রাজ্য

সম্মান দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলিত সাহিত্য একাডেমির চেয়ারম্যান হয়েই বহুমুখী ভাবনা মনোরঞ্জন ব্যাপারীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, কলকাতা: বাংলার দলিতদের যথার্থ সম্মান দিয়ে একাধিক প্রকল্প নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।নম:শূদ্র উন্নয়ন পর্ষদ গঠন ছাড়াও আদিবাসী, মতুয়া, এসসি,এসটিদের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। এবার দলিত সাহিত্য একাডেমি গড়ে দিলেন। যার সভাপতি করা হয়েছে রাজ্যের ‘দলিত সাহিত্য সম্রাট’ মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে।
উদ্বাস্তু ঘরের একজন সন্তান যার জীবন ছিল ‘ছন্ন ছাড়া’,তাকে সুযোগ দেওয়া হল সাহিত্য সাধনার। রাঁধুনির কাজ করতে করতে মনোরঞ্জন ব্যাপারী একটু অন্য কাজ চেয়েছিলেন। মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে ইতিমধ্যেই লাইব্রেরিতে জায়গা দিয়েছেন। তারপর দলিত সাহিত্য একাডেমি করে তার চেয়ারম্যান করেছেন। এটা একটা বড় পাওয়া। দলিত সাহিত্য একাডেমি নিয়ে মনোরঞ্জন ব্যাপারী তাই একাধিক ভাবনা ভেবেছেন। জানালেন, আমি খুশি। এবার কাজটা করতে হবে।
মনোরঞ্জন ব্যাপারী ছাড়াও আরও বহু দলিত লেখক ও পন্ডিতদের নিয়ে কমিটি গড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে আগামীতে দলিতদের নতুন সাহিত্য আশা দেখাতে চান মনোরঞ্জন বাবু।
তিনি জানান,সবার পরামর্শ নিয়ে কাজ হবে। আপাতত কিছু ভাবনা এসেছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরী স্থাপনা । প্রথম কক্ষে বাংলা ভাষায় লিখিত-বা অন্য ভাষা থেকে বাংলায় অনূদিত সমস্ত দলিত সাহিত্য– যা দলিত মানুষের জীবন সংগ্রামের উপর, দলিত লেখক দ্বারা লিখিত- সমস্ত বইকে রাখা । যেন কোন পাঠককে কোন লেখকের লেখা বই খুঁজে পেতে বা বসে পাঠ করতে অসুবিধা না হয়, কক্ষে তেমন ব্যবস্থা করা ।
অপর কক্ষে – দলিত জীবনের উপর লিখিত অদলিত লেখকদের দ্বারা লিখিত সমস্ত গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ কবিতার বই সসম্মানে এই ধরনের সব পুস্তক লাইব্রেরীতে রাখা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
মনোরঞ্জন ব্যাপারী আরও বলেন, আমার ইচ্ছে আছে দলিত সাহিত্য আকাদেমির একটি নিজস্ব প্রকাশনা ব্যবস্থা করা। যেখান থেকে দলিত লেখকদের-কমিটি বিবেচিত গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ কবিতা পূস্তক প্রকাশন । পুর্ব প্রকাশিত দলিত সাহিত্যের পুনঃ প্রকাশ ও সংরক্ষন করা।
আকাদেমি দ্বারা পরিচালিত কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়ায় একটি দলিত পুস্তক বিপনন কেন্দ্র সঞ্চালন ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া দলিত সাহিত্য আকাদেমি দ্বারা নির্ধারিত স্থানে মাসে একবার সাহিত্য অনুষ্ঠান, সম্ভব হলে সমস্ত জেলা শহরে ভ্রম্যমান সাহিত্য বাসর করা যেখানে দলিত কবি লেখককে উৎসাহ প্রদান করা হবে। ওই অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া উল্লেখ যোগ্য রচনা সংগ্রহন ও প্রতি তিনমাসে একটি নিজস্ব পত্রিকা প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, দলিত সাহিত্য আকাদেমির পক্ষ থেকে দলিত লেখক, কবিদের উৎসাহিত করার জন্য সাহিত্য পুরস্কার প্রদান প্রচলন করার ইচ্ছে আছে।
এছাড়া দেশভাগের বলি- দুঃস্থ দলিত, শ্রমজীবী উদ্বাস্ত, যারা বাংলায় ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন, তাদের নিজের কথা নিজের কলমে লিখিয়ে আনা ও তাকে অবিকৃত প্রকাশিত করে সত্যচিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরার ভাবনা রয়েছে।
মনোরঞ্জন বাবু জানান,বাংলা দলিত সাহিত্যকে ইংরাজি সহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে ব্যাপক পাঠককে পাঠদানের সুযোগ করে দেওয়া।
এছাড়া দলিত বা অ-দলিত গবেষকদের দলিত জীবন সমাজ ইতিহাস বিষয়ক গবেষনা লব্ধ জ্ঞান বা পাণ্ডুলিপি যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষন করা হবে।
তিনি জানান,পশ্চিমবঙ্গের যেখানে যত দলিত লেখক কবি আছেন তাদের নাম ঠিকানা, পরিচিতি, প্রকাশিত পূস্তক তালিকা, পুস্তক বিষয়ক সংক্ষিপ্ত আলোচনা- সম্বলিত একটি পুস্তক প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে।
তবে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলিতদের জন্য যে পরিকল্পনা নিয়েছেন তা অনেকে বলছেন, ঐতিহাসিক।

Related Articles

Back to top button
error: