একটি সরকারি স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর ৩৫ জন গোন্ড আদিবাসী হিন্দু শিশু। তাদের অভিযোগ, সরকারি স্কুলের ম্যাডাম তাদের বলতেন, তোমরা স্নান করোনা তাই স্কুলে আসবে না। এরপর ওই আদিবাসী শিশুরা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। এদের মধ্যে মাদ্রাসার রেজিস্টারে ৭ জনের নাম পাওয়া গেছে। এই মাদ্রাসার ভর্তি রেজিস্টারে আরও ২০ জন হিন্দু শিশুর নামও নথিভুক্ত করা হয়েছে। হিন্দি দৈনিক পত্রিকা “দৈনিক ভাস্কর”-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যদিও ওই পত্রিকার তরফে প্রশাসনকে এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। প্রশাসনের বক্তব্য সব শিশুই সরকারি স্কুলে পড়ে। কোনো হিন্দু আদিবাসী শিশু মাদ্রাসায় পড়ে না।
ঘটনাটি ঘটেছে, ভোপালের তোপুরার মরিয়ম মাদ্রাসায়। জানা গিয়েছে, এই মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করছে ওই ৩৫ আদিবাসী শিশু। হিন্দি দৈনিক পত্রিকা “দৈনিক ভাস্কর”-এ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মাদ্রাসায় মোট ৪৫ জন শিশু পড়াশোনা করে বলে দাবি করা হয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেক হিন্দু গোন্ড উপজাতির। এই মাদ্রাসা সরকারি ভর্তুকিপ্রাপ্ত। ২০০২ সাল থেকে একটি সরু গলির মধ্যে একটি ছোট কামরায় চলছে এই মাদ্রাসা। এই ঘরের উপরে আরেকটি ঘর আছে, যেখানে কিছু মানুষ বসবাস করেন। এই মাদ্রাসায় মোট তিনজন মুসলিম শিক্ষক ও একজন হিন্দু শিক্ষক রয়েছেন। যদিও, “দৈনিক ভাস্কর” দাবি করেছে, যেদিন তাঁরা ঘটনাস্থলে যান সেদিন তাঁরা শুধুমাত্র মাদ্রাসায় হিন্দু শিক্ষক সুরেশ কুমার আর্যকেই দেখতে পান।
মাদ্রাসার ওই শিক্ষক সুরেশ কুমার আর্য দৈনিক ভাস্কর্যে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মাদ্রাসায় ইতিমধ্যেই ৪৫ জন শিশুর নাম নিবন্ধিত রয়েছে। এই শিশুদের অর্ধেক হিন্দু এবং কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তিনি আরো জানান, তোপুরা ও যাত্রাপুরার সরকারি স্কুলের ৩৫ জন শিশুর মধ্যে যারা মাদ্রাসায় ভর্তির অভিযোগ করেছে, তাদের মধ্যে জুলাই মাসে রেজিস্টারে মাত্র ৭ শিশুর নাম লেখা হয়েছিল, কিন্তু ফি জমা না দেওয়া, সার্বিক পরিচয়পত্র নম্বর না তৈরি হওয়া এবং ম্যাপিং না হওয়ার কারণে তাদের স্থায়ীভাবে ভর্তি করা হয়নি। এই ৭ জন শিশুর মধ্যে মাত্র ৪ জন নিয়মিত পড়তে আসছে, আর ৩ জন মাঝে মাঝে আসে।
এদিকে, তোপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রেখা চিধর মাদ্রাসায় শিশুদের যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। এমনকি, তিনি বাচ্চাদের স্কুল থেকে বিতাড়িত করার বিষয়টিও মেনে নেননি।
যদিও, অভিযোগকারী মনোজ কৌশল জানিয়েছেন, এই শিশুরা ফয়েল তোলার কাজ করে। কাগজপত্রের অভাবে তাদের সরকারি স্কুলে পড়তে বাধা দেওয়া হয়, তাই তারা মাদ্রাসায় যেতে শুরু করেন। মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তাদের কি উদ্দ্যেশ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তা তদন্তের বিষয়।
এই বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র জানিয়েছেন, বিদিশায় ৩৫ জন শিশুর সরকারি স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার রিপোর্ট মিথ্যা। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিদিশার কোনো মাদ্রাসায় কোনো শিশু ভর্তি হয়নি বলে তদন্তে উঠে এসেছে। জাতীয় শিশু কমিশনের চেয়ারম্যান কানুনগো জিকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে, শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো বলছেন, প্রশাসনের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো তদন্তের রিপোর্ট আমরা পাইনি। মাদ্রাসা কোনও শিশুর পড়াশুনার উপযুক্ত স্থান নয়। হিন্দুরা শিশুদের জন্য তো মোটেই নয়। যেকোনো শিশুকে স্কুলে যাওয়া থেকে বঞ্চিত করা সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন।
এই বিষয়ে বিদিশার কালেক্টর উমাশঙ্কর ভার্গব বলেছেন, আমরা শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের কাছ থেকে ৩৩ জন শিশুর তালিকা পেয়েছি, যার মধ্যে ২২ জন শিশু তোপুরা স্কুলে নিবন্ধিত। মাদ্রাসায় কোনো শিশু ভর্তি হয়নি। এটা আলাদা বিষয় যে, ওই শিশুরা মাদ্রাসার কাছে থাকে তাই হয়তো সেখানে চলে গেছে। শিশুদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি তদন্তে পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Back to top button
error: