টিডিএন বাংলা ডেস্ক: দুর্নীতির প্রতিবাদ করার শাস্তিস্বরূপ দুষ্কৃতীরা সাতটি গুলি চালিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের সরকারি দপ্তরে কর্মরত রিঙ্কু সিংয়ের উপরে। হারিয়েছিলেন একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি। শোনার ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল। এই সমস্ত প্রতিকূলতা দমিয়ে দিতে পারেনি রিঙ্কুকে। বসেছিলেন ইউপিএসসি পরীক্ষায়। সোমবার এবছরের ইউপিএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। আর সেই পরীক্ষাতে ৬৩৮ র্যাংক করে পাস করেছেন রিঙ্কু সিং রাহি।
২০০৪ সালে উত্তরপ্রদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করে কাজে যোগ দেন রিঙ্কু। সমাজ কল্যাণ দপ্তরে পোস্টিং হয়েছিল তাঁর। চাকরিতে যোগ দেওয়ার চার বছর পরে উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে পড়ুয়াদের স্কলারশিপ দেওয়া নিয়ে ৮৩ কোটি টাকার দুর্নীতির পর্দাফাঁস করেছিলেন তিনি। অভিযুক্তদের মধ্যে চার জনের জেল হয়। কিন্তু এই কাজ করার ফলে দুষ্কৃতীদের রোষের শিকার হন তিনি। তাঁর শরীরে মোট সাতটি গুলি করেছিল দুষ্কৃতীরা। মুখে গুলি লাগার ফলে মুখের আকৃতি খারাপ হয়ে যায়। চলে যায় একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি।
চাকরির পাশাপাশি একটি কোচিং সেন্টারে আইএএস হতে চাওয়া পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণও দেন রিঙ্কু। মূলত সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের জোরাজুরিতেই ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন তিনি। এই বছরই শেষ বারের মতো ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। চাকরির মধ্যে সময় বের করে পড়াশোনা করা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু তাও যথা সম্ভব চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন রিঙ্কু। তার ফলও পেলেন হাতেনাতে।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর উচ্ছ্বসিত রিঙ্কু জানিয়েছেন, “গুলি লেগে আমার এক চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল। তাও আমার ছাত্ররা বারবার আমাকে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসতে অনুরোধ করত। ওদের কথা ফেলতে পারিনি। তাই প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিলাম।” বহুদিন ধরেই সিভিল সার্ভেন্ট হিসাবে কাজ করা রিঙ্কু আরো জানান,“আমার কাছে জনতার স্বার্থই সব। যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং জনস্বার্থের মধ্যে একটা বেছে নিতে হয়, আমি জনস্বার্থকেই বেছে নেব।” একবার সততার পরীক্ষায় পাশ করে গুলিবিদ্ধ হয়েও ভীত নন রিঙ্কু। আট বছর বয়সি এক পুত্র সন্তানের বাবা রিঙ্কু আরো বলেন,“আমি তৈরি। প্রথমবার গুলি খেলেও পরের সমস্ত হামলার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আমি।”