Highlightরাজ্য

সম্প্রীতির নিদর্শন থানারাপাড়ায়, পাড়ার একমাত্র হিন্দু প্রতিবেশীর দেহ সৎকারে এগিয়ে এলেন মুসলিমরা

রেবাউল মন্ডল,টিডিএন বাংলা, করিমপুর :  মানবিকতার এক অনন্য দৃশ্য দেখল নদিয়ার করিমপুর-২ ব্লকের থানারপাড়া। পাড়ার একমাত্র হিন্দু প্রতিবেশীর দেহ সৎকারে এগিয়ে এলেন মুসলিমরা। তাঁরাই দেহ নিয়ে যান শ্মশানে। সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য।

জানা গেছে, থানারপাড়ার পীরতলা পাড়ায় মুসলিমদের সঙ্গেই দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছেন একমাত্র হিন্দু রবি কর্মকারের পরিবার। মঙ্গলবার হঠাৎই ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান রবি কর্মকারের স্ত্রী সন্ধ্যা কর্মকার। স্ত্রীকে দাহ করার কাজে এখানে সেইভাবে কাউকে পাশে পাচ্ছিল না শোকস্তব্ধ রবি কর্মকার। ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী আরেজুল্লা সেখ, উকিল সেখ, আমিনুল সেখ, জায়দুল বিশ্বাসরা।

ধর্মপ্রাণ তাঁরা। তাই ভুলে যাননি মানবিকতা। তাই প্রতিবেশী হিন্দু পরিবারে মৃত্যুর খবর পেয়েই ছুটে গেলেন বাড়িতে। বাঁশ কাটা, খাটিয়া তৈরি থেকে শুরু করে ফুল মালায় সাজিয়ে তোলেন দেহ। সন্ধ্যায় নিয়ে যান বহরমপুর শ্মশান ঘাটে। শ্মশানেও কাঠ জোগাড় করা থেকে শুরু করে দাহ করার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্ত্রী-হারা রবি’দার পাশেই ছিলেন আরেজুল্লা, উকিল, আমিনুল, জায়দুল-রা।

প্রতিবেশী আরেজুল্লা সেখ বলেন, বিপদে পাশে না দাঁড়ালে, সে কীরকম প্রতিবেশী? রবি দার পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের ভাইবোনের বন্ধন। ওনার স্ত্রীর মৃত্যুতে আমরাই বাঁশ কেটে খাটিয়া বানিয়ে শ্মশানে গিয়ে দাহ করা অব্দি পাশে ছিলাম।’ আরেক প্রতিবেশী উকিল সেখ বলছেন, ‘হেসো-খুন্তি-দা বানাতে রবি দার কামার শালায় যেতেই হয় আমাদের। কাজের ফাঁকে খুব গল্প হাসি ঠাট্টাও হয়। সেই সূত্রে ওনার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। হিন্দু-মুসলিম ভাবনা কখনো আসেনা আমাদের মনে।’

রবি কর্মকার জানান, ‘এখানকার মুসলিমরাই আমার প্রতিবেশী। ভালোবাসার বন্ধন থেকেই পাড়ার সবাই আমার বিপদে ছুটে আসেন। স্ত্রীর শেষ কৃত্যেও ওনারা পাশে থেকেছেন।’

থানারপাড়া পীরতলাপাড়া জুম্মা মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার জামাতের লোকেরা সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত গড়লেন তাতে আমি গর্বিত। আর এটাই তো ইসলামের শিক্ষা।’

সম্প্রীতির এমন নিদর্শনের প্রশংসা করে থানারপাড়া থানার ওসি অভ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের থানারপাড়া থানা এলাকায় খুঁজলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির অনেক নিদর্শন পাওয়া যাবে।’

Related Articles

Back to top button
error: